রবিবার, ০৬ জুলাই, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


পারভেজ খান

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০২:৩৫ এএম

দেশের অপরাধীরা তাহলে অদৃশ্য মানব!

পারভেজ খান

প্রকাশিত: জুলাই ৬, ২০২৫, ০২:৩৫ এএম

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

এরিখ আন্তন পল ভন ডানিকেন। একজন সুইস লেখক। যিনি বেশ কয়েকটি ছদ্ম-বৈজ্ঞানিক বই লিখেছেন; যা প্রাথমিক মানব সংস্কৃতির ওপর বহির্জাগতিক প্রভাব সম্পর্কে দাবি করে। এর মধ্যে ১৯৬৮ সালে প্রকাশিত সর্বাধিক বিক্রিত ঈযধৎরড়ঃং ড়ভ ঃযব এড়ফং?। এই বই থেকে শুরু করে বেশ কয়েকটি প্রকাশিত বইয়ের ওপর ডানিকেনের দাবি ছিল, বহির্জাগতিক প্রাণী বা ‘প্রাচীন মহাকাশচারীরা’ পৃথিবী ভ্রমণ করেছিলেন এবং প্রাথমিক মানব সংস্কৃতিকে প্রভাবিত করেছিলেন।

যদিও তার বইগুলোতে উত্থাপিত সব ধারণা প্রায় সব বিজ্ঞানী এবং শিক্ষাবিদদের দ্বারা প্রত্যাখ্যান হয়েছে। তবু গবেষণা থেমে নেই। এলিয়েনে বিশ্বাসীরা মনে করেন, বহির্জাগতিক প্রাণ, অপার্থিব প্রাণ বা ভিনগ্রহী প্রাণ বলতে সেই জীবদের বোঝানো হয়, যাদের উদ্ভব এই পৃথিবীতে হয়নি বরং পৃথিবীর বাইরে মহাবিশ্বের অন্য কোথাও হয়েছে। এদেরকেই ইংরেজি ভাষায় সংক্ষেপে এলিয়েন (অষরবহ) বলে। এই কাল্পনিক বা অদৃশ্য চরিত্র এলিয়েন নিয়ে অনেক নাটক-সিনেমা হয়েছে।

ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের এই ধারণাটি নতুন নয়। অনেকেই দাবি করেন- ভিনগ্রহের প্রাণীরা পৃথিবীতে প্রায় নিয়মিত যাওয়া-আসা করে এবং তাদের দেখাও পাওয়া গেছে। ভিনগ্রহের প্রাণীর অস্তিত্বের প্রমাণ জোগাড় করতে গবেষকরা ঐতিহাসিক উৎসে ভিনগ্রহের এসব প্রাণীর সন্ধান এখনো করছেন।

ভিনগ্রহের এই প্রাণীর সন্ধানে পৃথিবীতে এবং পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে (প্রথম পৃষ্ঠার পর) পরিচালিত হচ্ছে বিভিন্ন অভিযান। আরেক লেখক এইচ জি ওয়েলসের অদৃশ্য মানব। তার লেখা অন্যতম সেরা একটি বই বললেও অত্যুক্তি হবে না। বইটির কাহিনি শুরু হয়েছে কোনো এক হোটেলে আসা অদ্ভুত এক আগন্তককে নিয়ে। সবার মধ্যে চুপিসারে গুঞ্জন চলে, কে এই লোক? কেউ তার পরিচয় কিংবা কি তার কাজ, সেটা খুঁজে পায় না। অবশেষে আস্তে আস্তে ফাঁস হতে থাকে তার তথ্য।

লোকজন জানতে পারে, সে একজন অদৃশ্য মানুষ। সত্যিই, এই কারণেই সে এতদিন নিজের অবস্থা গোপন করার জন্য সারা শরীর ব্যান্ডেজ করে রাখত, এমনকি নাকও ঢেকে রাখত। সানগ্লাস পরত রাতের বেলাতেও। কি বীভৎস। মুখের মাস্কটা খুলে ফেলার পর সবাই দেখল মাথাবিহীন একটা দেহ। আর তারপর যখন সে তার সব কাপড় খুলে ফেলতে লাগল, তখন ধীরে ধীরে পুরো শরীর অদৃশ্য হয়ে যেতে লাগল। আসলে তার শরীরের ভেতর দিয়ে ওপাশের সব দেখা যাচ্ছিল। এর সুযোগ নিয়ে সে টাকা চুরি করে ধনী হতে চেয়েছিল এবং তা শুরুও করে দিয়েছিল। শহরের মানুষ ওর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল।

এই এলিয়েন বা অদৃশ্য প্রাণীদের খুঁজে বের করতে পৃথিবীতে যেসব বিজ্ঞানীরা অক্লান্ত প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আমি মনে করি তাদের এখন বাংলাদেশে আসা উচিত। এখানে তারা পেলেও পেয়ে যেতে পারেন, তারা যেটা খুঁজছেন সেই এলিয়েন প্রজাতি আর অদৃশ্য মানব।

এবার আমি আরেকটু খোলাসা করে বলছি। কেন তাদের (গবেষক-বৈজ্ঞানিকদের) বাংলাদেশে আসতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ, জুলুমবাজ, গণতন্ত্র হত্যাকারী, খুনি, দখলবাজ যে নামেই ডাকি না কেন, বিগত শেখ হাসিনা সরকার বা আওয়ামী লীগ সরকার অস্ত যাওয়ার পর বিপ্লবের ফসল হিসেবে নতুন যে একটা দেশের জন্ম হয়েছে, সেই দেশ তো এখন এলিয়েন আর অদৃশ্য মানবে পূর্ণ। দেশে বেড়ে গেছে নানা ধরনের অপরাধ। মব সন্ত্রাসে আক্রান্ত হচ্ছে জাতি। এখানে-ওখানে প্রতিদিন নাজেহাল হচ্ছে সাধারণ মানুষ। রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা কেউ বলছে মব জাস্টিস বা মব সন্ত্রাস অপরাধ। আবার আরেক দলের নেতারা বলছেন, এটা মব সন্ত্রাস নয়। এটা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ। ফুটপাত থেকে শুরু করে রাজধানীর প্রতিটি অলিগলিতে চলছে অবাধে চাঁদাবাজি। পরিবহনের স্ট্যান্ডগুলো গত ৫ আগস্টের পর রাতারাতি বেদখল হয়ে গেছে।

ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণ, আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া এখন নিত্যদিনের ঘটনা। অপরাধ করলে পুলিশ যে কাউকে ধরবে, সেটাও পারবে না। থানায় হামলা চালিয়ে আটককৃতদের ছিনিয়ে নেওয়া হচ্ছে। কোনো এক থানায় হামলা চালিয়ে পুলিশকে অবরুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। খবর পেয়ে অন্য থানার পুলিশ তাদের উদ্ধার করতে যাবে? না, সেটাও করতে দেওয়া হবে না। তাদেরও আটকে রাখা হচ্ছে। 

এখন সঙ্গত কারণেই প্রশ্ন আসে যে, এগুলো কারা করছে? এরা কি সাধারণ মানুষ, নাকি কোনো রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী। হলে সেটা কোন দলের? বিএনপি বলছে, এই সন্ত্রাসীরা তাদের নয়, জামায়াত বলছে তাদেরও না। এনসিপি বলছে, তারা এসব সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে। ফলে তাদের লোক হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

থানা হামলার ঘটনায় স্বয়ং ওই থানার ওসি বলছেন, হামলাকারীরা একটি রাজনৈতিক দলের কর্মী। অপরদিকে অভিযুক্ত দলের নেতারা বলছেন, ওসি তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে ডাহা মিথ্যে বলছেন। এখন প্রশ্ন উঠছে, যারা এ দেশের মাঠে রাজনীতি করছেন, দল চালাচ্ছেন তারা এই অপরাধীদের চিনেন না, জানেন না। একের পর এক অপরাধ করেও তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকছেন। চালিয়ে যাচ্ছেন তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড। তাহলে এই অচেনা মানুষগুলো কারা? এরা কি সেই এলিয়েন বা অদৃশ্য মানব প্রজাতির।  

মাঠে র‌্যাব আছে। আছে পুলিশ। আছে সেনাবাহিনীও। তারা বলছে আইনকে নিজের হাতে তুলে না নেওয়ার জন্য। তারা বলছে, সন্ত্রাস বন্ধ করতে। মন্ত্রণালয় থেকেও কঠিন কঠিন সতর্কবার্তা দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে কার্যকর হচ্ছে কোনটা? তাদের কথায় কেউ কি কর্ণপাত করছে? আকাশ থেকে যখন শীলা বা পাথর পরে তখন মাটিতে পৌঁছবার আগেই সেটা বৃষ্টিতে রূপ নেয়। কিছু হাওয়া হয়ে মিলিয়ে যায়। আমার কাছে মনে হচ্ছে প্রশাসনের এই কঠোর কথাগুলোই যেন অপরাধীদের কাছে শীতল পানীয় হয়ে পৌঁছছে। বাকিটা হাওয়ায় মিশে যাচ্ছে। আর এর ফলে অপরাধীরা থেকে যাচ্ছে অধরা। 

বলছিলাম এলিয়েন বা অদৃশ্য মানবের কথা। কোনো অপরাধীকেই কেউ শনাক্ত করতে পারছে না। বিশেষ করে মুখে বললেও পোক্ত বা জোরালোভাবে তাদের  আইনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। কাকে ধরে বা কাকে চিহ্নিত করে শেষ পর্যন্ত কার অসন্তুষ্টিতে পড়বে প্রশাসন? আবার অনেকের ভাবখানা এমন, যেন ‘ভাসুরের নাম মুখে আনতে নেই’। তাই আমি মনে করি, এই অদৃশ্য শক্তিকে শনাক্ত করতে এখন ওইসব বৈজ্ঞানিকদেরই এই দেশে আসা উচিত। তাদের মাধ্যমে শনাক্ত হোক, যারা লাগামহীনভাবে এ ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ড চালাতে পারে, তারা এলিয়েন বা অদৃশ্য মানব না হোক, অন্তত কোনো সভ্য মানুষ প্রজাতি নয়।

লেখক: ব্যবস্থাপনা সম্পাদক, দৈনিক রূপালী বাংলাদেশ।

Shera Lather
Link copied!