একসময় বাংলাদেশ জাতীয় টি-টোয়েন্টি দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নুরুল হাসান সোহান। তাকে ঘিরে অনেক নতুন স্বপ্ন দেখছিলেন ক্রিকেটপ্রেমীরা। কিন্তু কদিন পর দল থেকে ছিটকে যান। ২০২২ সালের নভেম্বরের পর আর টি-টোয়েন্টি দলে ফেরা হয়নি তার। টেস্ট কিংবা ওয়ানডে দলেও এখন তার জায়গা হচ্ছে না। নিয়মিত ঘরোয়া ক্রিকেট, ‘এ’ দল ও আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে পারফরম্যান্সের তুঙ্গে থাকলেও তাকে জাতীয় দলের জন্য বিবেচনা করছেন না নির্বাচকেরা। উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান হওয়ায় দলে জায়গা করে নেওয়াটা সোহানের জন্য কঠিন হয়ে গেছে।
কেননা, জাতীয় দলের নিয়মিত মুখ লিটন দাস ও জাকের আলী অনিক দুজনই উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান। এক দলে তিন উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান খেলানোটা বিলাসিতার ব্যাপারই বটে। তাই সিরিজের পর সিরিজ জাতীয় দলে উপেক্ষিত থাকছেন সোহান। সামনে এশিয়া কাপ। এশিয়া কাপের জন্য প্রাথমিক দলে সোহানকে নেওয়া হলেও মূল দলে জায়গা পাবেন কি না, তা নিয়ে যথেষ্ট শঙ্কা রয়েছে। তার নেতৃত্বে অস্ট্রেলিয়ায় টপ অ্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। টুর্নামেন্ট খেলতে যাওয়ার আগে গতকাল মিরপুরে নিজের ক্যারিয়ারের বিষয়েও কথা বলেছেন তিনি। সোহানের সংবাদ সম্মেলনের গুরুত্বপূর্ণ অংশটুকু তুলে দেওয়া হলো
*দেশে-বিদেশে খেলার সুযোগ বাড়ছে। উন্নতির গ্রাফটা নিশ্চয় ওপরের দিকে যাবে?
সোহান: গত ন্যাশনাল লিগ টি-টোয়েন্টি দিয়ে শুরু হয়েছিল। ভালো টুর্নামেন্ট হয়েছিল। এর আগে কিন্তু আমাদের বিপিএল ছাড়া ওই টুর্নামেন্ট ছিল না। এখন অনেক বেশি টি-টোয়েন্টি খেলা হচ্ছে। এমনকি ফ্র্যাঞ্চাইজিও দুই-তিনটা বাইরে খেলার অপশন আসছে। এদিক থেকে আমার মনে হয় যে, অভিজ্ঞতা ও লার্নিং প্রসেসের মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি।
*বাংলাদেশে পেস অলরাউন্ডার খুব একটা দেখা যায় না। ভারতের যেমন হার্দিক পান্ডিয়া আছেন। আমাদের তোফায়েল অনেক দিন ধরে একটা সিস্টেমের মধ্যে আছেন। এখন ‘এ’ দলে ডাক পেয়েছেন। ব্যাটিং ও বোলিংÑ দুই বিভাগেই ভালো খেলেন। তার সম্ভাবনা কেমন দেখেন?
সোহান: যখন একটা টিমে অলরাউন্ডার থাকবে, তখন টিম গঠন করা খুবই সহজ হয়ে যায়। আমাদের পেস বোলিং অলরাউন্ডার জাতীয় দলের জন্য সাইফউদ্দিন আছেন। হয়তো দুই-একজন আরও আছি আমরা। এই জায়গাটায় অবশ্যই গ্যাপ আছে। সেই দিক থেকে ওর জন্য একটা ভালো সুযোগ ভালো করার।
*লম্বা সময় ধরে জাতীয় দল থেকে বাইরে রয়েছে। ‘এ’ দলের এই সিরিজটা আপনার জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, যেহেতু সামনে এশিয়া কাপও আছে?
সোহান: আমার জন্য প্রতিটি সিরিজই গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিটি ম্যাচই গুরুত্বপূর্ণ। সেটি প্রস্তুতি ম্যাচ হোক কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেট ম্যাচ হোক।
*আপনি অনেক ভালো পারফরম্যান্স করছেন। কিন্তু জাতীয় দলে এখনো ডাক পাচ্ছেন না। আর কতটা ভালো করলে আসলে আপনি জাতীয় দলে জায়গা করে নিতে পারবেন?
সোহান: এটা আসলে আমার হাতে নেই। এটা নিয়ে মন্তব্য করাটাও ঠিক হবে না। আমার কাছে সবচেয়ে বেশি যে জিনিসটা গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়Ñ যেখানে খেলছি, সেখানে ভালো করার চেষ্টা করছি। নিজের জায়গা থেকে আরও উন্নতি করার চেষ্টা করছি। অবশ্য বাংলাদেশ টিমের হয়ে খেলাটা একটা বড় গর্বের বিষয়। এখানে খেলার জন্য ছোট থেকেই স্বপ্ন দেখি, এখনো স্বপ্ন দেখছি। অবশ্যই যদি সুযোগ পাই, নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
*নির্বাচকেরা ঘরোয়া ক্রিকেটে বেশি নজর দিচ্ছেন। আপনি কতটা আত্মবিশ^াসী যে, এখান থেকে পারফরম্যান্স করে জাতীয় দলে ডাক পাবেন?
সোহান: আসলে আমি ওভাবে চিন্তা করি না। আমি মনে হয় সামনে যে খেলা থাকে, সেখানে ফোকাস দিতে চাই। যেহেতু অস্ট্রেলিয়ায় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টটি খেলতে যাচ্ছি, আমার পুরো মনোযোগ এখানেই। আমার কাজ হচ্ছে, মাঠে পারফরম্যান্স করা বা খেলা। অবশ্যই নিজের জায়গা থেকে শতভাগ দেওয়ার চেষ্টা করি। কোনো সময় হয়, কোনো সময় হয় না। আমার মনে হয়, এটা তাদের চিন্তার বিষয়।
*‘এ’ দল ও এশিয়া কাপের প্রাথমিক দলে আছেন। নির্বাচকেরা কোনো বার্তা দিয়েছে কি না?
সোহান: না, আসলে আমার সঙ্গে ওই রকম যোগাযোগ এখনো হয়নি। আমার এখন মূল ফোকাস যে টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, সেটি ঘিরেই।
*টপ অ্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজ কতটা চ্যালেঞ্জের?
সোহান: এ বছর অনেকগুলো ভালো টিম আছে। পাকিস্তান টিম আছে। নেপাল মনে হয় ন্যাশনাল টিম আছে। ওখানকার যে টিমগুলো আছে, আমরা যাওয়ার পর হয়তো তাদের সম্পর্কে জানার সুযোগ পাব। আমার মনে হয়, সবগুলো টিমই ভালো টিম। প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ একটি টুর্নামেন্ট হবে। এই কন্ডিশনে আমাদের জন্য একটা সুযোগ ভালো করার।
*শ্রীলঙ্কা সিরিজে খেলতে পারেননি। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টির খেলা ছিল। তখন থেকে এ পর্যন্ত নির্বাচকদের সঙ্গে কথা হয়েছে কি না আপনার কাছ থেকে আসলে কী চাইছেন তারা?
সোহান: শুরুতেই আমি একটা কথা ক্লিয়ার করতে চাই, আমার প্রথম প্রায়রিটি গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি ছিল না। গ্লোবাল টি-টোয়েন্টির জন্য আমি ন্যাশনাল টিমে ছিলাম না এই রকম কিছু ছিল না। আমি চট্টগ্রামে ক্যাম্পে ছিলাম। যখন শ্রীলঙ্কা সিরিজ থেকে বাদ পড়েছি, তখন আমি ফাঁকা ছিলাম। বাসায় পড়ে থাকার চেয়ে গ্লোবাল খেলা ভালো। সে জন্যই তখন এটা নিয়ে চিন্তা করেছি। আমি অনেক সময় শুনেছি এই রকম কথা, এই রকম কোনো কথা নির্বাচকদের সঙ্গে হয়নি আমার, টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গেও না, না রংপুর টিম ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে আমার এটা নিয়ে কথা হয়েছে। তাই দুটি ভিন্ন বিষয়। ন্যাশনাল টিমে খেলাটাই প্রথম প্রায়োরিটির। প্রত্যেক খেলোয়াড়েরই।
*টপ অ্যান্ড টি-টোয়েন্টি সিরিজে এবার শিরোপা জয়ের বাড়তি তাড়না আছে কি না?
সোহান: আমরা একটা ভালো টুর্নামেন্টে যাচ্ছি। এবার খুবই ভালো ভালো টিম আছে। আমাদের জন্য ভালো একটি সুযোগ। অবশ্যই চাইব, যাতে আমরা ফাইনাল খেলতে পারি।
*জাতীয় দলে কী আপনি পর্যাপ্ত সুযোগ পেয়েছেন বলে মনে করেন?
সোহান: দেখেন, এখানে রিজিকের মালিক আল্লাহ। আল্লাহ যতটুকু লিখে রাখছেন, সেটাই হবে। অনেক কিছু ম্যান টু ম্যান ভেরি করে। আমার এটা নিয়ে কথা বলাও ঠিক না। যখনই সুযোগ পাই, নিজের সেরাটা দেওয়া চেষ্টা করি এবং উন্নতি করার চেষ্টা করি।
*আসন্ন সিরিজে শিক্ষণীয় কিছু থাকবে কি না?
সোহান: আমার কাছে মনে হয় যে, লার্নিং প্রসেসের এই জিনিসটা আমি খুব একটা বিশ^াস করি না। কারণ আমরা শিখতেই আছি। শিখবÑ এটা জীবনের অংশ। তবে আমার কাছে মনে হয়, মূল লক্ষ্য হওয়া উচিত যেহেতু আমরা একটা টুর্নামেন্ট খেলতে যাচ্ছি, ফাইনাল খেলব, আমার কাছে মনে হয়, প্রত্যেক খেলোয়াড় এবং যারা আমাদের সঙ্গে টিম ম্যানেজমেন্টে আছে, সবার লক্ষ্য ট্রফির দিকে।
*নিজেকে নিয়ে কী কী কাজ করা হচ্ছে?
সোহান: চেষ্টা করি, নিজের জায়গা থেকে। কোনো সময় ভালো হয়, কোনো সময় খারাপ হয়। এটা জীবনের অংশ। যে সময়টা ভালো যাচ্ছে, সেটা যেন ক্যারি করতে পারি। সব সময় চাই, নিজেকে উন্নতি করার। এখন আধুনিক ক্রিকেটে খেলতে খেলে নিজেকে প্রতিনিয়ত উন্নতি করতে হবে।
*জাতীয় দলে দুজন উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান আছেন (লিটন ও জাকের)। আপনি বলতে গেলে তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করছেন। এ ছাড়া আর কী কারণে জাতীয় দলে আপনার সুযোগ হচ্ছে না বলে মনে করেন?
সোহান: আমি কারোর সঙ্গে এভাবে প্রতিযোগী হিসেবে দেখি না। আমার মতে, যে ভালো ডিজার্ভ করে, সে-ই যাবে। আমি মনে করি, আমার প্রতিযোগিতা আমার নিজের সঙ্গে। আমি নিজের জায়গা থেকে উন্নতি করার চেষ্টা করি। যদি সুযোগ আসে, নিজের জায়গা থেকে সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করব।
আপনার মতামত লিখুন :