ঢাকা শনিবার, ০৪ অক্টোবর, ২০২৫

খুলে গেছে স্বপ্নের দোর

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: অক্টোবর ৪, ২০২৫, ১২:৫৯ এএম

‘একদিন স্বপ্নের দিন, বেদনার বর্ণবিহীন, এ জীবনে যেন আসে এমনই স্বপ্নের দিন।’ জীবনমুখী ধারার অগ্রগণ্য শিল্পী নচিকেতা চক্রবর্তীর মতো এমন প্রত্যাশা কার নেই? হয়তো বা স্বপ্নটা ভিন্ন হতে পারে, কিন্তু আপনার, আমার কিংবা প্রত্যেকের মধ্যেই এমন স্বপ্ন বিদ্যমান। তেমনই যাদের স্বপ্ন প্রকৃতিকে ঘিরে, তাদের জন্য এবার খুলে গিয়েছে স্বপ্নের দোর। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় জেলা বান্দরবানে অবস্থিত দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ কেওক্রাডং। পর্যটকদের জন্য এটি এক স্বর্গরাজ্য। প্রায় ৯৮৬ মিটার (৩,২৩৫ ফুট) উচ্চতার এ পর্বতকে এক সময় পার্বত্য চট্টগ্রাম এবং পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ হিসেবে গণ্য করা হতো। পরবর্তীতে পার্বত্য চট্টগ্রামের শান্তি চুক্তির পরে পরিচালিত জরিপে কেওক্রাডংয়ের স্থলে তাজিংডংকে সরকারিভাবে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতের স্বীকৃতি দেওয়া হয়। তবে সৌন্দর্যের দিক থেকে এ পর্বত এখনো রাজত্ব করছে সর্বোচ্চ উচ্চতায়। সবুজে মোড়া এই পর্বতের চূড়ায় দাঁড়ালে মানুষের ক্লান্ত দেহে পৌঁছে যায় শীতল বাতাস, আর চোখের পাতায় নেমে আসে শান্ত আলিঙ্গন।

প্রকৃতির নৈসর্গিক স্পর্শ এখানে মানুষের মনের ক্লেদ ও মন খারাপকে মুহূর্তেই ভেঙে দিয়ে এনে দিতে পারে সফেদ হিমের মতো শুদ্ধতা। কখনো কখনো এ পর্বত মেঘের কোলাহল, হালকা বৃষ্টি ও ঝটিকা হাওয়ার সঙ্গে মিলেমিশে হয়ে ওঠে সৌন্দর্যের অভূতপূর্ব লীলাভূমি। এখান থেকেই  দেখা যায় যোগী হাফং, জোতলাং, দুমলংসহ আরও অনেক পরিচিত পাহাড়। প্রতিটি পাহাড়ের নিজস্ব চরিত্র ও সৌন্দর্য পর্যটককে মুগ্ধ করে। এ ছাড়াও কেওক্রাডং যাওয়ার পথে দেখা মিলে চিংড়ি ঝর্ণা সহ ছোট বড় বেশ কিছু ঝর্ণা এবং বগালেক পাড়া, দার্জিলিং পাড়ার মতো সুন্দর সব পাহাড়ি পাড়ার। তাই সারাবছরই পর্যটকরা এখানে ভ্রমণের জন্য উদগ্রীব থাকে। যদিও নিরাপত্তাজনিত কারণে প্রায় আড়াই বছর এই পর্যটন কেন্দ্রটি বন্ধ ছিল, তবে এখন আর কোনো বাঁধা নেই। পর্যটকরা চাইলে আবারও এই মনোরম গন্তব্যে ভ্রমণ করতে পারবেন, উদযাপন করতে পারবেন একটি স্বপ্নের দিন।

যাওয়ার উপায়

দেশের যেকোনো জায়গা থেকে কেওক্রাডং যাওয়ার জন্য প্রথমে বান্দরবান আসতে হবে। ঢাকার বিভিন্ন জায়গা থেকে নামি-নামি বেসরকারি এসি-নন এসি বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এসি-নন এসি ভেদে ভাড়া পড়বে ৮৫০-১,৮০০ টাকা পর্যন্ত। সময় লাগতে পারে আনুমানিক ৮-১০ ঘণ্টা। ট্রেনে যেতে চাইলে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী যে কোনো ট্রেন ধরে প্রথমে চট্টগ্রাম যেতে হবে। শ্রেণিভেদে ২৮৫ টাকা থেকে ১,১৭৯ টাকা ভাড়া লাগতে পারে। এ ছাড়াও ঢাকা থেকে আকাশ পথে সরাসরি চট্টগ্রাম আসতে পারবেন। চট্টগ্রামের বদ্দারহাট থেকে পূবালী ও পূর্বাণী নামের দুটি বাস বান্দরবানের উদ্দেশ্যে যাত্রা করে। এ দুটি বাসে জনপ্রতি ২২০ টাকা ভাড়ায় চট্টগ্রামের বামপাড়া বাসস্ট্যান্ডে আসতে পারবেন, সেখান থেকে ২০০-৩০০ টাকা ভাড়ায় বাসে করে বান্দরবান যাওয়া যায়।

বান্দরবান থেকে কেওক্রাডং

বান্দরবান থেকে কেওক্রাডং যেতে লোকাল বাসে অথবা চান্দের গাড়িতে করে রুমা বাজার যেতে হবে। সেখান থেকে অনুমতি নিয়ে প্রথম দিন বগালেকে কাটিয়ে, পরদিন ভোরে উঠেই কেওক্রাডংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া যাবে।

থাকা ও খাওয়ার ব্যবস্থা

কেওক্রাডংয়ে রাত কাটাতে চাইলে পাহাড়ের চূড়ায় আদিবাসী কটেজ আছে। জন প্রতি থাকা খরচ ২০০-৩০০ টাকা। খাবারের ক্ষেত্রে মুরগি দিয়ে ২০০ টাকা খরচ পড়বে। গাইডের মাধ্যমে আগে থেকেই কথা বলে রাখতে হয় অথবা পৌঁছে কথা বলা যাবে। এ ছাড়াও বগালেকে থাকা যায় সবার পরিচিত সিয়াম দিদির কটেজ বা ঘরে।

বিশেষ শর্ত

দীর্ঘদিন পাহাড়ে সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানের কারণে জেলায় আগত পর্যটকদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনা করে রোয়াংছড়ি, রুমা, থানছি উপজেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোর ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ ছিল প্রশাসনের। তাই কেওক্রাডং পর্যটনকেন্দ্র দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হলেও এখানে ভ্রমণ করতে মানতে হবে ছয়টি শর্ত:

১. যেসব পর্যটনকেন্দ্র উন্মুক্ত করা হয়েছে, সেসব পর্যটনকেন্দ্র ছাড়া উপজেলার অন্য জায়গায় পর্যটকদের গমনাগমন নিষেধ।

২. জেলা বা উপজেলা প্রশাসনের নিবন্ধিত ট্যুর গাইড ছাড়া ভ্রমণ করা যাবে না।

৩. পর্যটনকেন্দ্র সংশ্লিষ্ট চেকপোস্ট বা পর্যটন তথ্য সেবাকেন্দ্রে চাওয়া তথ্য অবশ্যই সরবরাহ করতে হবে।

৪. পর্যটকেরা উপর্যুক্ত নির্দেশনাসমূহ অমান্য করলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বা নিকটবর্তী আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে অবগত করতে হবে।

৫. পাহাড়ি রাস্তায় চলাচলের অনুপযোগী ও ফিটনেসবিহীন সব যানবাহন উল্লিখিত পর্যটনকেন্দ্রসমূহে চলাচল নিষিদ্ধ থাকবে এবং পর্যটকবাহী সব যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রণে উপজেলা প্রশাসন বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবে।

৬. অযাচিত যে কোনো ঘটনা ঘটলে সংশ্লিষ্ট পর্যটন সংস্থার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে এবং পর্যটন শিল্পের ওপর পুনরায় নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে।

টিপস:

  • ট্রেকিংয়ের জন্য ভালো গ্রিপের জুতা ব্যবহার করুন।
  • ব্যাগপ্যাকের ওজন কম রাখার চেষ্টা করুন।

কেওক্রাডংয়ে বিদ্যুৎ নেই; সোলার পাওয়ার সিস্টেম থাকলেও মোবাইল চার্জের জন্য সঙ্গে করে পাওয়ার ব্যাংক নিন। ট্রেকিংয়ের সময় পর্যাপ্ত পানি রাখুন। পানি শেষ হলে কোনো ঝিরি থেকে বোতল ভরে নিন।