কিশোরগঞ্জে কোনো মতেই থামানো যাচ্ছে না জমির উপরিভাগ ‘টপ সয়েল’ বিক্রি। পরিবেশ আইন অমান্য করে ফসলি জমি থেকে মাটি কেটে নিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালীরা। আবার মাটি ব্যবসায়ীরা কম দামে জমির উর্বর এই মাটি কিনে বিক্রি করছে বেশি দামে। ফলে কৃষি জমির উর্বরতা হারানোর পাশাপাশি হুমকির মুখে পড়ছে পরিবেশের ভারসাম্য। ভেঙ্গে যাচ্ছে এলাকার রাস্তা-ঘাট।
অভিযোগ রয়েছে, একদল অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের নানা প্রলোভন দেখিয়ে এসব মাটি কিনে পাচার করছে ইটভাটা এবং ঘরের ভিট তৈরিসহ বিভিন্ন স্থানে। যদিও প্রশাসন বলছে, জমির উপরিভাগের মাটি কাটা অবৈধ। যারা অবৈধভাবে মাটি কাটবে তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের নিয়মিত অভিযান চলমান থাকবে।
জানা যায়, জেলার করিমগঞ্জ, হোসেনপুর, তাড়াইল, ইটনা, মিঠামইন, অষ্টগ্রাম, নিকলি, বাজিতপুর, কুলিয়ারচর, ভৈরব, কটিয়াদী, পাকুন্দিয়া ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলায় অবাধে চলছে কৃষি জমি থেকে মাটি বিক্রি। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাওরের বিভিন্ন জমিতে লেগে আছে ট্রাক-ট্রাক্টরের দীর্ঘ লাইন। ফসলি এসব জমি থেকে এক্সেভেটর (ভেকু) মেশিনের মাধ্যমে মাটি কেটে সেগুলো পরিবহন করা হচ্ছে ট্রাক্টরের মাধ্যমে। আর এসব মাটি ব্যবহার করা হচ্ছে বসতভিটা, শিল্প-প্রতিষ্ঠান ও ইটভাটায়। মাটি ব্যবসায়ীরা প্রতি ট্রাক্টর মাটি ১০০ থেকে ৩০০ টাকায় কৃষকদের কাছ থেকে ক্রয় করে সেগুলো বিক্রি করে দিচ্ছে ১৫০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। আর এতে করে অধিক মুনাফা আদায় করে নিচ্ছে চক্রটি।
২৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার করিমগঞ্জ উপজেলার নিয়ামতপুর এলাকায় কৃষি জমি থেকে মাটি কাটার অভিযোগে নাঈম ইসলাম নামে এক ব্যক্তিকে ১ লক্ষ টাকা জরিমানা ও একই ইউনিয়নের বুষার কান্দা এলাকায় ২৫ জানুয়ারি অভিযান চালিয়ে এরশাদ উদ্দিনের ইটভাটার ম্যানেজারসহ ভেকু নিয়ে যায় ভ্রাম্যমাণ আদালত।
অভিযান পরিচালনাকারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাহমিনা আক্তার বলেন, কৃষি জমি থেকে মাটি উত্তোলনকারীদের বিরুদ্ধে বালুমহাল ও মাটি ব্যবস্থাপনা আইন ২০১০ এর ১৫(১) ধারা অনুযায়ী অভিযান অব্যাহত থাকবে।
করিমগঞ্জ উপজেলা কৃষি অফিসের দেয়া তথ্যমতে, জমির উপরিভাগের ছয় থেকে দশ ইঞ্চিতে জৈব পদার্থ বিদ্যমান থাকে। উপরিভাগ কাটার ফলে জমির ফসল উৎপাদনের ক্ষমতা হ্রাস পায়। তাই সেগুলো কাটা অথবা বিক্রি করা যাবে না। তবুও অসাধু চক্রের ফাঁদে পড়ে সামান্য কিছু টাকার জন্য জমির উপরিভাগের মাটি কাটার অনুমতি দিচ্ছেন সাধারণ কৃষকরা।
এদিকে, কৃষি জমি থেকে অবৈধভাবে মাটি কাটার বিষয়ে মাঝে-মধ্যে অভিযান চালিয়ে জেল-জরিমানা করছে উপজেলা ও জেলা প্রশাসন। তবে তাদের এই অভিযান কোন কাজেই আসছে না। সকালে অভিযান চালিয়ে জেল জরিমানা দিলেও বিকেলেই একই জায়গা থেকে উত্তোলন করা হচ্ছে মাটি। অথবা রাতের আধারে ট্রাক-ট্রাক্টরের মাধ্যমে কৃষি জমির মাটি পাচার করা হচ্ছে জেলার বিভিন্ন স্থানে। এমতাবস্থায় পরিবেশের ভারসাম্য ঠিক রাখতে এবং এলাকার রাস্তা ঘাট রক্ষায় প্রশাসনের আরও কঠোর নজরদারি কামনা করেছেন স্থানীয় এলাকাবাসী।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) নেতারা বলেন প্রতারণার ফাঁদে পড়ে জমির উপরিভাগের মাটি বিক্রি না করার জন্য কৃষকদের প্রতি আহবান জানান। একই সাথে তিনি মাটি ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
হোসেনপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) ফরিদ-আল-সোহান বলেন, জমির উপরিভাগের মাটি কাটার খবর পাওয়া মাত্রই অভিযান চালানো হচ্ছে। তিনি বলেন- যারাই অবৈধ এসব কর্মকাণ্ড করবে তাদেরকে আইনের আওতায় আনা হবে। ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্টদের জরিমানা করা হয়েছে।

 
                             
                                    


 সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন 
                                     
                                     
                                    -20251031233315.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                     
                                                                                    -20251031164732.webp) 
                                                                                     
                                                                                     
                             
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
        
       
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন