সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলায় লক্ষ্মীবিষ্ণু প্রসাদ গ্রামে দীর্ঘ পাঁচ মাস ‘আয়নাঘরে’ নারী-পুরুষকে আটকে রেখে পাশবিক নির্যাতন করা হয়। এদিকে তাদেরকে আটকে রেখে কিডনি কেটে নেওয়া ও মুক্তিপণ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। তবে নির্মাণাধীন ভবনের নিচ থেকে দুই ভুক্তভোগী কৌশলে বের হয়ে আসার পর কথিত আয়নাঘরের বিষয়টি এলাকাবাসীর নজরে আসে।
শুক্রবার (২ মে) ভোরে উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়নের প্রত্যন্ত সোনারাম গ্রামে দিনমজুর জহুরুল ইসলামের বাড়িতে নির্মাণাধীন ভবনের নিচে আয়নাঘর থেকে সুরঙ্গ পথ তৈরি করে শিল্পী খাতুন (৩৮) ও আব্দুল জুব্বার (৭৫) বেরিয়ে আসেন। কবর আকৃতির প্রতিটি কক্ষ মাত্র চার ফুট উঁচু, ৯ ফুট দৈর্ঘ্য ও প্রস্থ চার ফুট। ওই ঘরে শিল্পী ও জুব্বার বন্দি ছিলেন। ভুক্তভোগী শিল্পী চান্দাইকোনা ইউনিয়নের লক্ষ্মীবিষ্ণু প্রসাদ গ্রামের মুনসুর আলীর স্ত্রী। আর জুব্বার একই ইউনিয়নের পূর্ব পাইকড়া গ্রামের বাসিন্দা। নির্মাণাধীন ভবনের নিচে আয়নাঘরের প্রতিটি কক্ষ একেকটি কবরের সমান। সামনে করিডোর, ছোট ছোট দরজা। ঘরের পূর্ব কোণায় সুরঙ্গ রয়েছে। এ সুরঙ্গ দিয়ে দুইজন পালিয়েছেন। আয়নাঘরটি বিক্ষুব্ধ জনতা ভেঙে ফেলেছে।
এ ঘটনায় গ্রাম্য চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম আরাফাতসহ ২৫ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। তবে আয়নাঘর নিয়ে রহস্যের জট খোলেনি।
স্থানীয়রা জানান, ‘উপজেলার পশ্চিম লক্ষ্মীকোলা গ্রামের রেজাউল করিম তালুকদারের ছেলে আরাফাত গ্রাম্য ডাক্তার হলেও তার কোনো সার্টিফিকেট নেই। তিনি দলবল নিয়ে ঘুরে বেড়াতেন। এলাকায় তিনি সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতেন। তিনি কখনো সাংবাদিক, কখনো সমন্বয়কের পরিচয়ে এলাকায় দাপিয়ে বেড়াতেন। তার বিরুদ্ধে মামলাবাজি, চুরি, ব্ল্যাকমেইলসহ বিভিন্ন অভিযোগ থাকলেও আয়নাঘরে মানুষ আটকে রাখার বিষয়টি জানা ছিল না। আয়নাঘর থেকে দুজন মানুষ বের হওয়ার খবরে মানুষ হতভম্ব।’
ভুক্তভোগী শিল্পী খাতুন বলেন, ‘পাঁচ মাস আগে রাস্তা থেকে আমাকে মাইক্রোবাসে তুলে মুখে টেপ ও হাত বেঁধে ফেলে কয়েকজন। এক মাস অন্য একটি জায়গায় বন্দি রেখেছিল। পরে ওই ভবনের নিচ তলার ছোট একটি কক্ষে শিকল দিয়ে বেঁধে রাখে। আমার কিডনি নেওয়ার হুমকি দিত তারা। আমার এক মাস আগে বৃদ্ধ জুব্বারকে সেখানে আনা হয়। তার কাছ থেকেও জমি ও কিডনি নিতে চেয়েছিল তারা।’
আব্দুল জুব্বার বলেন, ‘আরাফাত কৌশলে মোটরসাইকেলে চড়িয়ে ওই আয়নাঘরে নিয়ে বন্দি করেছিল। কেন বন্দি করেছিল এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার জমির খতিয়ান নম্বর ও দলিল কোথায় রেখেছি সেটা জানতে চেয়েছিল। আমি বলিনি। এজন্য শিকলে তার হাত-পা বেঁধে রেখেছিল। টানা ২-৩ দিন খাবার দেওয়া হতো না। ডান পায়ের ঊরুতে ইনজেকশন দিয়ে মাঝে-মধ্যে আঘাত করত আমাকে। গোপন ঘরে তাদের দিনে একবার খেতে দেওয়া হতো। গোসলের কোনো ব্যবস্থা ছিল না।’
রায়গঞ্জ থানার ওসি মো. আসাদুজ্জামান জানান, ‘একজন নারী ও একজন পুরুষকে (বৃদ্ধ) আটকে রাখার অভিযোগে গ্রাম্য চিকিৎসক নাজমুল ইসলাম আরাফাতসহ ২৫ জনকে আসামি করে দুটি মামলা হয়েছে। শিল্পী খাতুনকে বন্দি রাখার অভিযোগে তার স্বামী মনছুর রহমান বাদী হয়ে এবং জুব্বারকে বন্দি রাখার অভিযোগে তার ছেলে শফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন। দুটি মামলাতেই আরাফাতকে প্রধান আসামি করা হয়েছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘শনিবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে আদালতের মাধ্যমে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আয়নাঘরের ব্যাপারে তদন্ত চলছে।’