গ্রীষ্মকাল মানেই রোদের তেজ আর আমের মধুর সুবাসে ভরা এক অন্যরকম সময়। এই ঋতুতে প্রকৃতি আমাদের উপহার দেয় এক বিশেষ ফল- আম। ভালোবেসে যাকে আমরা ডাকি ‘ফলের রাজা’।
রসে ভরপুর, সুগন্ধি ও পুষ্টিসমৃদ্ধ এই ফল শুধু স্বাদেই নয়, গুণেও অনন্য। ছোট-বড়, ধনী-দরিদ্র- সবাই যেন গ্রীষ্মকালে আমের স্বাদে এক আনন্দময় স্মৃতিতে মগ্ন হয়ে পড়েন।
হিমসাগর, ল্যাংড়া, গোপালভোগ, আম্রপালি- নামগুলো শুনলেই জিভে পানি এসে যায়!
আম শুধু মুখরোচকই নয়, এতে রয়েছে বহু স্বাস্থ্যগুণ, যা আমাদের শরীরকে রাখে সতেজ ও রোগমুক্ত। তবে আম খাওয়ার কিছু নিয়মও আছে, আর অতিরিক্ত খেলে হতে পারে বিপরীত প্রভাব।
এই ফিচারটিতে জানব, আমের উপকারিতা ও অপকারিতা, কাঁচা ও পাকা আমের পুষ্টিগুণ, আর কোন সময় কতটুকু খাওয়া উচিত।
পাকা আমের পুষ্টিগুণ ও উপকারিতা
পাকা আম শুধু মিষ্টি স্বাদের জন্যই জনপ্রিয় নয়, এটি বহু পুষ্টিতে সমৃদ্ধ একটি ফল। প্রতি ১০০ গ্রাম পাকা আমে থাকে-
ভিটামিন এ : চোখের জন্য অত্যন্ত উপকারী
ভিটামিন সি : রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
ভিটামিন ই : ত্বক ভালো রাখে
ফাইবার (আঁশ) : হজমে সহায়ক
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট : শরীর থেকে বিষাক্ত উপাদান বের করতে সাহায্য করে
পটাশিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম : হৃদযন্ত্র ভালো রাখে
নিয়মিত পাকা আম খেলে-
- ত্বক উজ্জ্বল হয়
- চোখের জ্যোতি বাড়ে
- হজম প্রক্রিয়া উন্নত হয়
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
দিনে কয়টি আম খাওয়া উচিত এবং কখন?
পরিমিতভাবে আম খাওয়া শরীরের জন্য ভালো। প্রাপ্তবয়স্কদের জন্য দিনে ১ থেকে ২টি মাঝারি আকারের আম যথেষ্ট।
সকালে বা দুপুরে আম খাওয়াই সবচেয়ে উপযুক্ত। কারণ তখন শরীরের হজমের ক্ষমতা ভালো থাকে। রাতের বেলা আম খেলে হজমে সমস্যা হতে পারে এবং ওজন বাড়ার আশঙ্কা থাকে। তাই অসময়ে আম খাওয়া থেকে সাবধান থাকুন।
কাঁচা আমের উপকারিতা
গরমে ঘাম, পানিশূন্যতা এবং হিটস্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে কাঁচা আম কার্যকর। কাঁচা আমে থাকে-
- উচ্চ মাত্রার ভিটামিন সি
- হজমে সহায়ক টারটারিক অ্যাসিড
- লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্যকারী উপাদান
আম খাওয়ার অপকারিতা
যদিও আম খুব উপকারী ও পুষ্টিতে ভরা, তবে অতিরিক্ত খেলে কিছু সমস্যা হতে পারে।
অতিরিক্ত আম খেলে ওজন বৃদ্ধির সম্ভাবনা থাকে (বেশি চিনি থাকার কারণে)। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক। অতিরিক্ত খেলে গ্যাস্ট্রিক বা হজমের সমস্যা হতে পারে।
এ ছাড়া, পাকা আমে অতিরিক্ত ক্যালরি ও কার্বোহাইড্রেট থাকায় মোটা হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
পাকা আম খেলে কি হয়?
সঠিক পরিমাণে পাকা আম খেলে—
- শরীরে শক্তি আসে
- ত্বক ও চুল ভালো থাকে
- রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে
- মানসিক চাপ কমে
তবে খেয়াল রাখতে হবে, এটি যেন অতিরিক্ত না হয়। আর এটা মনে রাখা জরুরি যে, সবসময় প্রাকৃতিকভাবে পাকানো আম খাওয়াই ভালো।
আম খাওয়া মানেই শুধু স্বাদ নয়, একসঙ্গে পুষ্টি এবং স্বাস্থ্যসুরক্ষা। তবে মনে রাখতে হবে, ‘পরিমাণই আসল কথা’। পাকা কিংবা কাঁচা- উভয় আমই উপকারী, যদি তা পরিমিত পরিমাণে এবং সঠিকভাবে খাওয়া হয়।
আর কার্বাইড-মুক্ত আম খাওয়া নিশ্চিত করাই আপনার স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে জরুরি।