যুক্তরাষ্ট্রের মসনদে দ্বিতীয় দফায় আসীন হয়েই বিভিন্ন বৈদেশিক পণ্যের ওপর ‘করের পাহাড়’ চাপানো শুরু করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এবার তার নজর সরাসরি বিনোদন দুনিয়ায়।
রোববার (৪ মে) তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টের মাধ্যমে ঘোষণা দেন, বিদেশে নির্মিত সব চলচ্চিত্রের ওপর ১০০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে।
তিনি এই পদক্ষেপকে যুক্তরাষ্ট্রের চলচ্চিত্র শিল্প রক্ষার জন্য জরুরি বলে উল্লেখ করেন এবং বিদেশি প্রযোজনাকে ‘জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি’ ও ‘প্রোপাগান্ডা’ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
অর্থাৎ বলিউড, দক্ষিণী বা অন্য যেকোনো ভারতীয় সিনেমা যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পেলে, দিতে হবে দ্বিগুণ কর। বিষয়টি নিয়ে এরই মধ্যে প্রবল উদ্বেগে ভারতের সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি।
সবচেয়ে উচ্চস্বরে প্রতিবাদ তোলেন পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রী। সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লেখেন, ‘ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১০০ শতাংশ বিনোদন শুল্কে ভারতীয় সিনেমা জগৎ শঙ্কিত। বিনোদন শুল্ক আদতে ধ্বংসাত্মক।’
অগ্নিহোত্রী আরও যোগ করেন, ‘যদি এটি চলতে থাকে, তবে ভারতীয় ছবির জগৎ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। কেউ বাঁচাতে পারবে না।’
শুধু তাই নয়, বলিউডের গা-ছাড়া মনোভাব নিয়েও সরাসরি কটাক্ষ করে তিনি লেখেন, ‘ভারতীয় ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির জেগে ওঠার সময় এসেছে। আত্মতুষ্টি ও পাপ্পারাজ্জি-সংস্কৃতি ছেড়ে এবার এই হুমকির বিরুদ্ধে লড়াই করুন।’
বিশ্লেষকদের মতে, বর্তমানে ভারত থেকে বছরে প্রায় ১৫০-৩০০টি সিনেমা যুক্তরাষ্ট্রে মুক্তি পায়। যা থেকে আসে মোটা অঙ্কের রাজস্ব, বৈদেশিক আয় এবং ব্র্যান্ডিংয়ের বড় খাত।
শুধু প্রবাসী দর্শকই নয়, আন্তর্জাতিক উৎসব ও মার্কেটের দিক থেকেও মার্কিন বাজার ছিল ভারতীয় নির্মাতাদের এক গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। কিন্তু ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতিতে সেই দরজাই হয়তো বন্ধ হতে চলেছে।
ট্রাম্প যদি সত্যিই এই শুল্ক চাপান, তবে অনেক ভারতীয় প্রযোজক মার্কিন বাজারে সিনেমা রপ্তানি করা অর্থনৈতিকভাবে অযৌক্তিক মনে করবেন। এমনকি বড় বাজেটের ছবিগুলোও আন্তর্জাতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
কারণ যুক্তরাষ্ট্রে সিনেমার আয়ের বড় একটা অংশ আসে ভারতীয় অভিবাসী ও প্রবাসী দর্শক শ্রেণি থেকে। এতে শুধু রাজস্ব ক্ষতি নয়, আন্তর্জাতিক উপস্থিতিও কমে যাবে। এই শুল্ক বলিউড, টালিউড, দক্ষিণী সিনেমা- সবাইকেই ক্ষতিগ্রস্ত করবে।
অগ্নিহোত্রীর মন্তব্যকে সমর্থন করে অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করলেও কেউ কেউ আবার পরিস্থিতি এতটাও ঘোলাতে ভাবতে নারাজ।
তাদের মতে, এখনো পর্যন্ত হোয়াইট হাউজ থেকে জানানো হয়নি, এই নতুন নিয়ম কবে থেকে কার্যকর হবে।
তা ছাড়া ভারতীয় সিনেমা এখন শুধু প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় না। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ওটিটি প্ল্যাটফর্মে প্রতিনিয়ত ভারতীয় সিনেমা মুক্তি পাচ্ছে। এই প্ল্যাটফর্মগুলোর আয়ের ওপর সরাসরি এমন শুল্ক পড়বে না।
অনেকের মতামত আরও বেশি আত্মবিশ্বাসী, ভারতীয় সিনেমা এখন যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট অভিবাসী বাজার ছাড়িয়ে মূলধারার দর্শকের কাছেও পৌঁছাচ্ছে।
‘আরআরআর’বা ‘পাঠান’র মতো সিনেমার সাফল্য দেখিয়েছে, বিশ্ববাজারে ভারতীয় সিনেমার গ্রহণযোগ্যতা বাড়ছে, ফলে অনেক বিশেষজ্ঞের মতে ভয় নয় বরং আত্মবিশ্বাস প্রয়োজন।
তবু অনেকেই এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছেন বিকল্প বাজার বা নীতিগত মোকাবিলার পথ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, যদি ভারতের বিনোদন দুনিয়া এক ছাতার নিচে না আসে, তবে এই বিপর্যয় রুখে দেওয়া সম্ভব নয়। কূটনৈতিক পর্যায়েও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে বলে মত তাদের।
সব মিলিয়ে ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ ভারতের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ওপর কেমন প্রভাব ফেলে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।