র্যাব কর্মকর্তা পলাশ সাহার (৩৭) আত্মহননের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার স্ত্রীকে হেয় প্রতিপন্ন করে একের পর এক স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছে। তবে ফরিদপুরে পলাশের শ্বশুরবাড়িতে গিয়ে জানা গেলো ভিন্ন কথা। তাদের দাবি, পুত্রবধূকে প্রতিনিয়ত নির্যাতন করতেন পলাশের মা আরতি শাহা। শাশুড়ির অত্যাচারে এক সময় আত্মহত্যার চেষ্টাও করেন সুস্মিতা সাহা।
ফরিদপুর শহরের পুরাতন বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন চৌধুরী পাড়ার বাসিন্দা ভরত সাহা (৬১)। তার একমাত্র মেয়ে সুস্মিতা সাহা (২০)। দুই বছর আগে বিয়ে হয় পলাশের সঙ্গে।
ভরত সাহার প্রতিবেশী ব্যবসায়িক চান্দু সরকার বলেন, সুস্মিতা ও তার পরিবারের সবাই খুব নিরীহ। ওর ভাই সৌরভ সাহা কুয়েটে লাস্ট সেমিস্টারে পড়াশোনা করছে। বাবার টাকা-পয়সা তেমন না থাকলেও ছেলে-মেয়েদের লেখাপড়া শিখিয়েছেন। কিন্তু লোভের কাছে আমাদের মেয়েটার জীবন নষ্ট হয়ে গেলো।
চৌধুরী পাড়ার গৃহবধূ সাধনা সাহা বলেন, ‘আমার দেবরের মেয়ে সুস্মিতা। আমার দেবরের টাকা পয়সা নেই, তাই শাশুড়ি সুস্মিতাকে ঠিকমতো খেতে দিত না, অত্যাচার করতো সব সময়। আরতি সাহা সব সময় সুস্মিতাকে তাড়িয়ে দেওয়ার জন্য মতলব করতো। কিন্তু ছেলে ভালোবাসতো বেশি, তাই নিয়ে সংসারে অশান্তি ছিল।’
সুস্মিতা সাহার ভাই সৌরভ সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমার বোন জামাই পলাশ অনেক ভালো ছেলে। আমার বোনকে খুব ভালোবাসতেন। সব সময় ফোনে আমাদের খোঁজ নিত, এটাও ছিল তার মায়ের কাছে দোষের! বিয়ে হওয়ার দুই বছরের মধ্যে একবারও আমরা বোনের শ্বশুরবাড়ি যেতে পারিনি, আমাদেরকে ওই মহিলা সহ্য করতে পারত না। চিরকুটটা পলাশের হাতের লেখা। ওখানে যে স্বর্ণের কথা লিখেছেন, তিনি হয়তো ধারণা করেছিলেন তার এ ঘটনার পর তার স্ত্রীকে তার পরিবার কোনো কিছুই দিবে না। তাই হয়তো স্বর্ণের কথা উল্লেখ করে গেছেন।’
সুস্মিতা সাহার বাবা ভরত সাহা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘বড়লোকের সঙ্গে আমার মেয়েকে বিয়ে দিতে চাইনি, কিন্তু ছেলেটি অনেক শখ করে আমার মেয়েটাকে এক রকম জোর করেই বিয়ে করে। ছেলের আগ্রহ দেখেই আমরা শেষ পর্যন্ত মেয়েটাকে দিয়েছি। কিন্তু আমার মেয়েতো শাশুড়ির অত্যাচারে স্বামীকে বাঁচাতে পারলো না। মেয়েটা আমার কয়েকবার আত্মহত্যা করতে গেছে। এখন আমি ভয় পাচ্ছি মেয়েটা নিজেকে না শেষ করে দেয়।’
ভরত সাহা বলেন, ‘উনি (আরতি সাহা) খুবই ভয়ঙ্কর মহিলা! আমাদের কাছে টাকা পায়নি, তাই সারাদিন অত্যাচার করতো মেয়েটাকে। ঠিকমতো খেতেও দিত না, আমারতো টাকা পয়সা নেই, এটাই আমার দোষ। আমার কোনো কর্ম নেই, নিজের ওষুধ কেনার টাকাও নেই, মেয়েকে কোত্থেকে দেবো! ওই মহিলা চেয়েছিল ছেলেকে বিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকা আনবে। সেটা না পেরে সারাদিন যন্ত্রণা দিত সুস্মিতাকে। আর নিজের স্ত্রীর অপমান সইতে না পেরেই আমার জামাই (পলাশ সাহা) নিজেকে শেষ করে দিলো।’
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে পলাশ সাহার মা আরতি সাহা কিংবা তার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এর আগে চট্টগ্রাম নগরের বহদ্দারহাট এলাকায় র্যাব কার্যালয়ে সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পলাশ সাহা ‘আত্মহত্যা’ করেন। বুধবার (৭ মে) সকাল সাড়ে ১০টায় র্যাব- ৭ এর নগরের বহদ্দারহাট ক্যাম্পে নিজ অফিস কক্ষে তার গুলিবিদ্ধ মরদেহ পাওয়া যায়। পলাশ সাহার গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। পারিবারিক কলহের জেরে পলাশ আত্মহত্যা করে থাকতে পারেন বলে ধারণা পুলিশ কর্তৃপক্ষের।
আপনার মতামত লিখুন :