আবহমান গ্রামবাংলার কৃষকরা ক্ষেতের ফসল পাখি, ইঁদুরসহ ফসলখেকো প্রাণীর উপদ্রব থেকে রক্ষার কৌশল হিসেবে কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন এখনো। গ্রামীণ জনপদে ফসলের জমিতে অতি পরিচিত দৃশ্য এ কাকতাড়ুয়া। ফসলি মাঠ রক্ষা করার জন্য দাঁড়িয়ে আছে একজন ‘সার্বক্ষণিক পাহারাদার’।
আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় চাষাবাদের ধরন বদলে গেলেও ময়মনসিংহের নান্দাইলের চরাঞ্চলসহ আশপাশের বিভিন্ন স্থানে কৃষিজমির ফসল রক্ষায় কৃষকরা সনাতন পদ্ধতির কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করছেন।
যুগ যুগ ধরে এরকম এক অতন্দ্র প্রহরীকে ফসলের খেতে দেখতে পাওয়া যায়। আধুনিক যুগেও গ্রামীণ জনপদে এমন অদ্ভুত বিশ্বাসের লোকের যেন অভাব নেই। তেমনই বিশ্বাস নিয়ে কৃষকরা ক্ষেতের ফসল রক্ষার্থে মানুষের আকৃতি সদৃশ কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করছেন।
মাটির হাড়ির পেছনে কাঁচা হাতে আঁকা চোখ, মুখ ও নাক। হাড়িটি ব্যবহৃত হচ্ছে মাথা হিসেবে। পুরো শরীরের আকার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একজন সবল মানুষের মতো। নাম তার কাকতাড়ুয়া।
সরেজমিনে চরবেতাগৈর ইউনিয়নের চরশ্রীরামপুর গ্রামে আলী হোসেনের (৬৫) শসা খেতে গিয়ে দেখা যায় কাকতাড়ুয়া বুক টান করে দাঁড়িয়ে আছে।
চলতি মওসুমে কৃষকের আবাদকৃত পটল,খিরা বেগুন, মরিচ, আলু, পিঁয়াজ, শসা, টমেটো ইত্যাদি ফসলি জমিতে বেশি ওই কাকতাড়ুয়ার ব্যবহার করতে দেখা যায়।
কৃষক আলী হোসেনসহ অনেকেই জানান, কাকতাড়ুয়া পশু-পাখিকে ভয় দেখানোর জন্যে জমিতে দাঁড় করা মানুষের প্রতিকৃতি বিশেষ। যা ক্ষতিকর পাখির আক্রমণ থেকে ফসল রক্ষার উদ্দেশ্যে জমিতে এটা রাখা হয়। এটি একপ্রকার ফাঁদ, যা ভয় দেখানোর উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ নাঈমা সুলতানা বলেন, ‘উপজেলার চরাঞ্চলসহ প্রত্যন্ত এলাকার অনেক কৃষি জমিতে এখনো কৃষক কাকতাড়ুয়া ব্যবহার করেন। অনেকের ধারণা তাদের খেতে কাকতাড়ুয়া দাঁড়ানো থাকলে ফসলের কোনো ক্ষতি হবে না, এমন বিশ্বাস থেকেই কৃষকেরা কাকতাড়ুয়া জমিতে স্থাপন করে থাকতে পারেন বলেও মন্তব্য করেন তারা। যদিও ফসল রক্ষায় কাকতাড়ুয়ার কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই।
আপনার মতামত লিখুন :