গাজীপুরের কালিয়াকৈরে ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের ওপর অবৈধ হাট-বাজার বসিয়ে চলছে ব্যবসা। যদিও প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাঝেমধ্যে নামমাত্র উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়, কিন্তু অভিযান শেষ হওয়ার পরপরই আবারও পুরনো চেহারায় ফিরে আসে এসব অবৈধ হাট।
এমন ‘চোর-পুলিশ’ খেলার কারণে আসন্ন ঈদযাত্রায় এই মহাসড়কে তীব্র জনভোগান্তির আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা, পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীরা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ১৭টি জেলার যানবাহন চলাচল করে। অথচ কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক, সফীপুর, পল্লী বিদ্যুৎ, চন্দ্রা ত্রিমোড়, বোর্ডঘরসহ বিভিন্ন পয়েন্টে ওভারপাসের নিচে ও ফুটপাতে অবৈধভাবে ভ্রাম্যমাণ দোকানপাট ও হাট-বাজার বসানো হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার।
চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেট
স্থানীয়দের অভিযোগ, আগে আওয়ামী লীগ এবং বর্তমানে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে এই রমরমা ব্যবসা চালাচ্ছে। এসব অবৈধ হাটের শত শত দোকান থেকে প্রতিদিন দোকানপ্রতি ১৫০-২০০ টাকা করে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে।
হাইওয়ে পুলিশসহ সড়কসংশ্লিষ্ট কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ম্যানেজ করেই এই সিন্ডিকেট চক্র তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। আর সে জন্য সংশ্লিষ্টরা রয়েছেন নীরব দর্শকের ভূমিকায়।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মহাসড়কের পল্লী বিদ্যুৎ এলাকার হাটের নিয়ন্ত্রণ করেন পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাবেক সভাপতি সোহেল সরকার। তিনি বলেন, ‘যে টেন্ডার পাইছে সেই কালেকশন করে। আমার নামে তো টেন্ডার না, টেন্ডার হচ্ছে জাকিরের নামে।’
মহাসড়কে টেন্ডার কীভাবে হয় জিজ্ঞাসা করলে সোহেল বলেন, ‘জাকিরের সঙ্গে কথা বলেন।’ আপনি টাকা তোলেন জিজ্ঞাসা করলে বলেন, ‘আপনি খোঁজ নিয়ে দেখেন।’
ঈদযাত্রায় ভোগান্তির আশঙ্কা
বাসিন্দারা জানান, বছরে দুটি ঈদ, দুর্গাপূজাসহ বড় ছুটির সময়ে যানবাহনের চাপ বাড়লে মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে যানজটের সৃষ্টি হয়। শিল্পকারখানাগুলো একসঙ্গে ছুটি হলে এই মহাসড়কে যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।
চলমান অবৈধ হাট-বাজারগুলো উচ্ছেদ করা না হলে আসন্ন ঈদযাত্রা স্বস্তিকর করতে প্রশাসনের নেওয়া সব প্রস্তুতি ভেস্তে যাবে বলে তারা আশঙ্কা করছেন।
অবৈধ যানবাহন ও দুর্ঘটনার ঝুঁকি
এছাড়াও, চাঁদা দিয়ে মহাসড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিকশা, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাহিন্দ্রাসহ বিভিন্ন অবৈধ যানবাহন। মহাসড়কের ওপর যত্রতত্র রয়েছে এসব যানবাহনের অবৈধ স্টেশন, যা প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে।
যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং এবং যাত্রী ওঠানামাও যানজটের অন্যতম কারণ। ঈদযাত্রা শুরুর আগমুহূর্তে এর সমাধান না হলে ঘরমুখো মানুষ চরম ভোগান্তিতে পড়বে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
নাওজোড় হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রইছ উদ্দিন বলেন, ‘বিভিন্ন সময় মহাসড়কের ওপর থাকা অবৈধ হাট-বাজার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। শুনেছি আবারও বসেছে, সেগুলো উচ্ছেদ করা হবে। তবে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে আমাদের ব্যাপক প্রস্তুতি রয়েছে।’
আপনার মতামত লিখুন :