সম্প্রতি যশোরের অভয়নগর উপজেলায় দুর্বৃত্তদের গুলিতে তরিকুল ইসলাম (৫০) নামের এক কৃষকদল নেতা নিহত হয়েছেন। ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন নতুন তথ্য বেড়িয়ে আসছে।
শুরুতে রাজনৈতিক বিরোধ আলোচনা হলেও এখন জানা যাচ্ছে ভিন্ন তথ্য। বলা হচ্ছে, মাছের ঘের নিয়ে তরিকুলকে হত্যা করা হয়েছে।
এ ঘটনায় ইতোমধ্যে চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অভয়নগর থানার ওসি আবদুল আলিম বলেন, ‘তরিকুল হত্যা মামলায় এজাহারভুক্ত তিন আসামিসহ চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। মাছের ঘের সংক্রান্ত বিরোধের জেরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় দুই দশক ধরে মশিয়াহাটি বাড়েদাপাড়া এলাকায় ২০ বিঘা আয়তনের ঘেরে মাছচাষ করেন তরিকুল। তার ঘের দেখাশোনা করেন স্থানীয় বাসিন্দা পিল্টু বিশ্বাস। তারা দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী হয়ে ওঠেন। তাদের পারিবারিকভাবে সুসম্পর্ক ছিল।
৫ আগস্ট রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একই এলাকার প্রায় দুইশ বিঘা আয়তনের ঘের মালিক চিকন বাবু সমস্যায় পড়েন। স্থানীয় প্রভাবশালীদের চাপের মুখে তার ইজারার মেয়াদ শেষ না হলেও ছেড়ে দিতে বাধ্য হন। ওই ঘেরটি ইজারা নেওয়ার জন্য দুটি পক্ষ মুখোমুখি হয়ে যায়।
তরিকুল ইসলামের পক্ষে পিল্টু বিশ্বাস ঘেরের জমির মালিকদের সঙ্গে আলোচনা করেন। ওই সময় আরেক ঘের মালিক ফিরোজ খান একই ঘেরের ইজারা নেওয়ার ইচ্ছা পোষণ করেন। তরিকুল ও ফিরোজ খান বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত। একই ঘের দুজন ইজারা নিতে চাওয়ায় তাদের মধ্যে ঠান্ডা লড়াই শুরু হয়। একপর্যায়ে গত ১৬ মে বাড়েদাপাড়া স্কুল মাঠে ঘেরের জমির ইজারা ডাক (নিলাম) হয়।
ওই নিলামে তরিকুল ইসলাম ও ফিরোজ খান অংশ নেন। ডাকে ফিরোজ খান বেশি টাকা দিতে রাজি হন। এ নিয়ে তরিকুল ও ফিরোজ খানের মধ্যে তর্কাতর্কি হয় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
পরে স্থানীয় প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিত পিল্টু বিশ্বাস ঘেরের জমির মালিকদের রাজি করান, তারা যেন তরিকুল ইসলামকে ওই ঘেরের জমি ইজারা দেয়। একপর্যায়ে পিল্টু বিশ্বাস জমির মালিকদের কাছ থেকে ইজারা চুক্তিপত্র (ডিড) স্বাক্ষর করিয়ে নেন। জমির মালিকদের স্বাক্ষর নেওয়া শেষ হলে ২২ মে বিকেলে তরিকুল ইসলামকে ফোনে ডেকে নেন পিল্টু বিশ্বাস। ডিডের কপি নেওয়ার জন্য ফোন পেয়ে সঙ্গী সুমনকে সঙ্গে নিয়ে পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে যান তরিকুল ইসলাম। এরপর দুর্বৃত্তরা গুলি করে ও কুপিয়ে তাকে হত্যা করে। মৃত্যু নিশ্চিত করতে মাথা থেকে পা পর্যন্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ৩৫টি কোপ দেয়। ছয়জন মিলে নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটায় মাত্র পাঁচ থেকে ছয় মিনিটের মধ্যে।
এ ঘটনায় গত ২৬ মে অভয়নগর থানায় ১১ জনের নামে মামলা করেন নিহতের ভাই রফিকুজ্জামান টুলু।
বাদী এজাহারে উল্লেখ করেছেন, তরিকুল খুনের সংবাদ পেয়ে তার ভাই, আত্মীয়স্বজন, দলীয় নেতাকর্মীরা দ্রুত পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে গিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় পায়। একপর্যায়ে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ১০০-১৫০ অজ্ঞাতনামা আসামিরা হামলা ও লুটপাট চালায়।
তবে স্থানীয়রা জানান, তরিকুল হত্যার খবর পেয়ে পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তা, দলের শীর্ষ নেতারা পিল্টু বিশ্বাসের বাড়িতে হাজির হন। এ সময় দুর্বৃত্তরা পুলিশ ও বিএনপির নেতাদের উপস্থিতিতে পিল্টুর বাড়িতে আগুন দিতে পারেনি। আশপাশের হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা। এই হামলায় নিহত তরিকুলের কর্মী-সমর্থকরা জড়িত নাকি ও সুযোগসন্ধানী চক্র আগুন দিয়েছে, সেটি নিয়ে ধূম্রজাল তৈরি হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :