চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য আবদুচ ছালামের মালিকানাধীন একটি কারখানা থেকে পাহাড়ের সশস্ত্র সংগঠন কুকি-চিন ন্যাশনাল ফ্রন্টের (কেএনএফ) ইউনিফর্ম উদ্ধার করেছে পুলিশ।
কেএনএফের বিপুল পরিমাণ ইউনিফর্ম উদ্ধারের ঘটনায় তোলপাড় চলছে। তাই, বিষয়টি খতিয়ে দেখার কথা বলছে সেনাবাহিনী। এত বিপুল ইউনিফর্ম কেন তৈরি করা হচ্ছিল তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরাও। পাশাপাশি টাকার উৎস নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর এমদাদুল ইসলাম বলেন, ‘সম্ভবত কুকিচিন ভূ-রাজনীতির কোনো একটা ফাঁদে পা দিয়েছে, কারণ তাদের কেউ না কেউ অর্থ যোগান দিচ্ছে। সংখ্যার দিক থেকে যদি প্রতিজনে ২টা করে ইউনিফর্ম তৈরি হয় তাহলে তারা প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার সদস্য নিয়ে আগাচ্ছে। কেএনএফ বড় কোনো পরিকল্পনা সাজাচ্ছে কি না তা খোঁজা দরকার।’
সেনাবাহিনীর মিলিটারি অপারেশনের পরিচালক ব্রি. জে. নাজিম উদ দৌল্লাহ বলেন, ‘টোটাল বম কমিউনিটির জনসংখ্যাই হচ্ছে ১০ থেকে ১২ হাজার। সে ১২ হাজারের মধ্যে ছোট বাচ্চা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সবাই শামিল। সেক্ষেত্রে এ ৩০ হাজার ইউনিফর্ম কেএনএফের কি না সেটা অবশ্যই খুঁজে দেখার সুযোগ আছে। আমরা বিষয়টি অত্যন্ত সিরিয়াসলি নিয়েছি।’
এ বিষয়ে গার্মেন্টসটির ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তা কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে কর্মীরা জানান, গেল মার্চ থেকে এসব ইউনিফর্ম তৈরির কাজ হচ্ছিল কারখানায়। যার ক্রেতা ছিল গোলাম আজম এবং নিয়াজ হায়দার নামের দুই ব্যক্তি। তাদেরও গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
কারখানাটির কর্মীরা বলেন, ‘এই মালগুলো কি চোরের না ডাকাতের আমরা তো জানি না, ওরা আইনা দিছে আমরা কাজ করছি। কোম্পানি তো আর জানে না এগুলো কোনো একটা অবৈধ সংগঠনের। কিছু ফেব্রিক আর কিছু অর্ডার নিয়ে আমাদের কাছে আসে, আসার পর আমাদের মালিক সুইংয়ে আমাদের দেয় আমরা দীর্ঘ দেড় থেকে দুই মাস পর্যন্ত সুইং করি।’
সচেতন মহল বলছে, সম্প্রতি চট্টগ্রাম থেকে কুকি চিনের পোশাক উদ্ধারের বিষয়টি হালকাভাবে নেওয়ার সুযোগ নেই। কুকি চিনের তৎপরতার বিষয়টি এখনই খতিয়ে দেখা উচিত। পাশাপাশি পোশাক উদ্ধারের বিষয়ে পুলিশের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি না আসায় বিষয়টি নিয়ে ধোঁয়াশা তৈরি হয়েছে।
এর আগে সোমবার (২ জুন) রাতে নগরের চান্দগাঁও থানার কালুরঘাট বিসিক শিল্প এলাকায় এ অভিযান পরিচালনা করা হয়। এ সময় সেখান থেকে আবদুচ ছালামের ছোট ভাই তারেকুল ইসলামসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ।
আটক অন্য ব্যক্তিরা হলেন কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক তরিকুল ইসলাম, মার্কেটিং সিনিয়র ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম, সহকারী ম্যানেজার (মাস্টিং) জামালুল ইসলাম এবং সিনিয়র প্রোডাকশন ম্যানেজার আতিকুর রহমান। পরে তাদের বায়েজীদ থানার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। চান্দগাঁও থানার ওসি আফতাব উদ্দিন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।
তিনি জানান, কুকি-চিনের পোশাক তৈরির জন্য ফেব্রিক্সগুলো ওই কারখানা থেকে সাপ্লাই দেওয়া হয়েছে, এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। ঘটনাস্থল থেকে ৪ জনকে আটক করা হয়।
চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের অর্থ সম্পাদক মো. আবদুচ ছালামের পারিবারিক মালিকানায় থাকা শিল্পগোষ্ঠী ওয়েল ফেব্রিক্স লিমিটেডের মালিক প্রতিষ্ঠান ওয়েল গ্রুপ। ছালাম ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির নির্বাচনে চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চান্দগাঁও) আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান ছিলেন। শেখ রেহানার ক্যাশিয়ার হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
এখন পর্যন্ত চট্টগ্রামের বিভিন্ন কারখানায় তিন দফা অভিযান চালিয়ে ৪৭ হাজার পিস ইউনিফর্ম জব্দ করেছে নগর গোয়েন্দা ও পাহাড়তলী থানা পুলিশ। ওইসব ঘটনায় দুই গার্মেন্ট মালিক পুলিশ রিমান্ডে রয়েছেন।
আপনার মতামত লিখুন :