শুক্রবার, ০৬ জুন, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

স্কুলব্যাগ নয়, কোদাল কাঁধেই চরের শিশুদের সকাল শুরু

হাসানুজ্জামান হাসান, কালীগঞ্জ

প্রকাশিত: জুন ৩, ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম

জমিতে মই দিচ্ছে শিশু। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

জমিতে মই দিচ্ছে শিশু। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাটের নদীঘেরা চরাঞ্চল, এখানে জন্মানো মানেই সংগ্রামের শুরু। এ এলাকার শিশুদের কাছে জীবনের মানে খেলাধুলা, পড়ালেখা কিংবা বিনোদন নয়। প্রতিদিন ভোরে ঘুম ভাঙে তাদের ‘শ্রমের বিনিময়ে একবেলা আহার’ জোটানোর তাগিদে। 

দু’মুঠো ভাতের নিশ্চয়তার জন্য দিনের শুরুতেই তারা ছুটে যায় মাঠে ফসলের খেত, কিংবা কোনো কৃষকের খুঁজে শ্রমের বিনিময়ে একবেলার আহার জুটিয়ে নিতে।

চরের শিশুরা যেন জন্ম থেকেই প্রশিক্ষিত শ্রমিক। তারা জানে কেমন করে জমিতে মই দিতে হয়, কেমন করে আলু গাছের গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হয় কিংবা কীভাবে ধান কাটতে হয়- এসব শিখে নেয় ছোট থেকেই।

মাটির সঙ্গে এদের হৃদ্যতা এতটাই গভীর যে মাটির গন্ধেই যেন তারা পেয়ে যায় জীবনের মানে।

‘সকাল হলেই ছোটরা দৌড়ে চলে যায় খেতে। অনেকেই বাবার সঙ্গে হাল চাষে, কেউ সেচ দেয়, কেউ আবার ধান তোলে,’ বললেন লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলার শৌলমারীর কৃষক আবেদ আলী।

চরের বেশিরভাগ শিশুই প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। কিন্তু মাধ্যমিকে ওঠার সিঁড়ি খুব কম জনই পাড়ি দিতে পারে। কারণ একটাই, দারিদ্র্য। স্কুলের ঘণ্টা বাজার আগেই তার হাতে উঠে আসে কোদাল, কিংবা গরুর দড়ি। মেয়েরা অনেক সময় কাজের ফাঁকে ভাইবোনদের দেখাশোনা করে, রান্না করে বা মাঠে মা-বাবাকে সহযোগিতা করে।

শিশুরা চরে ফুটবল খেলাধুলা করছে। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

হাতীবান্ধা উপজেলার ডাউয়াবাড়ী চরের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে ক্লাস ফোরে পড়ে, কিন্তু এখন কাজ না করলে আমাদের ভাত জুটবে না।’

তিনি বলেন, ‘স্কুলের ব্যাগ আর কৃষিকাজের কোদালের ভার একসঙ্গে বহন করা সম্ভব হয় না সবার পক্ষে। ফলে অধিকাংশই ঝরে পড়ে।’

বিকেলের বালুমাটিতে হঠাৎ দেখা যায় ১০-১২ জন কিশোর মাঠে খেলছে। কারো পায়ে স্যান্ডেল নেই, কারো গায়ে নেই ঠিকঠাক জামা, কিন্তু তাদের চোখেমুখে তেজ। তারা ফুটবল খেলছে, ক্রিকেট খেলছে, যেন জীবনের অন্য সব দুঃখ-কষ্ট ভুলে গেছে। নেই কোনো প্রশিক্ষক, নেই মানসম্পন্ন সরঞ্জাম। তবু তারা খেলে, নিজেদের মতো করে।

‘আমাদের চর থেকে কয়েকজন ছেলে এখন জেলা পর্যায়ে ফুটবল খেলে’, বলছিলেন একই চরের বাসিন্দা মকবুল হোসেন।

তাদের কারো পেট খালি, কারো গায়ে ছেঁড়া জামা, কারো পা ফাটা। তবু মুখে রয়েছে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস। চরাঞ্চলের শিশুদের জীবন যেন এক মৌন প্রতিবাদ। রাষ্ট্র যখন উপেক্ষা করে, সুযোগ যখন বারবার হাতছাড়া হয়, তখন তারা নিজেদের রক্ত-মাটি-ঘামের শক্তিতেই গড়ে তোলে একেকটা সম্ভাবনার আলোকবর্তিকা।

‘আমরা জানি কীভাবে চাষ করতে হয়, কীভাবে মাঠে কাজ করতে হয়, কিন্তু জানি না কীভাবে একটা ভালো স্কুলে ভর্তি হতে হয়’, বলছিল ১৫ বছরের রাজু ইসলাম, যে সকালে স্কুলে যায়, বিকেলে মাঠে কাজ করে।

চরের শিশুরা কেবল দারিদ্র্য নয়, প্রতিনিয়ত লড়ছে নদীর ভয়াবহ ভাঙনের বিরুদ্ধেও। কখন কোন দিন ঘুম থেকে উঠে দেখে ঘরটা নদীতে তলিয়ে গেছে—এই আশঙ্কা সবসময় সঙ্গী। তবু তারা আশাবাদী। তাদের চোখে এখনো দেখা যায় ভালোভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্ন।

কৃষি কাজ করছেন আরেক ‍শিশু। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

লালমনিরহাট চর উন্নয়ন কমিটির সংগঠক নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চরের শিশুদের নিয়ে কেউ কোনো উন্নয়ন পরিকল্পনায় কথা বলে না। তাদের ভবিষ্যৎ যেন মাটির ধুলায় ঢাকা পড়ে থাকে। অথচ এই শিশুরাই পারে বদলে দিতে একটি জাতির গল্প। যদি একটু সুযোগ, একটু সহানুভূতি, আর একটু সমর্থন দেওয়া যায়।’ 

‘এরা শুধু শ্রম দিতে জানে না, স্বপ্ন দেখতেও জানে। আর সেই স্বপ্নই একদিন ইতিহাস হয়ে উঠতে পারে,  যদি আমরা শুনতে পারি তাদের হৃদয়ের ভাষা। চরের মানুষের ভাগ্যের উন্নয়ন করতে হলে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় দরকার। এ জন্য আমরা চরবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জন্য আবেদন করে আসছি।’

Link copied!