চট্টগ্রামের কালুরঘাট সেতুতে পর্যটক এক্সপ্রেস ট্রেনের ধাক্কায় বেশ কয়েকটি যানবাহনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে এখন পর্যন্ত তিনজন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন।
বৃহস্পতিবার (৫ জুন) রাত সাড়ে ১০টার দিকে সেতুর বোয়ালখালী অংশে এ দুর্ঘটনা ঘটে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, ওই গাড়িগুলো সিগন্যাল না মেনেই সেতুর ওপরে উঠে গিয়েছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, দুর্ঘটনায় আরও কয়েকটি মোটরসাইকেলও ট্রেনের নিচে চাপা পড়ে। এছাড়া একটি ভিডিও ফুটেজে এক শিশুকে কাঁধে নিয়ে এক যুবককে গগনবিদারী কণ্ঠে ‘আল্লাহু আকবর’ বলতে বলতে কাঁদতে দেখা যায়। ধারণা করা হচ্ছে, নিহত শিশুটি ওই যুবকের সন্তান। তবে তাদের পরিচয় তাৎক্ষণিকভাবে নিশ্চিত করতে পারেনি কেউ।
ঘটনার পরপরই স্থানীয়রা আহতদের উদ্ধারে এগিয়ে আসেন। খবর পেয়ে রাত পৌনে ১১টার দিকে কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন থেকে কয়েকটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমিনুল ইসলাম বলেন, রাত পৌনে ১১টার দিকে আমরা খবর পাই। আমাদের দুটি ইউনিট অ্যাম্বুলেন্সসহ ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। হতাহতদের উদ্ধারে কাজ চলছে।
দুর্ঘটনার বিষয়ে গুমদণ্ডী রেলওয়ে স্টেশনের সহকারী স্টেশনমাস্টার আজম উদ্দিন বলেন, ‘সেতুর ওপর একটি গাড়ি নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এ কারণে সব গাড়ি সেতু থেকে নামতে পারেনি। নিয়ম হলো ট্রেন পূর্ব প্রান্তে এসে দাঁড়াবে। এরপর লাইনম্যানের সংকেত নিয়ে সেতুতে উঠবে। কিন্তু ট্রেন চালক এ নিয়ম না মেনে দ্রুতগতিতে সেতুতে উঠে যান। আবার উল্টো দিক থেকে গাড়ি আসছিল। এ কারণে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন।’
জালানিহাট স্টেশন মাস্টার মো. নেজাম উদ্দিন বলেন, ‘ট্রেনটি রাত ১০টা ১০ মিনিটে কালুরঘাট রেলসেতুর অদূরে পৌঁছায়। ওই সময় সেতুর ওপরে একটি সিএনজি অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গেলে যানজট তৈরি হয়। আমরা তখনই লাল সিগন্যাল দিই। গার্ডও হাতে লাল পতাকা নিয়ে সিগন্যাল দেন। কিন্তু চালক সিগন্যাল মানেননি। কালুরঘাট ব্রিজটি ডেড স্টপেজ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেন থামিয়ে ধীরে ব্রিজে ওঠার নিয়ম। চালক তা মানেননি।’
জালানিহাট স্টেশনের দায়িত্বপ্রাপ্ত গার্ড মো. মাহবুব বলেন, ‘আমি সিগন্যাল অমান্য হওয়ার সম্ভাবনা বুঝতে পেরে নিজেই সেতুর মুখে গিয়ে ট্রেন থামাতে লাল পতাকা নাড়িয়ে সংকেত দিই। তবুও ট্রেন চালক সেটি উপেক্ষা করেন।’
রেলওয়ে কর্মকর্তারা জানান, ‘কালুরঘাট সেতুটি ‘ডেড স্টপেজ’ হিসেবে চিহ্নিত। এখানে ট্রেনকে অবশ্যই থেমে ধীরে ব্রিজে ওঠার নিয়ম রয়েছে। চালকের অবহেলায় সেই নিয়ম ভাঙায় ঘটেছে এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনা।’
কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের ফায়ার ফাইটার আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা খবর পেয়েই দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছাই। উদ্ধার কার্যক্রমে কয়েকটি ইউনিট কাজ করছে।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে পুলিশ ফাঁড়ির উপ-পরিদর্শক (এসআই) আলাউদ্দিন তালুকদার জানান, ‘কালুরঘাট থেকে উদ্ধার করে আহত পাঁচজনকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। তাদের ক্যাজুয়ালিটি ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।’
দুর্ঘটনার বিষয়টি নিশ্চিত করে বোয়ালখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গোলাম সারোয়ার বলেন, ‘সেতুর ওপর অন্তত চারটি যানবাহন ছিল। তবে ট্রেনের ধাক্কায় একজনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানান তিনি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ে পুলিশ সুপার শাকিলা সোলতানা বলেন, ‘ট্রেনের সঙ্গে অটোরিকশা, টমটম ও পিকআপের সংঘর্ষ হয়েছে। এক শিশু নিহত হয়েছেন। এ ছাড়া, একজন গুরুতর আহত হয়েছেন বলে জানান তিনি।’
আপনার মতামত লিখুন :