নরসিংদীর পলাশ উপজেলার গরিব ও নিম্নআয়ের মানুষের একমাত্র চিকিৎসাকেন্দ্র পলাশ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। একসময় ৩১ শয্যা বিশিষ্ট এ হাসপাতালটি রোগীর চাপ বাড়ায় ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবল সংকট ও চরম অব্যবস্থাপনায় সেবার মান ক্রমেই ভেঙে পড়ছে। ফলে দিনে দিনে রোগীর সংখ্যা কমছে। যারা আসছেন, তারাও পড়ছেন চরম বিড়ম্বনায়।
অভিযোগ রয়েছে, দায়িত্বরত অধিকাংশ ডাক্তার প্রাইভেট হাসপাতালে চিকিৎসায় ব্যস্ত থাকেন। ফলে হাসপাতালের কার্যক্রম চলছে কেবলমাত্র কয়েকজন মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট ও নার্সদের ওপর নির্ভর করে।
সরেজমিনে একাধিকবার দেখা গেছে, দুপুর ১২টার দিকে জরুরি বিভাগে শুধু মেডিকেল অ্যাসিস্ট্যান্ট চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। অধিকাংশ কক্ষে টেবিল-চেয়ার খালি পড়ে রয়েছে। কোনো ডাক্তারের দেখা মেলেনি। এক কর্মচারী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘স্যাররা বাইরে রোগী দেখেন, তাই তাড়াতাড়ি চলে যান।’
এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. নন্দা সেন গুপ্তার অফিসে গেলে, তাঁকে চেয়ারে পাওয়া যায়নি। পাশের রুমের এক কর্মচারী জানান, ‘স্যার ঢাকায় জরুরি কাজে গেছেন।’
পুরুষ ও মহিলা ওয়ার্ডে গিয়েও দেখা যায়, অধিকাংশ বিছানা খালি। নার্সদের বরাতে জানা গেছে, বর্তমানে মহিলা রোগী আছেন ৬ জন এবং পুরুষ রোগী ৮ জন।
রোগীরা অভিযোগ করেন, প্রয়োজনের সময় ডাক্তার পাওয়া যায় না। বড় ডাক্তাররা প্রাইভেট হাসপাতালে ব্যস্ত থাকেন। এখানে প্যারাসিটামল ছাড়া অন্য কোনো ওষুধ মেলে না। বেশিরভাগ ওষুধ বাইরে থেকে কিনে আনতে হয়।
স্থানীয়রা জানান, হাসপাতালে নিয়মিত গাইনি ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও তিনি সপ্তাহে দু-একদিনই দু-এক ঘণ্টার জন্য আসেন। চিকিৎসার মান নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ইকবাল ও আব্দুর রহমান জানান, আগে সেবার মান ভালো ছিল। কিন্তু ২০২৪ সালের ২৮ মার্চ ডা. নন্দা সেন গুপ্তা যোগদানের পর থেকে চিকিৎসা সেবার মান অবনতির দিকে যাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি সরকারি গাড়ি নিয়ে নিয়মিত ঢাকায় অবস্থান করেন।
আব্দুর রহিম ভূঁইয়া নামে এক রোগীর স্বজন বলেন, ‘ভাইকে নিয়ে তিন দিন হাসপাতালে ছিলাম। এক পলকের জন্য ডাক্তার এসে দেখে গেছেন। সেবার কোনো উন্নতি হয়নি। পরে বাধ্য হয়ে জেলা হাসপাতালে চলে যেতে হয়েছে।’
হাসপাতালের আরেক বড় সমস্যা গ্যাস সংকট। গ্যাস সংযোগ না থাকায় রোগীরা গরম পানি সংগ্রহের জন্য বাড়িঘর বা দোকানে যেতে বাধ্য হন। লাকড়ি দিয়ে রান্নার ফলে হাসপাতালের দেয়াল-ছাদে ধোঁয়ার ছাপ লেগে গেছে।
এসব অভিযোগ নিয়ে ডা. নন্দা সেন গুপ্তার ব্যক্তিগত মোবাইলে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
আপনার মতামত লিখুন :