কুমিল্লার মুরাদনগরে গৃহবধূকে ধর্ষণের ঘটনায় অভিযুক্ত ফজর আলীকে নিয়ে বেরিয়ে আসছে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। রাজনৈতিকভাবে ফজর আলীর সঙ্গে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। এ ছাড়া, তিনি নিজ এলাকায় মাদক ও জুয়ার পাশাপাশি সুদের ব্যবসা করেন।
জানা গেছে, অভিযুক্ত ফজর আলী উপজেলার রামচন্দ্রপুর দক্ষিণ ইউনিয়নের শহীদ মিয়ার ছেলে। তিনি মূলত এলাকায় ঘুরে ঘুরে সুদের ব্যবসা করেন।
ফজর আলীর বিষয়ে তার এক প্রতিবেশী বলেন, ‘ফজর আলী এলাকায় ঘুরে ঘুরে সুদের ব্যবসা করে। তবে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা ও ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক আছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। কোনো পদে আছে বলে আমার জানা নেই। ৫ আগস্টের পর অন্য দল করে কি না, তাও জানি না। তাকে দিয়ে সবসময় আমাদের গ্রামে টিসিবির কার্ড বিতরণ করিয়েছেন চেয়ারম্যান।’
প্রতিবেশী আরেক বাসিন্দা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে মেশা শুরু করে ফজর। ইউনিয়ন বিএনপির পদ পাওয়ার চেষ্টা করেছিল।
একই এলাকার বাসিন্দা বলেন, ‘তাকে ঘিরে বিএনপিকে জড়ানো হচ্ছে। আমরা ছোটবেলা থেকে দেখছি ফজর আওয়ামী লীগের রাজনীতি করে। বিএনপির কোনো অনুষ্ঠানে দেখিনি।’
ফজরের বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া খোকন বলেন, ‘ফজর আলীকে আমি তেমন চিনি না। আমি জনপ্রতিনিধি, আমার সঙ্গে অনেকে ছবি তুলতে আসে। আমি তো কাউকে ওভাবে মনে রাখি না।’
উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিন অঞ্জন বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে ফজর আলীর কোনো সম্পর্ক নেই। সে আওয়ামী লীগ করে। খোকন চেয়ারম্যানের দেহরক্ষী হিসেবে পরিচিত। এখন অনেকে তাকে বিএনপি কর্মী হিসেবে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে। আমরা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে তার বেশ কয়েকটি ছবি দেখেছি কিন্তু বিএনপির নেতাদের সঙ্গে একটা ছবিও নেই তার।’
স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক সদস্য আব্দুর রব বলেন, ‘ফজর এলাকার চিহ্নিত মাদক কারবারি। এলাকায় জুয়ার আসর বসিয়ে অনেক পরিবারকে নিঃস্ব করেছে। ১৫ বছর ধরে নিজেকে আওয়ামী লীগের নেতা পরিচয় দিত, ৫ আগস্টের পর থেকে নিজেকে বিএনপির লোক বলে পরিচয় দিতে শুরু করে। তবে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির কোনো কমিটিতে তার পদ নেই।’
উল্লেখ্য, কুমিল্লার মুরাদনগরে নারীকে ধর্ষণের ঘটনার মূল আসামিসহ ভিকটিমের ভিডিও ধারণ করে সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে জড়িত মোট ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রোববার (২৯ জুন) ভোর ৫টার দিকে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে মূল আসামি ফজর আলীকে গ্রেপ্তার করা হয়।
এর আগে রাতভর অভিযান চালিয়ে ওই নারীকে মারধর ও নগ্ন ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার অভিযোগে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
গ্রেপ্তাররা হলেন- একই এলাকার আবদুল হান্নানের ছেলে সুমন, জাফর আলীর ছেলে রমজান, মো. আলমের ছেলে মো. আরিফ ও তালেম হোসেনের ছেলে মো. অনিক।
কুমিল্লা জেলা পুলিশ সুপার নাজির আহমেদ খান বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, এ ঘটনার মূলহোতা ফজর আলীকে সায়েদাবাদ থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার অপরাধে আরও ৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
আপনার মতামত লিখুন :