পিরোজপুরের স্বরূপকাঠি উপজেলার জলাবাড়ি ইউনিয়নে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে একটি নির্মাণাধীন ব্রিজে ত্রুটি থাকায় ভেঙে নতুন করে নির্মাণে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দিয়েছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)।
বর্তমানে ব্রিজ ভাঙার কাজ শুরু হওয়ায় ওই এলাকার ১০টি গ্রামের কয়েক হাজার মানুষের যাতায়াত বন্ধ রয়েছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে তারা।
উপজেলা এলজিইডি অফিস সূত্র জানায়, ২০২১ সালের ২৯ ডিসেম্বর উপজেলার জলাবাড়ী ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের পূর্ব জলাবাড়ী খ্রিষ্টানবাড়ী থেকে মাদ্রা বাজার সড়কের ওপর একটি প্যাকেজে দুটি ব্রিজ নির্মাণের কার্যাদেশ দেয় এলজিইডি। ওই সড়কের ভাদুরা খালের ওপর ২২ মিটার ও মাদ্রা ভাড়ানি খালের ওপর ১৫ মিটার দৈর্ঘ্যের গার্ডার ব্রিজ দুটি নির্মাণের জন্য ভাণ্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইফতি ইটিসিএল কার্যাদেশ পায়। নির্মাণের চুক্তিমূল্য ছিল ৫ কোটি ৭৩ লাখ ৫৭ হাজার টাকা। ব্রিজ দুটির নির্মাণকাজ ২০২২ সালের ২৮ ডিসেম্বর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে ব্রিজ দুটির কাজ সমাপ্ত করেতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
গত বছর জুন মাসের দিকে ভাদুরা খালের উপর নির্মাণাধীন ব্রিজটির স্লাব ঢালাই দেওয়া হলেও ব্রিজের দুই পাশের ইনভার্টেড গার্ডার ঢালাই দেওয়া হয়নি। এতে ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ আশঙ্কা করে উপজেলা এলজিইডির পক্ষ থেকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়। পরে গত ২০ জুন প্রকল্পের পরামর্শক এলজিইডির ব্রিজ ডিজাইন ইঞ্জিনিয়ার প্রদীপ কুমার মন্ডল, সুপারভিশন ইঞ্জিনিয়ার মো. আবু জাফর স্থানীয় এলজিইডি কর্মকর্তা ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সরেজমিনে গিয়ে ব্রিজটি পরিদর্শন করেন। ব্রিজটিতে গার্ডার নির্মাণ না করায় তারা ব্রিজটিকে ঝুকিপূর্ণ ঘোষণা করেন। পরবর্তীতে এলজিইডির পক্ষ থেকে ঢালাই দেওয়া স্লাব ভেঙে নতুন করে গার্ডারসহ স্লাব ঢালাই দিয়ে ব্রিজ নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশ দেয়।
সেই নির্দেশের প্রেক্ষিতে ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান ব্রিজের স্লাব ভাঙার কাজ শুরু করেছে। স্লাব ভাঙার কারণে ওই সড়ক দিয়ে জনসাধারণ চলাচল করতে না পারায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন তারা।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ইফতি ইটিসিএল এর বিষয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠানটির মালিক ভান্ডারিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম। তিনি পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক এমপি মহিউদ্দিন মহারাজের ছোট ভাই। মিরাজ কাজটি নিজে না করে সাবঠিকাদার নুরুল হক খোকন এর মাধ্যমে কাজটি করাচ্ছেন। তারা দুই ভাই আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত থাকায় গত ০৫ আগষ্ট সরকার পরিবর্তনের পর থেকে তারা আত্মগোপনে রয়েছেন। তাই বিষয়টি নিয়ে মিরাজের সাথে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শুরু থেকেই ব্রিজটি নির্মাণে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে আসছে। বিভিন্ন সময় তারা কাজে ঠিকাদারের অনিয়মের প্রতিবাদ করেছেন। এক পর্যায়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের আপত্তির মুখে এলজিইডি তদন্ত করে ব্রিজটির ঢালাই দেওয়া অংশ ভেঙে নতুন করে নির্মাণের নির্দেশ দেয়।
এ বিষয়ে সাব-ঠিকাদার নুরুল হক খোকন বলেন, ব্রিজের স্লাবের ঢালাই শেষে সেখানকার শ্রমিকরা চলে গেলে কে বা কারা ব্রিজের জন্য দেয়া খালের বাঁধটি কেটে দিয়ে সেন্টারিং খুলে ফেলে। এতে ব্রিজটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় গার্ডার ঢালাই দেওয়া সম্ভব হয়নি। এলজিইডি থেকে বর্তমান ঢালাই স্লাবটি ভেঙে নতুন করে গার্ডারসহ ব্রিজ নির্মাণের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে স্লাব ভাঙার কাজ চলমান রয়েছে।
এ বিষয়ে এলজিইডির নেছারাবাদ উপজেলা প্রকৌশলী মো. রাইসুল ইসলাম বলেন, কার্যাদেশ অনুযায়ী গার্ডার ছাড়া স্লাব ঢালাই দেওয়ায় ব্রিজটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্রিজটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে ব্রিজটির স্লাব ভেঙে নতুন করে গার্ডারসহ নির্মাণের নির্দেশ দিয়েছে। সেই অনুযায়ী ঠিকাদার কর্তৃপক্ষ ব্রিজটির স্লাব ভাঙার কাজ শুরু করেছে।
আপনার মতামত লিখুন :