কিশোরগঞ্জের হোসেনপুরে দিন দিন কমছে পানের দাম। এতে করে লোকসানের শঙ্কায় পড়েছেন স্থানীয় চাষিরা। এ উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের চাষিরা সাধারণত অনাবাদি, আবাদি উঁচু জমিতে, বাড়ির পাশে, বিভিন্ন গাছে কিংবা বাড়ির উঠোনে পান চাষ করে থাকেন। পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন এলাকার অনেক প্রান্তিক কৃষক ও দরিদ্র পরিবার।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হোসেনপুর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভার বিভিন্ন অঞ্চলে ছোট-বড় অনেক পানের বরজ রয়েছে। এখানকার উৎপাদিত পান উপজেলার চাহিদা মিটিয়ে চলে যাচ্ছে পার্শ্ববর্তী উপজেলা ও জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।
এরই মধ্যে হোসেনপুর উপজেলায় পানপল্লীখ্যাত গোবিন্দপুর, সুরাটি, সিদলা, জাহাঙ্গীরপুর, পিতলগঞ্জ, ভরুয়া, হারেঞ্জাসহ বিভিন্ন এলাকার মানুষ পান চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন। তাদের অনেকেই শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে পান চাষ করে বদলে নিচ্ছেন নিজেদের পরিবারের ভাগ্য।
স্থানীয় গোবিন্দপুর চৌরাস্তা বাজার, সুরাটি বাজার, কালীবাজার ও দেওয়ানগঞ্জ বাজারে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, পানের বাজারে ধস নেমেছে।
চাষিরা জানান, এখানকার বাজারগুলোতে পাইকারি দরে কুড়ি হিসেবে পান বিক্রি করা হয়। ২০ বিড়া পানে হয় ১ কুড়ি। কয়েক মাস আগেও বড় সাইজের পান কুড়ি প্রতি ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা বিক্রি হতো, কিন্তু বর্তমানে তা ১ হাজার ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। মাঝারি সাইজের পান আগে কুড়ি প্রতি ৪ হাজার টাকা বিক্রি হতো, বর্তমানে তা ৮০০ টাকায় নামিয়ে আনতে হয়েছে। এছাড়া ছোট সাইজের পান যেখানে কুড়ি প্রতি ২ হাজার টাকা ছিল, এখন তা মাত্র ২০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি বছর উপজেলায় প্রায় ৩৫ হেক্টর জমিতে পানের আবাদ হয়েছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, বর্ষাকালে পানের উৎপাদন বাড়লেও দাম কমে যায়। শীত মৌসুমে পানের দাম চড়া থাকে, তখন লোকসানের কিছুটা পুষিয়ে নেওয়া সম্ভব হয়।
এদিকে পান চাষিদের দাবি, বাজারে সিন্ডিকেটের প্রভাব থাকতে পারে। বাজারে অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়লেও পানের দাম কমছে। আমরা ঋণের ফাঁদে পড়ে আর্থিক সংকটে পড়ছি।
উপজেলার ভরুয়া গ্রামের পানচাষি খাইরুল ইসলামের ১৭ শতকের পানের বরজ থেকে প্রতি বছর প্রায় দেড় লাখ টাকা আয় হতো। কিন্তু এবার পানের দাম কম থাকায় আয় ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকায় সীমাবদ্ধ থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন তিনি। খাইরুল ইসলাম আক্ষেপ করে বলেন, ‘পান চাষিদের জন্য কৃষি অফিস থেকে কোনো প্রণোদনা দেওয়া হয় না।’
তারাপাশা গ্রামের আব্দুল খালেক ৩০ শতক জমিতে পান চাষ করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার পুরনো একটি পানবরজ আছে। এটি আমাদের সংসারের প্রধান ভরসা। প্রতি বছর এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় হতো। এখন দাম না পেয়ে লোকসান গুনতে হচ্ছে।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম শাহজাহান কবির বলেন, ‘পান দীর্ঘমেয়াদি কাঁচা ফসল হওয়ায় এর দামে ওঠানামা ঘটে। বর্ষাকালে বরজে পানের উৎপাদন বেশি হয়, তাই বাজারে সরবরাহও বেশি থাকে। এ সময় দাম কিছুটা কমে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘পান একটি লাভজনক ফসল। আমরা কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ ও সহায়তা দিয়ে যাচ্ছি। বর্ষা মৌসুম শেষে পানের ন্যায্য দাম পান কৃষকরা। তখন তারা লোকসান কিছুটা পুষিয়ে নিতে পারেন।’
আপনার মতামত লিখুন :