বৃহস্পতিবার, ২১ আগস্ট, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম

বেত্রাঘাতের দায় এড়াতে শিক্ষার্থীকে চাঁদাবাজ আখ্যা প্রধান শিক্ষকের, তদন্ত কমিটি গঠন

আক্কেলপুর (জয়পুরহাট) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০২৫, ০২:৪৪ পিএম

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ।      ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুর উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় । ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

জয়পুরহাটের আক্কেলপুরে ছড়া লেখা খারাপ হওয়ায় তাছিন তালহা (০৭) নামের দ্বিতীয় শ্রেণির এক শিশুকে বেধরক পেটানোর অভিযোগ উঠেছে উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

অভিযোগের দায় এড়াতে ওই শিশু শিক্ষার্থীকে উল্টো চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে অভিভাবককে গালমন্দ করেছেন। স্থানীয় বাসিন্দা ও এলাকাবাসী এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত রোববার (১৭ আগস্ট) ওই শিক্ষার্থীর মা এবং ওই বিদ্যালয়ের ২৫ জন অভিভাবক স্বাক্ষর করে উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবরে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসনের উদ্যোগে কমিটি গঠন করা হয়।

গত সোমবার (১৮ আগস্ট) ইউএনও মনজুরুল আলম উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা ইমরান হোসেন ও জালালপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাসুদ রায়হান।

ঘটনার দিন উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তারা শিক্ষক ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলেন। এ ঘটনায় স্থানীয় বাসিন্দা এবং অভিভাবকরা অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষককে অন্যত্র বদলির দাবি জানান।

অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার অনন্তপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র তাছিন তালহা প্রতিদিনের মতো স্কুলে যায়। ওই দিন প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম ক্লাসে গিয়ে ক্লাস টেস্ট অনুশীলনের অংশ হিসেবে সবাইকে “আমাদের ছোট নদী” ছড়া লিখতে দেন। ছড়া লেখায় ছাত্র তালহা বেশ কয়েকটি বর্ণ ছোট-বড় করে লিখে শিক্ষককে জমা দেন। কিছু লেখা ছোট-বড় এবং ক্লাসে বিশৃঙ্খলা করায় তাকে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে বেধরক মারধর করেন।

এ সময় ছাত্রটির পিঠ এবং শরীরের বিভিন্ন জায়গায় মারের দাগ দেখা যায়। পরে দৈনিক সমাবেশ চলাকালীন লাইন বাঁকা হওয়ায় আবারও তালহাসহ আরও বেশ কিছু শিক্ষার্থীর হাতে কঞ্চি দিয়ে মারেন ওই প্রধান শিক্ষক। বিষয়টি সে বাড়িতে এসে মাকে জানালে তার মা মারধরের কারণ জানতে স্কুলের ওই শিক্ষকের কাছে যান। এ সময় গ্রামবাসীর উপস্থিতিতে তাকে ও তার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালিগালাজ করেন ওই শিক্ষক। এর পর থেকে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। ছাত্রকে মারধরের অভিযোগ থেকে মুক্ত হতে তিনি শিশু ছাত্রকে চাঁদাবাজ বানানোর চেষ্টা করছেন বলে স্থানীয়রা জানান।

শিশুটির মা তাসলিমা আক্তার শাপলা বলেন, আমার ছেলে ওই দিন দুপুরে বাড়িতে এসে কান্না করতে করতে আমাকে মারধরের বিষয়টি জানায়। পরে আমি ওই শিক্ষকের কাছে মারধরের কারণ জানতে গেলে তিনি আমাকে বলেন, আপনার ছেলে আমার কাছে এক মাস আগে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করেছিল।

তার উপর লেখা খারাপ করেছে বলে, আমাকে ও আমার ছেলেকে চাঁদাবাজ আখ্যা দিয়ে গালিগালাজ করেছেন। দ্বিতীয় শ্রেণির একজন ছাত্র কিভাবে চাঁদা চাইতে পারে? ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রভাবিত করতে আমার ছেলের বিরুদ্ধে চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ওই শিক্ষক। তদন্ত কমিটি থেকে বুধবার (২০ আগস্ট) একটি নোটিশ পেয়েছি।

নোটিশে আগামী (২৫ আগস্ট) ঘটনাস্থলে প্রমাণসহ উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। আমি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী তাছিন তালহা রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, আমাদেরকে ছোট নদী ছড়া লিখতে দিয়েছিলেন। আমি লিখতে ভুল হওয়ায় ও আবার লাইনে স্থির হয়ে দাঁড়াতে পারছিলাম না, সেজন্য আমায় মারধর করেন। আমি এসে আমুকে নিয়ে স্কুলে গেলে স্যার আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করেন-আমি নাকি চাঁদা চেয়েছি।

স্থানীয় বাসিন্দা মোঃ জালাল মন্ডল বলেন, প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করেন। সামান্য ভুলেও বাচ্চাদের পেটান, সমাবেশে লাইন বাঁকা হলেও ছাড় দেন না। এমনকি প্রশংসাপত্র দিতে নিয়মবহির্ভূতভাবে টাকা নেন। তার এই আচরণে স্কুলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমছে। দ্বিতীয় শ্রেণির শিশু চাঁদা চাইবে এটা অবিশ্বাস্য। আমার নাতনীও এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। মাঝে মধ্যে এই শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। তাকে আমরা এই স্কুলে দেখতে চাই না।

ওই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী অথৈ বলেন, প্রধান শিক্ষক কারণে-অকারণে আমাদেরকে মারধর করেন। সেদিন দৈনিক সমাবেশে জাতীয় সঙ্গীত পাঠের সময় এক শিক্ষার্থী আটকে গিয়েছিল, সেজন্য সকল শিক্ষার্থীকে মারধর করেছেন। লেখায় একটু-আকটু ভুল হলেও মারধর করেন।

বিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থী আব্দুর রউফ বলেন, ওই শিক্ষক ইতিপূর্বে চিয়ারীগ্রাম প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি ও তেমারিয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে এক শিক্ষার্থীকে চিপ টেনে নির্যাতনের অভিযোগে তাকে বদলিও করা হয়েছিল। ওই প্রধান শিক্ষক কোমলমতি শিশুদের সাথে প্রায় সময় খারাপ আচরণ করেন।

অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, মাস খানেক আগে ওই ছাত্র আমার কাছে এসে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করেছিল। সেদিন ক্লাসে হট্টগোল করায় ক্লাস নিয়ন্ত্রণ করতে মেরেছি। এটা আমার ঠিক হয়নি। প্রশংসাপত্র কম্পিউটার থেকে তৈরি করতে খরচ হয়। তাই অল্প পরিমাণে আদায় করি। কিন্তু এর কোনো রশিদ দেওয়া হয় না। তবে সবার কাছেই নেই না।

দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র চাঁদা চেয়েছে বিষয়টি বিশ্বাসযোগ্য কি না-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ৫০ হাজার টাকা জরিমানা দাবি করে। টাকা না দিলে এই স্কুলে চাকুরি করতে পারবেন না।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ইতোমধ্যে বিষয়টি নিয়ে আমরা অবগত হয়েছি। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট শিক্ষার্থীর অভিভাবক একটি অভিযোগ দিয়েছেন। উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার মনজুরুল আলম রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমের মাধ্যমে বিষয়টি জানতে পারি। দ্বিতীয় শ্রেণির এক ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় ছাত্রটির মা একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। একজন দ্বিতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী চাঁদা দাবি করতে পারে এটা আমার বোধগম্য নয়।

মারধর ও চাঁদার বিষয়টি আমলে নিয়ে উপজেলা একাডেমিক সুপারভাইজার মীর মোহাম্মদ আলীকে আহ্বায়ক করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে এবং সাত কর্মদিবসের মধ্যে তদন্তের রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!