সরকারি অর্থায়নে বাস্তবায়িত একটি গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো প্রকল্প বর্তমানে জনগণের ভোগান্তির প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। বরগুনার বেতাগী ও পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জ সীমান্তে সাড়ে ছয় কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত একটি সেতু গত দুই বছর ধরে সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্যবহারের অযোগ্য অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
জাপানি দাতা সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ৬ কোটি ৩২ লাখ ৯৩ হাজার ৪৩৭ টাকা ব্যয়ে নির্মিত হয় এই গার্ডার সেতু। ২০২১-২২ অর্থবছরে জলিশাবাজার সংলগ্ন বেড়েরধন নদীর ওপর সেতুটি নির্মাণের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। কাজটি পায় ‘এনায়েত এন্টারপ্রাইজ’ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তবে নির্মাণকাজ শুরু হওয়ার দুই বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো অ্যাপ্রোচ সড়ক তৈরি হয়নি, ফলে সেতুটি পরিণত হয়েছে ‘শূন্যে ঝুলন্ত এক স্থাপনায়’।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুটি মূল সড়ক থেকে প্রায় ১৩ ফুট উঁচুতে নির্মিত, যার এক প্রান্ত গিয়ে ঠেকেছে একটি বাড়ির ছাদের সঙ্গে। এমন পরিকল্পনাহীন নির্মাণ প্রকল্পটি শুধু অর্থের অপচয় নয়, বরং প্রকৌশলগত অব্যবস্থাপনারও প্রকট উদাহরণ।
সেতুটি ব্যবহার অনুপযোগী থাকায় স্থানীয় বাসিন্দারা এখনো ঝুঁকিপূর্ণ একটি পুরোনো কাঠের সাঁকো ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন। ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী এমনকি রোগীবাহী যানবাহনও এই পথ দিয়ে চলাচল করতে পারছে না।
স্থানীয় বাসিন্দা জামাল মিয়া ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘এই ব্রিজ আমাদের কোনো কাজে আসছে না, শুধু কাগজে-কলমে আছে। বরং এটা এখন এলাকার হাস্যরসের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।’
স্কুলছাত্রীদের অভিযোগ, প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ সাঁকো পার হতে গিয়ে তাদের দুর্ঘটনার শঙ্কায় থাকতে হয়।
এ বিষয়ে হোসনাবাদ ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন ফরাজী বলেন, ‘প্রয়োজনীয় এই সেতু অকেজো হয়ে পড়ে থাকা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা একাধিকবার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি, তবুও কোনো অগ্রগতি হয়নি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মির্জাগঞ্জ উপজেলা এলজিইডির সহকারী প্রকৌশলী চন্দন কুমার চক্রবর্তী জানান, ‘নির্মাণকাজের মেয়াদ শেষ হয়েছে। ঠিকাদারকে মেয়াদ বাড়ানোর জন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে। বর্ষা শেষে আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অ্যাপ্রোচ সড়কের কাজ শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে।’
তবে দুই বছর ধরে কাজ ফেলে রাখা ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, কিংবা তাদের গাফিলতির কারণে প্রকল্পের ব্যয় বাড়বে কি না, সে বিষয়ে এলজিইডি কোনো সুস্পষ্ট উত্তর দিতে পারেনি।
এ অবস্থায় স্থানীয়দের প্রশ্ন- জনগণের অর্থের এই অপচয়ের দায় কে নেবে? আর কতকাল একটি শূন্যে ঝুলে থাকা সেতুর বোঝা বইবে এলাকাবাসী?
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন