তেঁতুলিয়া ও বুড়ো গৌরাঙ্গ বুকজুড়ে সুনসান নীরবতা। নদীর ঢেউয়ে ভেসে আসে এক অচেনা শব্দ, ড্রোনের ঘূর্ণনধ্বনি। পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলা প্রশাসন ও মৎস্য কর্মকর্তারা ঘাটে দাঁড়িয়ে মনিটরে নজর রাখছেন। আকাশে উড়ছে ড্রোন, নিচে নদীতে নৌকা-ট্রলারের চলাচল ধরা পড়ছে একে একে।
মা ইলিশ রক্ষার অভিযান এখন প্রযুক্তিনির্ভর। কিন্তু নদীর বাস্তবতা ততটা সহজ নয়। কখনো অন্ধকার, কখনো প্রতিরোধে ভরা। রাত নামলেই শুরু হয় ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া। নিষিদ্ধ জাল টেনে মাছ ধরার চেষ্টা করেন কিছু জেলে। কোথাও জাল পুড়িয়ে দেওয়া হয়, কোথাও আটক হয় ট্রলার। সব মিলিয়ে মা ইলিশ রক্ষার এই অভিযান এখন যেন বুকে এক ‘অদৃশ্য যুদ্ধের ময়দান’।
জানা যায়, ড্রোনের পাশাপাশি চলছে স্থল অভিযানও। বাজারে কোথাও ইলিশ বিক্রি হচ্ছে কি না, কেউ জাল মজুত করছে কি না? এসব নজরে রাখছে প্রশাসন। কারণ ইলিশ শিকার শুধু বন্ধ নয়, পরিবহন ও মজুতও বেআইনি। তেঁতুলিয়া ও বুড়ো গৌরাঙ্গ নদীর তীরের মাছঘাটগুলোতে।
উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পরভেজ বলেন, ড্রোন ব্যবহারে অল্প সময়েই অসাধু জেলেদের শনাক্ত করা যাচ্ছে। নদীর পারে বা নৌকায় নামলেই তাদের গতিবিধি ধরা পড়ে। এতে দ্রুত আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সীমিত জনবল নিয়েও আমরা এখন কার্যকরভাবে অভিযান চালাতে পারছি। ড্রোন প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা গেলে মা ইলিশ রক্ষায় সফলতা আরও বাড়বে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, কিছু প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এখনো গোপনে ইলিশ পাচার করছেন। রাতে ট্রলারে চড়ে তারা নদীপথে মাছ নিয়ে যান দূরে দূরে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিতে ব্যবহার হচ্ছে ছোট শিশুদেরও। তারা দূর থেকে সংকেত দেয় জেলেদের। কিছু ক্ষেত্রে শিশুদের দিয়েই মাছ ধরা হয়, কারণ তারা আইনগত শাস্তির আওতায় পড়ে না।
মৎস্য অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দশমিনা উপজেলায় প্রায় সাড়ে দশ হাজার ইলিশ জেলে। নিষেধাজ্ঞার সময় প্রতিজন জেলেকে ২৫ কেজি করে চাল দেওয়া হবে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা এম এম পরাভেজ জানান, প্রশাসনের সহায়তায় ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে। কোনো জেলে নদীতে অবৈধভাবে নামলে তাকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হবে।
নৌ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ ফরদাউস হোসেন বলেন, প্রযুক্তির ব্যবহারে অভিযান আরও কার্যকর হয়েছে। অসাধু জেলেদের মধ্যে এখন আতঙ্ক বিরাজ করছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরতিজা হাসান বলেন, মা ইলিশ দেশের মূল্যবান সম্পদ। সংরক্ষণের জন্য আমরা প্রযুক্তি ব্যবহারসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছি। রাতের বেলায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নদীতে টহল দেবে, আর দিনে ড্রোনের মাধ্যমে অবৈধ জেলেদের শনাক্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন