রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:০২ পিএম

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ইউএনওর লুটপাট, অনুসন্ধানে দুদক

ধুনট (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:০২ পিএম

ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত। ছবি-সংগৃহীত

ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত। ছবি-সংগৃহীত

বগুড়ার ধুনটের তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সঞ্জয় কুমার মহন্তের বিরুদ্ধে ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সাত সদস্যবিশিষ্ট অনুসন্ধান টিম গঠন করেছে। দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলামকে প্রধান করে গঠিত টিম ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে।

গত ৫ এপ্রিল একটি জাতীয় দৈনিকে ‘আশ্রয়ণ প্রকল্পে লুটপাটে ইউএনও একাই একশ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর দুদক নড়েচড়ে বসে এবং অনিয়ম-দুর্নীতির অনুসন্ধানের জন্য টিম গঠন করা হয়। অনুসন্ধান টিমের প্রধান উপ-পরিচালক মনিরুল ইসলাম গত ৭ জুলাই ধুনট উপজেলায় নির্মিত আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর সংক্রান্ত রেকর্ড ও তথ্য সরবরাহের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একটি চিঠি দেন।

চিঠিতে আশ্রয়ণ প্রকল্পের বরাদ্দপত্র, প্রকল্প গঠনপত্র, প্রকল্প কমিটির সভার রেজুলেশন, প্রকল্পের নকশা, বিল-ভাউচার, পরিমাপ বই, প্রকল্প সমাপ্তির প্রতিবেদন, নথির নোটশিট, নির্মিত ঘর বরাদ্দের আবেদন, আবেদনকারীদের তালিকা, চূড়ান্ত বরাদ্দ পাওয়া ব্যক্তিদের তালিকা ও ঘর হস্তান্তরপত্র এবং সংশ্লিষ্ট রেকর্ডপত্রের সত্যায়িত ফটোকপি চাওয়া হয়। পাশাপাশি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সব কর্মকর্তার নাম, পদবি, কর্মস্থল (সাবেক ও বর্তমান), স্থায়ী ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরও চাওয়া হয়।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ ও ২০২১-২২ অর্থবছরে ‘মুজিব বর্ষের উপহার’ হিসেবে উপজেলার ভূমিহীন ও গৃহহীনদের পুনর্বাসনের লক্ষ্যে দুর্যোগ সহনীয় বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় তিন ধাপে ৩৯৯টি ঘর নির্মাণের জন্য ৭ কোটি ৯৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়।

প্রকল্প বাস্তবায়নের সরকারি নীতিমালায় ইউএনও সভাপতি, প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা সদস্য সচিব, সহকারী কমিশনার (ভূমি), উপজেলা প্রকৌশলী (এলজিইডি) ও সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সদস্য এবং উপজেলা চেয়ারম্যানকে উপদেষ্টা রেখে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হলেও, সাবেক ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্ত একাই এসব ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দ প্রদান করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন তিনি। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ৩৯৯টি ঘরের মধ্যে ২৬১টি ঘরের বরাদ্দ তালিকা সরবরাহ করা হলেও বাকি ঘর নির্মিত হয়েছে কি না বা নির্মিত ঘরে কারা বসবাস করছেন, তার কোনো তথ্য নেই উপজেলা প্রশাসনের কাছে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, আশ্রয়ণ প্রকল্পের অধিকাংশ ঘরের দেয়ালে ফাটল ধরেছে। প্লাস্টার খসে পড়েছে এবং জানালা-দরজা ভেঙে গিয়ে সেগুলো বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ ঘরেই বছরের পর বছর তালা ঝুলছে। রাশেদা খাতুনের পাকা ঘরবাড়ি থাকা সত্ত্বেও তিনি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর বরাদ্দ নিয়ে তালা লাগিয়ে রেখেছেন। আজিজাল ফকির, লুলু মিয়া, পূর্ণিমা রানী, হামিদুল ইসলামসহ অনেকেই ঘর বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকেই সেগুলো তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। যারা ঘরে বসবাস করছেন, তাদের অনেকের নামেই কোনো দলিলপত্র নেই।

চুনিয়াপাড়া আশ্রয়ণের ঘরে বসবাসকারী মিনি খাতুন বলেন, ‘ইউএনও সঞ্জয় স্যার আমাকে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন, কিন্তু কোনো কাগজপত্র দেননি।’ চায়না খাতুন জানান, ‘সঞ্জয় স্যার পাঁচ বছর আগে ঘর বরাদ্দ দিয়েছেন, কিন্তু আমি আজও কোনো কাগজপত্র পাইনি।’ রেহানা, জুলেখা, শিউলি ও নাসিমাসহ আরও অনেকেই ঘর বরাদ্দের কোনো কাগজপত্র পাননি।

আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর নির্মাণে ইউএনও সঞ্জয় কুমার মহন্তের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগও তুলেছেন উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সদস্যরা। মথুরাপুর এলাকার এস.এস.এস ইটভাটার মালিক শাহ আলী জানান, সাবেক ইউএনও তার কাছে ৬০ হাজার ইট দাবি করেছিলেন। সে সময় ইট না থাকায় দিতে না পারায় ইউএনও ক্ষিপ্ত হয়ে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে ৫ লাখ টাকা জরিমানা করেন।

একই এলাকার জননী ইটভাটার মালিক আব্দুল আলিম বলেন, ‘তার ভাটা থেকে নেওয়া ইটের ৫০ হাজার টাকা এখনো পরিশোধ করা হয়নি।’ জোড়খালি এলাকার ইটভাটা মালিক শামসুল বারী জানান, ইউএনও তার ভাটা থেকে ইট নিয়ে ৩ লাখ টাকা পরিশোধ না করেই বদলি হয়ে যান। 

রামনগর এলাকার বালু ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম বলেন, ‘ইউএনও ১০০ ট্রাক বালু নিয়েও কোনো টাকা পরিশোধ করেননি।’ ধুনট পৌর এলাকার জিঞ্জিরতলা গ্রামের ট্রাক ব্যবসায়ী সাবেদ আলী সরকার বলেন, ‘বালু পরিবহন করেও ইউএনও ২৮ হাজার টাকার ট্রাক ভাড়া দেননি।’

আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য একটি বাস্তবায়ন কমিটি থাকলেও সাবেক ইউএনও নিজেই সব কাজ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। সাবেক প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) আব্দুল আলীম বলেন, ‘সব কাজ ইউএনও স্যার একাই করেছেন। অনেকটা চাপের মুখে শুধু টাকা উত্তোলনের জন্য কাগজপত্র ও চেকে আমাকে স্বাক্ষর দিতে হয়েছে।’ 

সাবেক উপজেলা প্রকৌশলী মনিরুল সাজ রিজন বলেন, ‘আমি প্রকল্প কমিটির সদস্য ছিলাম কি না জানি না।’

ধুনট সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান লাল মিয়া, গোপালনগর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন সরকার, চিকাশী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাকির হোসেন জুয়েল, গোসাইবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মাসুদুল হক বাচ্চু এবং মথুরাপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাসান আহম্মেদ জেমস জানান, ঘর নির্মাণ ও বরাদ্দসংক্রান্ত বিষয়ে তাদের কিছুই জানানো হয়নি।

Link copied!