যশোরের শিল্পনগর নওয়াপাড়া নৌবন্দরে নাব্য সংকটের কারণে জাহাজডুবির ঝুঁকি বাড়ছে। গত দেড় বছরে ১৫টির বেশি পণ্যবাহী জাহাজডুবির ঘটনা ঘটেছে। তারপরও পণ্য আমদানি আগের তুলনায় বেশি। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়লেও জাহাজডুবি রোধে কোনো উদ্যোগ নেই বললেই চলে।
বন্দরের পণ্যবাহী জাহাজের মালিক ও শ্রমিকরা জানান, নিয়মিত নদ খনন না করায় নৌবন্দরে ভৈরব নদের নাব্য সংকট দিন দিন প্রকট হচ্ছে। খননকাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর, আবার কোথাও মোটেও খনন করা হয়নি। দখলের কারণে ভৈরব নদ দিন দিন সরু হয়ে যাচ্ছে। অদক্ষ মাস্টাররা মূল চ্যানেলের বাইরে এসে নদের কিনারায় জাহাজগুলো নোঙর করেন। আর সময়মতো মেরামত না করায় পণ্যের অতিরিক্ত ওজনের চাপ সহ্য করতে না পেরে পুরাতন জাহাজের তলা ফেটে তা পানিতে তলিয়ে যায়।
গত ২৫ জানুয়ারি সিদ্দিপাশায় গমবোঝাই এমভি ওয়েস্টার্ন-২ কার্গো জাহাজ কাত হয়ে ডুবে যায়। এ সময় জাহাজে প্রায় ৭০০ টন গম ছিল। ৯ ফেব্রুয়ারি শুভরাড়া এলাকায় ৮৫০ টন ইউরিয়া সারবোঝাই এমভি সেভেন সিজ-৪ নামের একটি কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়।
গত বছরের ১৩ জানুয়ারি ৭০০ টন কয়লা নিয়ে এমভি মৌমনি-১ কার্গো জাহাজ তলা ফেটে ডুবে যায়। ১৫ জানুয়ারি ৮০০ টন কয়লা নিয়ে ডুবে যায় এমভি পূর্বাঞ্চল-৭। ১৩ এপ্রিল নওয়াপাড়া নোনা ঘাট এলাকায় ভৈরব নদের ঘাটে এমভি সাকিব বিভা-২ নামে একটি জাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটে। এতে ১ কোটি ১০ লাখ টাকার কয়লার ক্ষতি হয়। এ ছাড়া ১৫ ডিসেম্বর ৮২০ টন কয়লাসহ এমভি আর রাজ্জাক তলিয়ে যায়।
জাহাজের মাস্টার জুয়েল হোসেন জানান, জাহাজ থেকে ইউরিয়া নামানোর সময় ভাটায় জাহাজের তলদেশের সঙ্গে মাটিতে থাকা পাথর কিংবা শক্ত কোনো বস্তুর সজোরে আঘাত লাগে। এতে তলদেশ ফেটে জোয়ারের সময় জাহাজটি ধীরে ধীরে তলিয়ে যায়।
জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের সবচেয়ে বড় ও ব্যস্ততম নওয়াপাড়া নদীবন্দর। জাহাজডুবির ঝুঁকির মধ্যেও আমদানি বাড়ছে। গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে দুই হাজার ৫১৯টি জাহাজে পণ্য এসেছে; ১৫ লাখ ১১ হাজার ৮৪৩ টন পণ্য আমদানি হয়েছে।
এর আগে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৭ লাখ ৬ হাজার ৮১৩ টন, ২০২২-২৩ অর্থবছরে ৬ লাখ ৯২ হাজার ৩১৩ টন, ২০২১-২২ অর্থবছরে ১০ লাখ ৯০ হাজার ২২০ টন এবং ২০২০-২১ অর্থবছরে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৯২০ টন পণ্য আমদানি হয়। এতে সরকারের ৩ কোটি ৩০ লাখ ৯১ হাজার ২৪৬ টাকা রাজস্ব আয় হয়েছে।
জাহাজের এক শ্রমিক জানান, ভৈরব নদে আগের তুলনায় জাহাজের সংখ্যা বাড়লেও নোঙর করার জায়গা খুবই কম। পানি কম থাকায় দুর্ভোগে পড়তে হয়। নওয়াপাড়া নদীবন্দর সচল ও নিরাপদ রাখতে নিয়মিত নদী খনন ও নিরাপদ জেটি নির্মাণের দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ নেই।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের নওয়াপাড়া শাখার সদস্যসচিব নিয়ামুল ইসলাম রিকো জানান, নওয়াপাড়ায় ভৈরব নদের নাব্য সংকট প্রকট। দখলে নদ সরু হয়ে আসছে। খননকাজ সুষম বা ধারাবাহিকভাবে করা হয় না। কোথাও গভীর, আবার কোথাও মোটেও খনন করা হয় না। যে কারণে ঘন ঘন জাহাজ ডুবছে।
নওয়াপাড়া সার ও খাদ্যশস্য ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক শাহ জালাল হোসেন জানান, ভৈরব নদকে ঘিরে নওয়াপাড়ার ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটেছে। প্রতিবছর এখন পণ্য আমদানি বাড়ছে। আমরা ঠিকমতো ট্যাক্স দিচ্ছি, কিন্তু নদীবন্দরের কোনো উন্নয়ন হচ্ছে না। এখানে ছোট জাহাজ এলেও ঘাটে ভিড়তে পারে না। এ জন্য আমরা গাইড ওয়াল নির্মাণের দাবি করেছিলাম, কিন্তু তা করা হয়নি।
নওয়াপাড়া নদীবন্দরের উপপরিচালক মাসুদ পারভেজ জানান, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে তার আগের বছরের তুলনায় দ্বিগুণ পরিমাণ পণ্য এসেছে। ব্যবসায়ীদের সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। অদক্ষ মাস্টার-ড্রাইভারের অনিয়ম ও অতিরিক্ত পণ্যের চাপে ভাটায় এসব জাহাজ দুর্ঘটনায় পড়ছে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন