তৃতীয় বিশ্বথেকে অভিবাসন
স্থায়ীভাবে বন্ধ করবে যুক্তরাষ্ট্র
ক্স তৃতীয় বিশে^র দেশ এবং স্থায়ীভাবে স্থগিত করা বলতে কী বুঝিয়েছেন, তা স্পষ্ট করেননি ট্রাম্প
ক্স অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসলেন আরও ৩৯ বাংলাদেশি
রূপালী ডেস্ক
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্থানীয় সময় গত বৃহস্পতিবার বলেছেন, তার প্রশাসন সব তৃতীয় বিশে^র দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করার পরিকল্পনা করেছে। তার দাবি, এতে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ ব্যবস্থা পুনরুদ্ধার হওয়ার সময় পাবে। বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন থেকে এ তথ্য জানা গেছে।
ট্রাম্প কোনো নির্দিষ্ট দেশ বা দেশগুলোর নাম উল্লেখ করেননি। এমনকি তৃতীয় বিশে^র দেশ এবং স্থায়ীভাবে স্থগিত করা বলতে ঠিক কী বোঝাচ্ছেনÑ সে বিষয়েও কিছু বলেননি। ট্রাম্প জানান, এই পরিকল্পনার আওতায় সাবেক প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় অনুমোদিত মামলাগুলোও থাকবে।
ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে লিখেছেন, ‘আমি সব তৃতীয় বিশে^র দেশ থেকে অভিবাসন স্থায়ীভাবে স্থগিত করব, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থা পুরোপুরি পুনরুদ্ধারের সুযোগ পায়। বাইডেনের আমলে হওয়া অবৈধ লক্ষাধিক অনুমোদন বাতিল করব। স্লিপি জো বাইডেনের অটোপেন দিয়ে সই করা অনুমোদনও এর বাইরে নয়। আর যারা যুক্তরাষ্ট্রের নেট সম্পদ নয়, তাদের সবাইকে সরিয়ে দেব।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেন, তিনি নাগরিক নয় এমন যে কারও জন্য সব ফেডারেল সুবিধা ও ভর্তুকি বন্ধ করে দেবেন। তিনি যারা দেশের অভ্যন্তরীণ শান্তি নষ্ট করে এমন অভিবাসীদের নাগরিকত্ব বাতিল করার কথাও বলেন। আর যে কোনো বিদেশি, যাকে সরকারি বোঝা, নিরাপত্তা ঝুঁকি বা পাশ্চাত্য সভ্যতার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ বলে মনে হবে, তাকে বহিষ্কার করা হবে বলেও হুমকি দেন তিনি।
আফগানিস্তান থেকে যাওয়া এক অভিবাসীর গুলিতে মার্কিন ন্যাশনাল গার্ডের ২ সদস্য আহত হওয়ার ঘটনার পর ট্রাম্প এই মন্তব্য করলেন। ওয়াশিংটনের হোয়াইট হাউসের কাছে গুলিতে এরই মধ্যে একজন নিহত হয়েছেন। অপরজন চিকিৎসাধীন।
এর আগে মার্কিন স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা দপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছিলেন, ট্রাম্প বাইডেন প্রশাসনের সময়ে অনুমোদিত আশ্রয় আবেদন ও ১৯টি দেশের নাগরিকদের দেওয়া গ্রিনকার্ড পুনরায় পর্যালোচনার নির্দেশ দিয়েছেন।
রয়টার্সের দেখা এক সরকারি নথিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত বন্দুকধারীকে চলতি বছরই ট্রাম্পের প্রশাসন আশ্রয় দিয়েছিল। মার্কিন সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিস গত বুধবার জানায়, আফগান নাগরিকদের সংশ্লিষ্ট সব অভিবাসন আবেদন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত করা হয়েছে। ট্রাম্প বলেন, ‘এই লক্ষ্যগুলো অর্জন করা হবে অবৈধ ও অস্থিতিশীল জনসংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমানোর উদ্দেশ্যে।’
ট্রুথ সোশ্যালে ট্রাম্পের পোস্টের আগে যুক্তরাষ্ট্রের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলেছিলেন, বাইডেন প্রশাসনের আমলে শরণার্থী মর্যাদা পাওয়া ব্যক্তি ও গ্রিনকার্ড পাওয়া ১৯ দেশের নাগরিকদের বিস্তৃত যাচাই-বাছাইয়ের আওতায় আনতে ট্রাম্প নির্দেশ দিয়েছেন।
সন্দেহভাজন যে বন্দুকধারী ওয়াশিংটন ডিসিতে ন্যাশনাল গার্ডের ওপর হামলায় জড়িত, তিনি চলতি বছর ট্রাম্প প্রশাসনের অধীনেই যুক্তরাষ্ট্রে শরণার্থী মর্যাদা পেয়েছেন বলে মার্কিন সরকারি নথিতে দেখা যাচ্ছে। রয়টার্স ওই নথি দেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত আসলো আরও ৩৯ বাংলাদেশি: অবৈধভাবে বসবাসের অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র থেকে আরও ৩৯ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গতকাল শুক্রবার ভোর সাড়ে ৫টায় যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশেষ সামরিক ফ্লাইটে এই ৩৯ বাংলাদেশি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান। পরে দেশে ফেরত কর্মীদের ব্র্যাকের পক্ষ থেকে পরিবহন সহায়তাসহ জরুরি সহায়তা প্রদান করা হয়। ফেরত আসা এই কর্মীদের মধ্যে ২৬ জনই নোয়াখালীর। এছাড়া কুমিল্লা, সিলেট, ফেনী ও লক্ষ্মীপুরের দুজন করে এবং চট্টগ্রাম, গাজীপুর, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ এবং নরসিংদীর একজন করে রয়েছেন। এর আগে চলতি বছরে ১৮৭ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রশাসন।
২০২৪ সালের শুরু থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো বাংলাদেশির সংখ্যা ২২০ ছাড়িয়েছে। এর আগে চলতি বছরের ৮ জুন একটি চার্টার্ড ফ্লাইটে ৪২ বাংলাদেশিকে ফিরিয়ে আনা হয়েছিল এবং ৬ মার্চ থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত একাধিক ফ্লাইটে আরও অন্তত ৩৪ বাংলাদেশিকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল।
মার্কিন আইন অনুযায়ী, বৈধ কাগজপত্র ছাড়া অবস্থানকারী অভিবাসীদের আদালতের রায় বা প্রশাসনিক আদেশে দেশে ফেরত পাঠানো যায়। আশ্রয়ের আবেদন ব্যর্থ হলে অভিবাসন কর্তৃপক্ষ (আইসিই) তাদের প্রত্যাবাসনের ব্যবস্থা করে।
দেশে ফেরত আসা কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে ব্র্যাকের মাইগ্রেশন প্রোগ্রাম জানিয়েছে, এই ৩৯ জনের মধ্যে অন্তত ৩৪ জন জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) ছাড়পত্র নিয়ে ব্রাজিল গিয়েছিলেন। এরপর সেখান থেকে মেক্সিকো হয়ে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। আর বাকি পাঁচজনের মধ্যে দুইজন সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রে যান আর তিনজন দক্ষিণ আফ্রিকা হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। এরপর এই ৩৯ জন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসের জন্য আবেদন করলে আইনি প্রক্রিয়া শেষে তাদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।
ব্র্যাকের সহযোগী পরিচালক (মাইগ্রেশন ও ইয়ুথ প্ল্যাটফর্ম) শরিফুল হাসান বলেন, ‘এই যে সরকারের পক্ষ থেকে ব্রাজিলে বৈধভাবে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়া হলো সেক্ষেত্রে তারা ব্রাজিল না যুক্তরাষ্ট্রে যাচ্ছেন সেটি নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সরকার বা এজেন্সির কি কোনো সতর্কতা বা কৌশল ছিল? এই যে একেকজন ৩০ থেকে ৩৫ লাখ টাকা খরচ করে শূন্য হাতে ফিরলেন তার দায় কার? এভাবে বৈধভাবে অবৈধ হওয়ার পথে ছেড়ে দেওয়া ভীষণ দুর্ভাগ্যজনক এবং দায়িত্বহীনতা। যে এজেন্সি তাদের পাঠিয়েছিল এবং যারা এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় ছিল তাদের জবাবদিহির আওতায় আনা উচিত। কয়েক হাজার কর্মী এভাবে ব্রাজিল গেছে। নতুন করে ব্রাজিলে কর্মী পাঠানোর অনুমতি দেওয়ার আগে সরকারকে সতর্ক হতে হবে।’
ফেরত আসা এসব বাংলাদেশি ও বিমানবন্দর সূত্রে জানা গেছে, এর আগে চলতি বছরের বিভিন্ন সময়ে ফেরত আসা বাংলাদেশিদের হাতে হাতকড়া, পায়ে শেকল বেঁধে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফেরত পাঠানো হলেও গতকাল ফেরত আসাদের ক্ষেত্রে সেটি হয়নি।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন