রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু), হল সংসদ ও সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি নির্বাচনের সময় বাকি মাত্র চারদিন। নির্বাচনকে ঘিরে শেষ মুহূর্তের প্রচার-প্রচারণা চালাচ্ছেন প্রার্থীরা। নির্বাচন কমিশনও নিচ্ছে শেষ সময়ের প্রস্ততি। আজ বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে পোলিং এজেন্টদের সঙ্গে আলোচনাসভা করেছেন তারা। সভায় পোলিং এজেন্টদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেয় কমিশন।
এসময় ভোট প্রদান প্রক্রিয়া, ফলাফল তৈরির প্রক্রিয়া, নির্বাচনী আচরণবিধি, নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন বিষয়ে উঠে আসে।
যেভাবে ভোট দেবেন ভোটাররা
সভায় নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক মোস্তফা কামাল আকন্দ জানান, একজন প্রার্থীর ভোট দেওয়ার জন্য কেন্দ্রে প্রবেশ করে পোলিং অফিসারের থেকে তালিকায় স্বাক্ষর করে ভিন্ন রংয়ের ৬টি ব্যালট পেপার সংগ্রহ করতে হবে। পরে গোপন বুথে যেয়ে তা পুরণ করবেন।
এতে প্রথম ব্যালট পেপারে থাকবে সহসভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও সহ-সাধারণ সম্পাদক, দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ ব্যালটে থাকবে বিভিন্ন সম্পাদকীয়, পঞ্চম ব্যালটে থাকবে সিনেটে ছাত্র প্রতিনিধি ও সবশেষে ষষ্ঠ ব্যালটে থাকবে হল সংসদের প্রার্থীদের তালিকা। ভিন্ন রংয়ের ব্যালট গোপন বুথে পূরণ শেষে ভোটারদের ভিন্ন ভিন্ন রংয়ের স্বচ্ছ ব্যালট বাক্সে রাখতে হবে।
প্রতি ভোটার ভোট দিতে সময় পাবেন ১০ মিনিট করে। সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত লাইনে অংশগ্রহণকারী ভোটাররা ভোট দিতে পারবেন।
কাগজ নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন কেন্দ্রে
ভোট প্রদান করতে ভোট কেন্দ্রে ভোটাররা প্রার্থীর নাম লিখে নিয়ে যেতে পারবেন। প্রার্থীরাও তাদের প্যানেলের তালিকা ভোটারদের দিতে পারবেন। এ বিষয়ে এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘আমরা ডাকসু ও জাকসুতে ভোটারদের প্যানেলের তালিকা দেওয়ার বিষয়ে অনেক অভিযোগ দেখেছি। এ বিষয়ে আমরা নির্বাচন কমিশনে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছি সকল প্রার্থী ও প্যানেল তাদের প্যানেলের তালিকা ভোটরদের দিতে পারবেন। কারণ, আমরা দেখেছিন একজন ভোটারের পক্ষে এক সঙ্গে ৪১ জন প্রার্থীর নাম মনে রাখা সম্ভব না। ভোটার যেন কোনো ডিজিটাল ডিভাইস ব্যবহার না করেন এজন্যই আমরা কাগজ নিয়ে প্রবেশের সুযোগ রাখছি।’
ফলাফল পাবেন ১৬ ঘণ্টার ভেতরে
সভায় নির্বাচন কমিশনার জানান, নির্বাচনের ভোট গ্রহণ চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। এর পরে সকল কেন্দ্রের ব্যালট পেপার নিয়ে আসা হবে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে। ভিন্ন ভিন্ন বাক্সের ব্যালট বের করে ১০০টি করে আলাদা আলাদা বান্ডেল করা হবে। প্রতিটি বান্ডেল ওএমআর মেশিনে দিয়ে গণনা করা হবে। এ ছাড়াও বিশেষজ্ঞ প্যানেল আধুনিক এ ফলাফল পর্যবেক্ষণ করবেন। সর্বমোট তিনটি ধাপে চূড়ান্ত ফলাফল তৈরি হবে। এভাবে একটি হলের ফলাফল তৈরি হলে অন্য হলেরটা শুরু হবে। ১৭টি সকল ফলাফলের কাজ সম্পন্ন হতে ১৪ থেকে ১৬ ঘণ্টা লাগতে পারে।
ভোটকেন্দ্রে থাকবে সিসিটিভি, ফলাফল দেখানো হবে সরাসরি
নির্বাচন কমিশনার বলেন, আমাদের ১৭টি হলে জন্য ১৭টি কেন্দ্রে ৯০০ এর অধিক বুথে ভোট গ্রহণ হবে। ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তার জন্য কেন্দ্রের ৪০০ গজের একটি বলয় করে চৌহদ্দি নির্মাণ করা হবে। এর ভেতর কোনো প্রার্থী প্রবেশ করতে এবং প্রচারণা চালাতে পারবেন না। প্রতিটি কেন্দ্র থাকবে সম্পূর্ণ সিসিটিভির আওতাভুক্ত।
ভোট গ্রহণ শেষে কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে ভোট গণনা করা হবে। এখানে সাংবাদিকরা তাদের সম্প্রচার করতে পারবেন। এ ছাড়াও ভোট গণনার সকল প্রক্রিয়া মিলনায়তনের সামনে বড় স্ক্রিনে দেখানো হবে।
কেন্দ্রের ৪০০ গজের ভেতর প্রবেশ করতে পারবেন না প্রার্থীরা
ভোট কেন্দ্রের নিরাপত্তা ও শৃঙ্খলা রক্ষার্থে কেন্দ্রের ৪০০ গজের একটি চৌহদ্দি করা হবে। এর ভেতরে কোনো প্রার্থী প্রচার চালাতে ও প্রবেশ করতে পারবেন না। এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক আকন্দ বলেন, ভোট কেন্দ্রে শৃঙ্খলা রক্ষার্থে যে ৪০০ গজের চৌহদ্দি নির্মাণ করা হবে এর ভেতর কোনো প্রার্থী প্রবেশ করতে ও প্রচারণা চালাতে পারবেন না। এ ছাড়াও প্রার্থীরা ভোটারদের যে প্রার্থী তালিকা দেবেন সেটা নির্বাচনী প্রচারণা শেষ হওয়ার পরে না দেওয়ায় নিরুৎসাহিত করা হলো।
এ ছাড়াও নির্বাচনী নিরাপত্তায় পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সহায়তা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন এই নির্বাচন কমিশনার। তিনি বলেন, আমরা আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে শিক্ষার্থীদের মুখোমুখি করাতে চাই না। আমাদের নিরাপত্তায় পুলিশ সার্বক্ষণিক কাজ করবেন। এ ছাড়াও বিশেষ প্রয়োজনে সেনাবাহিনী ও বিজিবিও কাজ করতে পারে।
এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক সালেহ হাসান নকীব বলেন, আমরা খুবই আশাবাদী এবং নির্বাচনী পরিবেশও অত্যন্ত সুন্দর। ভালো লাগছে এটা দেখে যে প্রতিদ্বন্দিতার পাশাপাশি শিক্ষার্থীরা বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রেখেই প্রচারণা চালাচ্ছে। টুকটাক যে দু-একটা ব্যত্যয় ঘটছে না তা-না, তবে বড় কোনো ঘটনা এখনো ঘটেনি। সিন্ডিকেট থেকে যে নির্বাচন কমিশন করে দিওয়া হয়েছে সেটা অত্যন্ত শক্তিশালী, তারা এখনো পর্যন্ত ধৈর্য রেখে কাজ করছেন। এটা যারা উপলব্ধি করতে পারছেন না তারা শিগগিরই বুঝতে পারবেন। রির্বাচন কমিশন নানারকম অপপ্রচার, খারাপ কথা হজম করেছেন শুধু শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে।
তিনি আরও বলেন, আচরণবিধির বিষয়টা সকলের খেয়াল রাখা উচিত। এখানে সবাই সচেতন নাগরিক, সুতরাং বারবার এই কথাটা বলতেও খারাপ লাগে। আরেকটা বিষয় হচ্ছে রাকসু প্রয়োজন কোথায় সেটা আমদের বুঝতে হবে। আগে শিক্ষার্থীদেরকে নেতাদের গুনে চলতে হতো কিন্তু রাকসু হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আর নেতাদের গুনে চলতে হবে না।
এ সময় আরও বক্তব্য রাখেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মো. মাঈন উদ্দিন, অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন খান, রাকসুর প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক এফ নজরুল ইসলাম, কোষাধ্যাক্ষ অধ্যাপক সেতাউর রহমান। সভায় নির্বাচন পরিচানায় নিয়োজিত রিটার্নিং কর্মকর্তা, পোলিং অফিসার, পোলিং এজেন্ট ও প্রার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন