রবিবার, ১২ অক্টোবর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

শেরপুরে ‘দখল’ ভয়ে নিদ্রাহীন ৪০ পরিবার

শেরপুর (বগুড়া) প্রতিনিধি

প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০২৫, ০২:১৩ পিএম

পুকুর দখল বিরোধ-সংঘর্ষ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

পুকুর দখল বিরোধ-সংঘর্ষ। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

বগুড়ার শেরপুর উপজেলার শাহবন্দেগী ইউনিয়নের কদিমুকুন্দ মৌজার বাগমারা গ্রামের হাটদীঘি পুকুরপাড়ে রাত নামলেই নেমে আসে আতঙ্ক। গত তিন মাস ধরে এই পুকুরপাড়ে বসবাসরত অন্তত ৪০টি পরিবার প্রতিদিন রাত কাটাচ্ছে ভয় ও উৎকণ্ঠায়। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংঘর্ষ, হামলা ও মামলার আতঙ্কে হয়ে উঠেছে তাদের জীবন। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারছে না, কর্মজীবীদের জীবনযাপনে এসেছে স্থবিরতা।

গভীর রাতে অচেনা লোকজন বসতবাড়ির পাশে অস্ত্র নিয়ে ঘোরাফেরা করে, জানালা দিয়ে টর্চলাইটের আলো ফেলে এবং নোংরা ভাষায় গালিগালাজ করে। নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই এই পরিস্থিতিতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনযাপন করছেন। এলাকার শান্তি ও নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছেন তারা।

হাটদীঘি পুকুরের মোট আয়তন ১১ একর ১৬ শতক। সিরাজগঞ্জ ও পাবনা জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে নদীভাঙনের শিকার প্রায় ৪০টি পরিবার ৩৭ বছর ধরে পুকুর পাড়ে বসবাস কর আসছে। এই পুকুরের মলিক স্থানীয় শিক্ষক সুরেন্দ্র নাথ মাহাতো। তারা এতদিন পুকুরটি লিজ দিতেন। তার মৃত্যুর পর ছেলে সুভাষ চন্দ্র মাহাতো পুকুরে মাছ চাষ শুরু করলে নতুন উত্তেজনা দেখা দেয়। 

পুকুরের মালিকের সাথে কথা বলে জানা যায়, পার্শ্ববর্তী ঘোলাগাড়ি গ্রামের জাবির হোসেন ও খন্দকার টোলা এলাকার স্থানীয় বিএনপির রাজনীতির সমর্থক আরিফ হোসেন, লিটন মুন্সী ও শফি মির্জা সুভাষ চন্দ্র মাহাতোকে পুকুর লিজ নেওয়ার প্রস্তাব দেন। সুভাষ রাজি না হওয়ায় ৯ অক্টোবর তারা পুকুর পাড়ের কিছু লোক ও সন্ত্রাসীদের নিয়ে জোরপূর্বক পুকুর দখলের চেষ্টা করেন। এর ফলে উভয় পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হয়, যেখানে ১৩ জন আহত হন। এছাড়া ৩ অক্টোবর রাতে বসতঘরে অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষই কয়েকটি মামলা দায়ের করেছে।

পুকুরপাড়ের নারী বাসিন্দা মনোয়ারা বেগম, মঞ্জিলা বেগম, গুলবানু বেগমসহ আরও কয়েকজন জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে এই পুকুর পাড়ে শান্তিতে বসবাস করছিলেন। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তারা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। গভীর রাতে অস্ত্র হাতে অচেনা লোকজন ঘোরাফেরা করে। ফলে রাতভর তারা এক ঘরে জড়ো হয়ে জেগে থাকেন। পুকুরের মালিক তাদের উচ্ছেদ করার জন্য এই আতংকের পরিবেশ তৈরি করেছেন বলে তারা মনে করছেন।

স্থানীয় মনির হোসেন বলেন, ‘গত ৩ অক্টোবর রাতে আমার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় আমার স্ত্রীর প্রাণে বেঁচেছে।’

স্থানীয়রা জানান, পুকুরপাড়ে যাওয়ার রাস্তা খুব সরু হওয়ায় পুলিশ দ্রুত পৌঁছাতে পারছে না। ফলে সন্ত্রাসীরা নিরাপদে মহড়া দিতে পারছে। পুকুরপাড়ের বাসিন্দাদের অধিকাংশই ভূমিহীন। তারা চাইছে শুধু নিশ্চিন্তে ঘুমানোর পরিবেশ।

সুভাষ চন্দ্র মাহাতো বলেন, ‘এই পুকুর ও পাড় আমাদের পারিবারিক সম্পত্তি। লিজ নিতে ব্যর্থ হলে প্রতিপক্ষ চাঁদা দাবি করছে। আমি রাজি না হলে তারা সন্ত্রাসী কায়দায় পুকুর দখলের চেষ্টা করছে। আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করে বসতঘরে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। আমরা বাসিন্দাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করিনি।’

অন্যদিকে লিটন মুন্সি বলেন, ‘পুকুরটি সরকারি সম্পত্তি। সুভাষ মাহাতো পাড়ের বাসিন্দাদের উচ্ছেদের চেষ্টা করলে আমরা তাদের পাশে দাঁড়িয়েছি। কিন্তু আমাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মিথ্যা মামলা করা হয়েছে।’

শেরপুর থানার ওসি এস এম মঈনুদ্দিন বলেন, ‘এঘটনায় এখন পর্যন্ত চারটি মামলা হয়েছে। সবগুলো মামলা তদন্তাধীন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে এলাকা বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে।’

শেরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশিক খান রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্থানীয় প্রশাসন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানানো হবে।’
 

Link copied!