ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের রূপগঞ্জ অংশে কাচপুর থেকে গাউছিয়া পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার সড়কপথে নিত্য যানজট এখন যাত্রী ও পরিবহন চালকদের চরম ভোগান্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
মাত্র ৫ থেকে ১০ মিনিটের পথ পাড়ি দিতে সময় লাগছে ২ থেকে ৩ ঘণ্টা পর্যন্ত। কখনো কখনো যানবাহনের দীর্ঘ লাইন কাচপুর থেকে ভুলতা হয়ে গাউছিয়া পর্যন্ত ১০ থেকে ১২ কিলোমিটার পর্যন্ত বিস্তৃত হয়ে যায়।
ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হচ্ছে শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ী, চাকরিজীবী, অ্যাম্বুলেন্সে থাকা রোগীসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে।
স্থানীয়রা জানান, ট্রাফিক পুলিশের অব্যবস্থাপনা, অবৈধ সিএনজি ও ব্যাটারিচালিত রিকশা স্ট্যান্ড, যত্রতত্র লোকাল বাস থামিয়ে যাত্রী ওঠানামা, সিগন্যাল পয়েন্টে চতুর্মুখী গাড়ির চাপ এবং শিল্পকারখানার শ্রমিকদের যাতায়াত—সব মিলিয়ে ভয়াবহ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে।
সড়ক সংস্কার কাজের ধীরগতি এবং রাস্তা দখল করে গড়ে ওঠা বাজার ও বিশৃঙ্খল পার্কিং পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে। বরপা, রূপসী, বিশ্বরোড ও গাউছিয়া—এই চারটি স্পটে প্রতিদিন থেমে থেমে যানজট লেগেই থাকে।
রূপসী-কাঞ্চন সড়কের রূপসী বাসস্ট্যান্ড দিয়ে শিল্পকারখানার মালবাহী ট্রাক ওঠানামা করায় মহাসড়কে প্রায়ই যানবাহন আটকে থাকে। এতে কখনো কখনো যানজট মহল্লার ভেতর পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ে, ফলে অনেকে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন।
মহাসড়ক প্রশস্তকরণের কাজ চলমান থাকায় ধূলাবালির তীব্রতা বেড়ে গেছে। এতে পথচারী ও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়ছেন।
একজন অ্যাম্বুলেন্স চালক রূপালী বাংলাদেশকে জানান, এখানে বসে আছি মোটামুটি তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে। গাউছিয়া থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত যেতে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা লেগে যায়। রোগী নিয়ে এই রাস্তায় চলা অসম্ভব। অনেক সময় রাস্তায়ই রোগী মারা যায়। ছোটখাটো ক্লিনিক থেকে অক্সিজেন নিয়ে টিকিয়ে রাখতে হয়। আধাঘণ্টার রাস্তা পাড়ি দিতে তিন-চার ঘণ্টা লাগে—এই হলো আমাদের ভোগান্তি।
একজন চাকরিজীবীও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এখানে মূল সমস্যা হলো রাস্তাটা ভাঙা, আর নতুন কাজ শুরু হয়েছে বলে সব গাড়ি এখন এই পথে চলাচল করছে। মদনপুর-নয়া সড়ক ভাঙা থাকায় যানবাহনের চাপ দ্বিগুণ হয়েছে। আমি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে মইকুলি থেকে রওনা দিয়েছি, এখন ৭টা বাজে—দেড় ঘণ্টা লেগেছে। গাড়ি চলে না, হেঁটেই আসতে হয়েছে। সরকার ও প্রশাসনের কাছে অনুরোধ, এই রাস্তার কাজ যেন দ্রুত শেষ করা হয়। আমরা গার্মেন্টে কাজ করি, সকাল থেকে রাত পর্যন্ত এই জ্যামে আটকে থাকতে হয়। অনেকে সময়মতো কাজে পৌঁছাতে পারেন না। আবার অনেকে বাই রোড দিয়ে চলতে গিয়ে ছিনতাইকারীর কবলে পড়েন। আল্লাহর ওয়াস্তে সরকার যেন দ্রুত এই কাজ শেষ করে, না হলে আমাদের আর কোনো উপায় থাকবে না।
একাধিক পরিবহন চালকও জানান, যানজটের কারণে তারা প্রতিদিন কম ট্রিপ দিতে পারছেন, ফলে আয় কমে যাচ্ছে এবং যাত্রীরাও ক্ষুব্ধ হচ্ছেন।
রূপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সড়ক সংস্কার কাজ, রাস্তা দখল করে বাজার বসানো, যানবাহনের অতিরিক্ত চাপ এবং ট্রাক-লরির বিশৃঙ্খল পার্কিং—সব মিলেই যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে। অনেক চালক আইন অমান্য করে একাধিক লেন তৈরি করছেন। স্বল্পসংখ্যক পুলিশ দিয়েও আমরা যানজট নিরসনে নিরলসভাবে কাজ করছি।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন