নরসিংদী জেলার যেদিকে চোখ যায় সেদিকেই শুধু আমনের খেত, এ যেন সবুজের সমারোহ। আর এই সবুজ ধান গাছে দুলছে কৃষকের স্বপ্ন। অল্প কিছুদিনের মধ্যেই সোনালি ধানের শীষ ঝলমল করবে মাঠের পর মাঠ। রাশি রাশি সোনালি ধানে ভরে উঠবে কৃষক-কৃষাণীর শূন্য গোলা। পাশাপাশি তাদের মুখে ফুটে উঠবে হাসির ঝিলিক।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে নরসিংদী জেলার ৬টি উপজেলায় ৩৬ হাজার ৯০৯ হেক্টর জমিতে আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্র নির্ধারণ করা হয়। লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এখানে ৪১ হাজার ৬৯ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৪ হাজার ১৬০ হেক্টর বেশি। তার মধ্যে ৩৬ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে উফশী এবং ৪ হাজার ৪৭৫ হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের ধানের চাষ করা হয়েছে। খাদ্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয় ১২ লাখ ৬৫ হাজার ৬ টন।
উপজেলাওয়ারী হিসাবে নরসিংদী সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৬০ হেক্টর, শিবপুরে ৯ হাজার ৩৪৯ হেক্টর, পলাশে ৩ হাজার ৫৬০ হেক্টর, বেলাবতে ৫ হাজার ৬৪০ হেক্টর, মনোহরদীতে ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর এবং রায়পুরায় ৮ হাজার ৭৬০ হেক্টর জমিতে আমন ধানের চাষ করা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, নরসিংদী জেলার ৭ হাজার ৫০০ জন কৃষকের মধ্যে প্রণোদনাস্বরূপ সার ও বীজ বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রকল্পের আওতায় সার, বীজ ও রোগবালাই কীটনাশক ওষুধ বিতরণ করা হয়েছে।
রায়পুরা উপজেলার আমিরগঞ্জ এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকায় আমন ধানের মাঠে সবুজের সমারোহ। প্রতিটি ধান খেতে ধানের শীষ উঁকি দিচ্ছে। কৃষকরা তাদের ধানের জমি পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন।
আমিরগঞ্জ গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল রশিদ জানান, এ বছর তিনি তার ৪ বিঘা জমিতে আমন ধানের চাষ করেছেন। এ সময় তিনি তার জমির সুস্থ-সবল সবুজ ধান গাছে হাত নাড়াচাড়া করছিলেন। এমন সুন্দর ধান খেত দেখে তার মনটা খুশিতে ভরে উঠেছে।
হাসনাবাদ গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন বলেন, ‘মাঠ পর্যায়ে কৃষি বিভাগের লোকদের পরামর্শ নিয়ে আমরা উপকৃত।’ নরসিংদী সদর উপজেলার মহিষাশুড়া গ্রামের প্রান্তিক কৃষক দেলোয়ার হোসেন, করিমপুর গ্রামের কৃষক রাজু মিয়া, রসুলপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রাজ্জাকসহ অনেক কৃষকের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং সময়মতো বৃষ্টি হওয়ার কারণে আমন ধান গাছের চেহারা অনেক সুন্দর হয়েছে। ভালোভাবে ফসল ঘরে তুলতে পারলে তাদের সারা বছরের খাদ্যের চাহিদা পূরণ হবে।
নরসিংদী সদর এবং রায়পুরা উপজেলার চরাঞ্চলের কৃষকের নিচু জমিগুলো আমন ধানের ওপর নির্ভরশীল। চরাঞ্চলের কৃষকরা জানান, বাজারে ধানের পর্যাপ্ত মূল্য না থাকায় তারা হতাশ। তারা জানান, এক বিঘা জমিতে ধান উৎপাদনে যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, যে পরিশ্রম করা হয়, সে তুলনায় ধানের মূল্য পাচ্ছেন না কৃষকরা। ফলে অনেক চাষি তাদের জমিতে ধান চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। কৃষিবান্ধব সরকারের কাছে তাদের দাবি, যেমন করে সার, বীজ ও কীটনাশকের ঘাটতি মেটানো হয়েছে, তেমনি করে তাদের উৎপাদিত ধানের সঠিক মূল্য নির্ধারণ করলে প্রান্তিক চাষিদের দুঃখ-দুর্দশা মুছে যাবে।
নরসিংদী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, ‘আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবং কোনো প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ বছর জেলায় লক্ষ্যমাত্রার অধিক ধান উৎপাদন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এ ছাড়া কৃষকের নিবিড় পরিচর্যা, যথাসময়ে জমিতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের ফলে আমন ধানের বাম্পার ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ।
ধানের সবচেয়ে ক্ষতিকর রোগবালাই সম্পর্কে জানতে চাইলে মোহাম্মদ আজিজুল হক বলেন, সাধারণত মাজরা পোকা, বাদামি ফড়িং ও গোড়া পচা রোগসহ বিভিন্ন পোকা-মাকড়ের আক্রমণ বেশি হয়। এ কারণে কৃষকদের সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন