কৃষক মো. শাহজাহান মিয়া। ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের প্রতি তার ছিল যথেষ্ট আগ্রহ। জীবিকার প্রয়োজনে বেশ কয়েক বছর মৌসুম অনুযায়ী ধান চাষ করেন। কিন্তু ধান চাষে লোকসান হওয়ায় ভাগ্য তার সহায় হয়নি। এরপরও কৃষিকাজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেননি। ধান চাষ না করে শুরু করেন সবজি চাষ।
দৃঢ় মনোবল ও ইচ্ছাশক্তিকে কাজে লাগিয়ে মৌসুম অনুযায়ী লাউ, করলা, পেঁপে, চিচিঙ্গা, বরবটি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, পুঁইশাক, পাটশাক, পালং শাকসহ নানা জাতের বিষমুক্ত সবজি চাষে বদলে গেছে তার ভাগ্যের চাকা। সবজি চাষে বছরে ৪ লাখ টাকারও বেশি আয় করছেন তিনি। কৃষক শাহজাহান ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকার বাসিন্দা। তার পরিবারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে রয়েছে।
কৃষক শাহজাহান বলেন, ‘আমার গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। এখানে পৌর শহরের খালাজোড়া এলাকায় প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করছি। জীবিকার প্রয়োজনে করছি সবজি চাষ। একসময় অন্যের জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করতাম। প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে ধান চাষে ফলন ভালো না হওয়ায় প্রতি বছর লোকসান গুনতে হতো। কোনো উপায় না পেয়ে কৃষি অফিসের পরামর্শে লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক ও পাটশাক চাষ দিয়ে যাত্রা শুরু করি। ওইসবের ফলন ভালো পাওয়ায় আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। এরপর দেশীয় পদ্ধতিতে কোনো প্রকার কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার না করে মৌসুম অনুযায়ী বছরজুড়ে লাউ, করলা, পেঁপে, চিচিঙ্গা, বরবটি, টমেটো, বেগুন, মরিচ, পুঁইশাক, পাটশাক, পালং শাক ও কলমিশাকসহ নানা প্রকার সবজি চাষ করছি।’
বর্তমানে এখানে ৯০ শতাংশ জমি বার্ষিক ইজারা নিয়ে সবজি চাষ করছেন তিনি। বর্তমানে লালশাক, ডাটাশাক, পুঁইশাক, কলমিশাক, পাটশাক ও মরিচসহ বেশ কিছু সবজি বিক্রি করছেন। এদিকে প্রায় এক মাস আগে চিচিঙ্গা ও লাউ বিক্রি শেষ হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় দ্বিগুণ লাভ হয়েছে। এখন শিম, টমেটো, লাউ, বেগুনসহ নানা জাতের শীতের সবজি চাষ করছেন। আশা করছেন, অল্প কিছুদিনের মধ্যে এসব ফসল বিক্রি করতে পারবেন। সবজি আবাদে কৃষি অফিস সার্বিকভাবে সহায়তা করছে। নিজের উৎপাদিত সবজি নিজেই বাজারে বিক্রি করেন। বছরে এই চাষে ৪ লাখ টাকারও বেশি আয় হয়।
তিনি বলেন, ‘সবজি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি। এসব শাকসবজি উৎপাদন করে নিজের পরিবারের পুষ্টির চাহিদা মিটিয়ে স্থানীয়ভাবে বিক্রি করে প্রতি মাসে খরচ বাদে প্রায় ৩৫ হাজার টাকার বেশি আয় হয়। যদি ধান চাষ করতাম, তাহলে বছরে ৫০ হাজার টাকার বেশি ফলন পাওয়া যেত না।’
স্থানীয় বাসিন্দা মো. আজাদ মিয়া বলেন, ‘কৃষক শাহজাহান মিয়া একজন কর্মঠ মানুষ। সব সময় কর্মব্যস্ত থাকেন। কোনো কাজকে তিনি ছোট করে দেখেন না। তিনি বছরজুড়ে বাণিজ্যিকভাবে এলাকায় মিশ্র সবজি চাষ করে বেশ পরিচিতি লাভ করেছেন। আমরা নিয়মিত তার কাছ থেকে টাটকা সবজি ক্রয় করি।’
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘সবজি চাষে খরচ কম, লাভ বেশি হওয়ায় এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে সবজি আবাদ করা হচ্ছে। সবজি আবাদে কৃষকদের সার, বীজসহ অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ ও ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করা হচ্ছে। শাহজাহান মিয়া একজন আদর্শ কৃষক। তিনি মৌসুম অনুযায়ী নানা প্রকার সবজি চাষ করে লাভবান হচ্ছেন।’

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন