আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ (নাসিরনগর) আসনে বিএনপির পক্ষ থেকে প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে এম এ হান্নানকে—যদিও তার ব্যাপারে অত্র অঞ্চলে বিস্তর অভিযোগ রয়েছে। এলাকাবাসীর ভাষ্য, তিনি ছিলেন গরুর হাটের ইজারাদার। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, অনৈতিক কর্মকাণ্ড, সন্ত্রাসী কাজে মদদ দেওয়াসহ এমন কোনো কাজ নেই, যা করেননি তিনি। বিতর্কিত এমন ব্যক্তিকে প্রার্থী করায় পুরো এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে আতঙ্ক। তাকে মনোনয়ন দেওয়ায় মানুষদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছে।
দলীয় সূত্র ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, উপজেলা বিএনপির সভাপতি পদকে ব্যবহার করে প্রভাব বিস্তারের মাধ্যমে চাঁদাবাজি ও দুর্নীতি করে ব্যক্তিগত সম্পদ গড়ে তুলেছেন এম এ হান্নান। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের পর দলের বহিষ্কৃত ও বিতর্কিত ব্যক্তিদের নিয়ে গড়ে তুলেছেন নিজের চাঁদাবাজ বাহিনী। এরপর এলাকায় তার নাম হয়ে যায় ‘চাঁদাভাই’।
স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীর অভিযোগ, ক্ষমতা আর টাকার বিনিময়ে তিনি বাগিয়ে নিয়েছেন দলীয় পদ এবং আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোনয়ন, যা স্থানীয় নেতাকর্মী ও এলাকাবাসী সহজভাবে নিতে পারছেন না। কেননা তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে নিয়মিত চাঁদা আদায় করে আসছেন। অবৈধভাবে ফসলি জমি থেকে এক্সক্যাভেটর মেশিন দিয়ে মাটি কেটে বিক্রি করেন। স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই ড্রেজার দিয়ে নদী থেকে বালু উত্তোলনের মাধ্যমে প্রচুর অর্থ-বিত্তের মালিক হওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
স্থানীয়রা বলছেন, উপজেলা সভাপতির প্রভাব খাটিয়ে গেল বছরের ঈদুল আজহায় নিজ নামেই উপজেলা সদর গরুর বাজারের ইজারা নেন এম এ হান্নান। এমনকি বিভিন্ন সরকারি হাটবাজার, খাসপুকুর ও জলাশয় নিজের সিন্ডিকেটের লোকদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে হাতিয়ে নিচ্ছেন কোটি কোটি টাকা। এ ছাড়া উপজেলার প্রায় সব ইটভাটা থেকে তিনি মাসিক মাসোহারা নেন এবং নিজের ভবন নির্মাণ করতে জোরপূর্বক ইট নিয়ে আসেন। ইতোমধ্যে এমন ঘটনার তথ্য-চিত্র সামাজিক যোগযোগমাধ্যমেও ভাইরাল হয়েছে।
অপকর্মের মাধ্যমে আয় করা টাকায় অর্ধকোটি টাকা মূল্যের বিলাসবহুল গাড়িও কিনেছেন এম এ হান্নান, এমন অভিযোগ করেছেন এলাকাবাসী।
স্থানীয়রা বলছেন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপির সিদ্ধান্ত অমান্য করে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়েছিলেন এম এ হান্নান। অজনপ্রিয় হওয়ায় সেই নির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাজিত হন তিনি। এ ছাড়া গত সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ফরহাদ হোসেন সংগ্রামের পক্ষে প্রচারণা চালানোর অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এমনকি তিনি সংগ্রামের কর্মীদের ফোন দিয়ে বলেন, ‘সংগ্রাম এমপি হলে নাসিরনগর কলেজ মোড়ে গরুভোজ করে খাওয়াবেন’। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে নাসিরনগর সদর বাস ও সিএনজি স্ট্যান্ড থেকে নিজ লোকজন দিয়ে নিয়মিত চাঁদা আদায় করার অভিযোগও করেছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
অভিযোগ আছে, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-সম্পাদক ও কৃষক দলের আহ্বায়ক আমিরুল হোসেন চকদারের প্রায় ৭৯ শতাংশ জমি (প্রায় দুই কোটি টাকা মূল্য) জোরপূর্বক দখল করে রেখেছেন এম এ হান্নান। এ ছাড়া একটি ট্র্যাভেল এজেন্সিতে আমিরুল হোসেনের পাসপোর্টও তিনি আটকে রেখেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে রূপালী বাংলাদেশের তরফ থেকে এম এ হান্নানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
এদিকে এম এ হান্নানের এসব বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের কারণে বিএনপির ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীরা। তারা মনে করেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া-১ আসনে এমন দুর্নীতিবাজ ও অনৈতিক ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়ায় বিএনপির জন্য নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন