মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর, ২০২৫

ফেসবুক


ইউটিউব


টিকটক

Rupali Bangladesh

ইনস্টাগ্রাম

Rupali Bangladesh

এক্স

Rupali Bangladesh


লিংকডইন

Rupali Bangladesh

পিন্টারেস্ট

Rupali Bangladesh

গুগল নিউজ

Rupali Bangladesh


হোয়াটস অ্যাপ

Rupali Bangladesh

টেলিগ্রাম

Rupali Bangladesh

মেসেঞ্জার গ্রুপ

Rupali Bangladesh


শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম

নিম্নমানের ইট দিয়ে সড়ক সংস্কার, কর্তৃপক্ষ নীরব

শেখ সেকেন্দার আলী, পাইকগাছা

প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৫, ০৩:৪৮ পিএম

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার শিববাটি ব্রিজের নিচ থেকে আলোকদী আবাসন প্রকল্প হয়ে কাজীর বিল গেট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। এলাকাবাসী বলছেন, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে দায়সারাভাবে কাজ চালিয়ে গেলেও 'জানে না কর্তৃপক্ষ'। কিন্তু এ কাজে ব্যবহৃত নিম্নমানের ইট ও অপর্যাপ্ত বালির কারণে শুরু থেকেই এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। নতুন রাস্তা, পুরনো দুর্নীতি, নিম্নমানের ইট দিয়ে চলছে সড়কের কাজ। অভিযোগ উঠেছে—মানহীন উপকরণ ব্যবহার, যথাযথ তদারকির অভাব এবং কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতা পুরো প্রকল্পটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার পৌর সদরের উপকূলীয় শহর জলবায়ু সহিষ্ণু প্রকল্পের (ই-জিপি/সিটি সিআরপি/পিএআইকে/আরডি-০১) আওতায় সড়কটির নির্মাণকাজ চলছে। এ কাজের তদারকি করছে পাইকগাছা পৌরসভা।

অফিস সূত্রে জানা গেছে, খুলনার পাইকগাছা পৌরসভার শিববাটি ব্রিজের নিচ থেকে আলোকদী আবাসন প্রকল্প হয়ে কাজীর বিল গেট পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে। সড়কটির দৈর্ঘ্য ২ কিলোমিটার ১৯০ মিটার এবং প্রস্থ ৩ মিটার ১০ ইঞ্চি। প্রকল্পটির চুক্তিমূল্য ২ কোটি ২৮ লাখ ৭ হাজার ৫৩ টাকা ১৯ পয়সা। ‘ওডি এন্টারপ্রাইজ’ নামের ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানটি ২০২৫ সালের এপ্রিল মাসে কাজ শুরু করেছে, যা ২০২৬ সালের অক্টোবর মাসের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, সড়কটির কাজে ভাঙা-পোড়া ও রাস্তা থেকে তুলে আনা ইট ব্যবহার করা হচ্ছে। বালির পরিমাণও প্রকল্পের নির্দেশিত অনুপাতে দেওয়া হচ্ছে না। কাজের বেশিরভাগ জায়গায় বালির স্তর পাতলা, ফলে কিছু দিন গেলে এই রাস্তা দেবে যাবে।

শিববাটি ব্রিজের নিচ থেকে আলোকদী আবাসন প্রকল্প হয়ে কাজীর বিল গেট পর্যন্ত এটি ওয়াপদা রাস্তা, পাস দিয়ে বয়ে গেছে শিবসা নদী। নদীতে জোয়ারের পানির চাপ হলে এই রাস্তা ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যদি এমনভাবে নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করে এবং রাস্তা নিচু করে করা হয় তবে ওয়াপদার বেড়িবাঁধ ভেঙে পৌর সদরে পানি প্রবেশ করবে। এছাড়াও এলাকাবাসী আশঙ্কা করছেন, এভাবে নির্মাণ চললে বর্ষার আগেই পুরো সড়ক ভেঙে পড়বে এবং কয়েক কোটি টাকার সরকারি অর্থ নষ্ট হবে।

এদিকে স্থানীয় সচেতন মহলের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের নীরবতা প্রশ্নবিদ্ধ। কেউ কেউ বলছেন, কর্তৃপক্ষ যদি শুরু থেকেই নজরদারি করত, তবে এত নিম্নমানের কাজ হতো না।

পাইকগাছা পৌরসভার এ সড়কটি স্থানীয়দের চলাচলের অন্যতম প্রধান রাস্তাগুলোর একটি। প্রতিদিন শত শত মানুষ এই সড়ক ব্যবহার করেন। কিন্তু মানহীন কাজের কারণে সড়কটি দ্রুত নষ্ট হয়ে গেলে আবারও বিপুল পরিমাণ সরকারি অর্থ ব্যয়ে পুনর্নির্মাণ করতে হবে—যা জনগণের করের টাকার অপচয় ছাড়া কিছু নয়।

ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অবিলম্বে নিম্নমানের কাজ বন্ধ ও একটি স্বাধীন তদন্ত টিম গঠনের দাবি জানিয়েছেন। তারা বলেন, আমরা চাই সঠিকভাবে কাজ হোক। মানহীন কাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট দপ্তর বিষয়টি জানলেও তারা এখনো নীরব ভূমিকায় রয়েছে। ফলে সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন জাগছে—তাদের নীরবতার পেছনে কোনো গোপন স্বার্থ জড়িত কি না।

পাইকগাছার শিববাটি ব্রিজ থেকে কাজীর বিল গেট পর্যন্ত সড়ক উন্নয়ন কাজকে ঘিরে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ নতুন নয়। তবে এবার বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষ সোচ্চার। এখন দেখার বিষয়—প্রশাসন বিষয়টি আমলে নিয়ে সঠিক তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয় কি না, নাকি আগের মতোই সবকিছু ধামাচাপা পড়ে যায়।

সংশ্লিষ্ট ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের ওডি এন্টারপ্রাইজের ম্যানেজার আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় ৮০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। নিম্নমানের ইট ও খোয়া ব্যবহারের অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ওপরের ফিনিশিংয়ের জন্য মাত্র ৫-১০ মিলি পরিমাণ নিম্নমানের ইট ও খোয়া দেওয়া হচ্ছে। তিনি আরও জানান, রাস্তায় ব্যবহৃত ইটগুলো সরকারের কাছ থেকে ১৪ টাকা ৭৫ পয়সা দরে ক্রয় করা হয়েছে। রাস্তার পুরনো সলিং ইট খোয়া করে নতুন করে বসানো হচ্ছে।

এছাড়া বালির পরিমাণ নিয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত ৮ ইঞ্চির পরিবর্তে আমরা ১৬ ইঞ্চি বালি দিচ্ছি। রাস্তার লেভেলের চেয়েও এক ফুট উঁচু করা হয়েছে। পিচের টেকসই নিশ্চিত করতে ইট গুঁড়া ব্যবহার করা হয়েছে, কারণ বালি দিলে তা বাতাসে উড়ে যায়।

দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শৈলেন দাস জানান, স্যাররা গত সপ্তাহে কাজটি পরিদর্শন করেছেন। তারা যেভাবে রিপোর্ট দেবেন, আমরা সেই অনুযায়ী কাজটি সম্পন্ন করব।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের প্রকৌশলী সুমন দাশ বলেন, সরেজমিনে গিয়ে দেখে বলতে পারব, সেখানে আসলে কী সমস্যা হয়েছে। রাস্তার পুরনো সলিং ইট খোয়া করে নতুন করে বসানো হচ্ছে কিনা—জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, যদি তেমন কিছু দেখা যায়, তাহলে তা উঠিয়ে দিয়ে নতুনভাবে পুনরায় বসানোর ব্যবস্থা করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক মাহেরা নাজনীন বলেন, যেহেতু আমারা লিখিত কোনো অভিযোগ পাইনি। আমি আপনার কাছ থেকে যেটা জানতে পেরেছি সেটা নিয়ে আমাদের দায়িত্ব প্রাপ্ত যিনি রয়েছেন তাকে জানাব। লিখিত অভিযোগ পেলে আমরা পরবর্তীতে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

রূপালী বাংলাদেশ

Link copied!