সিলেটের সীমান্তবর্তী জকিগঞ্জ উপজেলায় জনসংখ্যা প্রায় ৩ লাখ। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আছেন মাত্র তিনজন চিকিৎসক। তাদের দিয়েই চলছে উপজেলার স্বাস্থ্যসেবা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অপারেশন থিয়েটার (ওটি) থাকলেও সার্জন নেই। রয়েছে সমৃদ্ধ ল্যাব—কিন্তু সেটি সচল রাখার জন্যও নেই কোনো টেকনোলজিস্ট।
এভাবেই ‘নাই নাই’ অবস্থা নিয়ে চলছে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। দীর্ঘদিন ধরে এই অচলাবস্থা চললেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। উপরমহল বিষয়টি জানলেও প্রতিকার মিলছে না। ফলে সীমান্তবর্তী এ উপজেলার মানুষ স্বাস্থ্যসেবায় বড় অবহেলার শিকার হচ্ছেন।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও জনবল সংকটের এই চিত্র স্থানীয়দের ক্ষুব্ধ করছে। জরুরি ও নিয়মিত সেবা নিতে অনেক সময় রোগীদের ছুটতে হচ্ছে সিলেট শহরে। এতে যেমন জীবনঝুঁকি বাড়ছে, তেমনি অর্থের ব্যয়ও হচ্ছে বহুগুণে।
সূত্র জানায়, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কাগজে কলমে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (মেডিসিন) এবং জুনিয়র কনসালটেন্ট (অ্যানেসথেশিয়া) পদে চিকিৎসক থাকলেও, তারা সবাই সংযুক্তিতে অন্য হাসপাতালে কর্মরত।
অন্যদিকে, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), জুনিয়র কনসালটেন্ট (ফিজিক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন), ডেন্টাল সার্জন, সহকারী সার্জন এবং মেডিকেল অফিসার (হোমিওপ্যাথিক) পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সহকারী সার্জনের ৭ পদের মধ্যে ৬টিই শূন্য রয়েছে।
নার্সদের ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। ২৫টি সিনিয়র স্টাফ নার্স পদের মধ্যে কাগজে ১৬ জন থাকলেও, ৫ জন অননুমোদিত অনুপস্থিত, ১ জন সংযুক্তিতে অন্যত্র এবং মাত্র ১০ জন নিয়মিত কর্মরত। ৪টি মিডওয়াইফারি পদের মধ্যে ৩টি কাগজে থাকলেও ২ জন অনুপস্থিত এবং ১ জন উচ্চশিক্ষার জন্য ছুটিতে।
প্রশাসনিক ক্ষেত্রেও অচলাবস্থা বিরাজ করছে। ক্যাশিয়ার পদ শূন্য, অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটরের ৩ পদের মধ্যে ১ জন ২০১৫ সাল থেকে বরখাস্ত। উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারের ৭ পদের মধ্যে ৬টি শূন্য। ফার্মাসিস্টের ২ পদের মধ্যে ১টি শূন্য এবং সাবসেন্টারের ফার্মাসিস্টের সব পদই খালি।
এ ছাড়া মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ডেন্টাল), মেডিকেল টেকনোলজিস্ট (ল্যাবরেটরি) ও কুষ্ঠ নিয়ন্ত্রণ সহকারীর সব পদ শূন্য। স্বাস্থ্য সহকারীর ৫০ পদের মধ্যে ২০টি শূন্য, এমনকি একজন ২০১৫ সাল থেকে বরখাস্ত আছেন।
ওয়ার্ড বয়, আয়া, বাবুর্চি, সহকারী বাবুর্চি ও পরিচ্ছন্নতাকর্মীসহ চতুর্থ শ্রেণির বেশিরভাগ পদও শূন্য। বর্তমানে হাসপাতালের ১৯৮টি অনুমোদিত পদের মধ্যে কাগজে উপস্থিত ১২২ জন, কিন্তু বাস্তবে অন্তত ১৪ জন অনুপস্থিত বা সংযুক্তিতে অন্যত্র কর্মরত।
প্রতিদিন হাসপাতালে গড়ে ৬৫–৭০ জন রোগী ভর্তি থাকেন। মাসে গড়ে ৭৫ থেকে ৮০টি স্বাভাবিক প্রসব (নরমাল ডেলিভারি) সম্পন্ন হয়। এই সীমিত জনবল দিয়েই চলছে জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কার্যক্রম। এতে সঠিকভাবে রোগ নির্ণয়ে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে রোগীদের। যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ওষুধ সরবরাহ বর্তমানে পর্যাপ্ত রয়েছে।
২০২২ সাল থেকে চক্ষু বিভাগ চালু ছিল এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। প্রশিক্ষিত দুই কর্মীর মাধ্যমে সেবা দিচ্ছিল বিভাগটি। তবে গত অক্টোবরের শেষ দিকে তাদের বদলির কারণে এখন চক্ষু চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন প্রান্তিক এলাকার মানুষ।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. এস. এম. আব্দুল আহাদ বলেন, ‘আমরা সীমিত জনবল নিয়ে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি রোগীদের চিকিৎসাসেবা দিতে। শূন্য পদে জনবল চেয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি।’
উল্লেখ্য, জকিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক অনুমোদন রয়েছে ৫০ শয্যার। তবে জনবল অনুমোদন এখনো ৩১ শয্যার হিসাবেই চলছে। ফলে চিকিৎসাসেবা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম উভয়ই বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।




সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন