পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের চরবাংলা এলাকায় সরকারি খাস জমি দখল ও চাষাবাদকে কেন্দ্র করে বৃহস্পতিবার (১৩ নভেম্বর) বিকেলে দুই পক্ষের সংঘর্ষে নারীসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন।
এ ঘটনায় ইউনিয়ন বিএনপির ওয়ার্ড সভাপতি আনোয়ার হাওলাদার গ্রুপ এবং বিত্তহীন কৃষক সমবায় সমিতির সদস্যদের মধ্যে সংর্ঘষ হয়। এতে, গুরুতর আহতদের গলাচিপা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে এবং বাকিদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, দীর্ঘদিন ধরে চরবাংলার খাস জমি নিয়ে উভয় পক্ষের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে। সম্প্রতি উপজেলা প্রশাসনের মধ্যস্থতায় সমঝোতা হলেও বৃহস্পতিবার দুপুরে তরমুজ চাষ ও ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে ফের সংঘর্ষ বাধে।
আহতদের মধ্যে রয়েছে মো. নিজাম গাজী (৬৫), নুর মোহাম্মদ সিকদার (৭০), মো. আলম হাওলাদার (২৫), মো. কবির মেলকার (৫৫), মো. রিয়াজ মুসল্লী (৩৮), মো. হাসান সিকদার (৩৭), মো. আনোয়ার ফকির (৭৪), মো. সিরাজ খা (৬৫), মো. শফিক হাওলাদার (৪০), মো. বাবুল তালুকদার (৪৮), মো. বারেক ফকির (৬০), মো. শাহাবুদ্দিন তালুকদার (৪৯), মো. বেল্লাল ঢালী (৬০), মো. শাহীন মীর (৩০), মো. জালাল তালুকদার (৫০), মো. তৈয়ব মোল্লা (৪২), মো. ফরহাদ তালুকদার (২৭), মোসাঃ রেখা বেগম (৩৮), আকলিমা বেগম (৩০), নিলুফা বেগম (৪০), ছালেয়া বেগম (৬৫), ছালমা বেগম (৪৫), জাকিয়া বেগম (৪৫) ও খাদিজা বেগম (৩৫)।
আহত জালাল তালুকদার অভিযোগ করেন, ‘ভূমি অফিস থেকে ইজারা পাওয়া জমিতে চাষ করতে গেলে স্থানীয় বিএনপি নেতারা বাধা দেন এবং আমাদের ওপর হামলা চালান। গত শনিবার ইউএনও ও ওসি উভয় পক্ষকে নিয়ে যে সমাধান দেন, তারা সেটিও মানেনি।’
আরেক আহত সাহাবুদ্দিন তালুকদার বলেন, ‘আমরা ৩০ বছর ধরে চরবাংলায় বসবাস করছি। ভূমি অফিস আমাদের ১৫৫ জন কৃষককে জমি ইজারা দিয়েছে। কিন্তু কিছু বিএনপি নেতা চাষ করতে দিচ্ছেন না।’
অন্যদিকে ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি আনোয়ার হাওলাদার দাবি করেন, ‘ওই জায়গায় আমাদের ঘর ছিল। অন্যরা জোর করে ঘর তুলতে গেলে সামান্য ধাক্কাধাক্কি হয়। হামলার অভিযোগ সঠিক নয়।’

চরবিশ্বাস ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি বাকের বিশ্বাস বলেন, ‘আমি ঘটনাস্থলে ছিলাম না। পরে শুনে প্রশাসনকে জানিয়েছি। আমার সম্পৃক্ততা নেই।’
পটুয়াখালী জেলা যুব অধিকার পরিষদের সহ-সভাপতি মো. মহিবুল্লাহ এনিম বলেন, ‘উপজেলা প্রশাসন শান্তিপূর্ণ সমাধান দিয়েছিল। এরপরও কীভাবে সংঘর্ষ হলো তা জানি না।’
গলাচিপা থানার (ওসি) মো. আশাদুর রহমান জানান, ‘খাস জমি নিয়ে দুই পক্ষের পুরোনো বিরোধ ছিল। তরমুজ ক্ষেতের ঘর নির্মাণকে কেন্দ্র করে আবার সংঘর্ষ হয়। পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণে আছে। কেউ লিখিত অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
গলাচিপা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘গত শনিবার উভয় পক্ষকে নিয়ে বিরোধীয় জমির বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছিল। যারা আজ সংঘর্ষে জড়িয়েছে, তারাও সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। দোষীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, খাস জমি দখল নিয়ে উভয় পক্ষ পূর্বে একাধিকবার মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করেছে। উপজেলা প্রশাসনও কয়েক দফায় সমঝোতার চেষ্টা চালিয়েছে, কিন্তু এখনও বিরোধের স্থায়ী সমাধান হয়নি।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন