ঢাকা শনিবার, ০৬ ডিসেম্বর, ২০২৫

ঋণের চাপ-অপমানে রিকশাচালকের আত্মহত্যা: চিরকুট ঘিরে নতুন রহস্য

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৬, ২০২৫, ১২:৪৫ এএম
সুলতান মাহমুদ রুবেল ও রহস্য তৈরি করা চিঠি

ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে না পারা, তার ওপর নানামুখী অপমান। সবকিছু যেন চাঁদপুরের রিকশাচালক সুলতান মাহমুদ রুবেলের জীবনকে তড়িঘড়ি থামিয়ে দিল। চার সন্তানের এই বাবার মৃত্যুের খবর এখন পুরো এলাকায় এক ধরনের স্তব্ধতা নামিয়েছে। 

চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহতলী গ্রামের গাজী বাড়ির মৃত দুলাল গাজীর ছেলে রুবেল (৩৮) পেশায় একজন রিকশাচালক। তার স্ত্রী হালিমা বেগম বাসাবাড়িতে কাজ করেন। দাম্পত্য জীবনে তাদের দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। পরিবারটিকে টেনে নেওয়ার লড়াই দুইজনকেই প্রতিদিন বিধ্বস্ত করে তুলছিল।

হালিমা বলেন, কয়েক বছর আগে দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার পর রুবেল চিকিৎসার জন্য এলাকার মানুষ ও এনজিও থেকে কিস্তিতে ধার করেন। আর সেই ধারই পরিণত হয় জীবনের সবচেয়ে বড় বোঝায়। মানুষের কাছে অপমান, এনজিওর লোকদের চাপ, সে আর সহ্য করতে পারছিল না। 

জানা গেছে, অপমান এড়াতে কিছুদিন আগে রুবেল স্ত্রীকে নিয়ে চাঁদপুর শহরের ব্যাংক কলোনি এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। সন্তানরা থেকে যায় নানাবাড়িতে। সম্প্রতি স্ত্রী হালিমা বেগম বাবার বাড়িতে গেলে গত ৩০ নভেম্বর বিষপান করেন রুবেল।  দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হলেও বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে তার মৃত্যু হয়।

মৃত্যুর আগে রুবেল স্ত্রীকে বলেছিলেন, বাড়িতে তার বড় ভাইয়ের ছেলে তাকে মারধর করেছে। ঋণের চাপে বিভিন্ন জন অপমান করেছে। অপমান সহ্য করতে না পেরে আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নেন। 

 এদিকে, রুবেলের মৃত্যুর পর একটি হাতে লেখা চিরকুট সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। সেখানে শাশুড়ি, শ্যালিকা ও শ্যালককে তার মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হয়েছে বলে দাবি। কিন্তু এই চিরকুট নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। কারণ নিরক্ষর রুবেলের এমন সুন্দর হাতের লেখা অসম্ভব বলে মনে করছেন তার স্ত্রীসহ অনেকেই।

হালিমা বলেন, আমার স্বামী নিজের নামটুকু লেখতে পারত। তার ন্যাশনাল আইডি কার্ডে যে স্বাক্ষর আছে, সেটা আর চিরকুটের লেখার কোনো মিল নেই। এটা তার হাতের লেখা না।

স্থানীয়রাও একই প্রশ্ন তুলছেন, মৃত্যুর তিন দিন পর হঠাৎ এই চিরকুট কোথা থেকে এলো? কারা এটি ছড়িয়ে দিল? কেন? 

‘লেখায় অনেক জায়গায় ইচ্ছা করে ভুল বানান দেওয়া হয়েছে, যেন রিকশাচালক রুবেলের লেখা মনে হয়’—এমন দাবি করছেন অনেকে।

চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বাহার মিয়া জানান, রুবেলের ভাইদের পক্ষ থেকে একটি মামলা করা হয়েছে। সেখানে রুবেলের স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালিকা ও শ্যালককে আসামি করা হয়েছে। ঘটনার প্রকৃত সত্য উদ্ঘাটনে তদন্ত চলছে বলে জানান তিনি।