বাগেরহাটে টমেটো গাছে অজানা রোগের আক্রমণে কৃষি অফিসের উদাসীনতায় সর্বস্ব হারানোর শঙ্কায় কৃষকরা। এদিকে বাজারে কেমিক্যাল দিয়ে পাকানো টমেটোর দাপটে প্রকৃত কৃষকের টমেটোর চাহিদাও কমে গেছে।
বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, টমেটো গাছে রহস্যজনক রোগ ছড়িয়ে পড়ায় আতঙ্কে দিন কাটছে চাষিদের। একের পর এক গাছ শুকিয়ে যাচ্ছে, ফল ঝরে পড়ছে।
অথচ মাঠে নেমে পরিস্থিতি দেখারও সময় নেই উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তাদের। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের অভিযোগ, পরিচিত চাষি না হলে কৃষি অফিস কোনো খোঁজই নেয় না।
ক্ষেতে সারাদিন শ্রম দিয়ে টমেটো চাষে ভাগ্য ফেরানোর স্বপ্ন দেখেছিলেন কৃষকরা। কিন্তু অজানা এই রোগে কয়েক দিনের মধ্যে বড় অংশের গাছ নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তাদের মাথায় নেমে এসেছে দুশ্চিন্তার পাহাড়।
মাঠের বাইরে নতুন সমস্যায়ও বিপর্যস্ত কৃষকরা। কিছু অসাধু চাষি কেমিক্যাল ও বিভিন্ন মেডিসিন মিশিয়ে কৃত্রিমভাবে টমেটো পাকিয়ে বাজারজাত করছে। এতে আসল কৃষকের স্বাভাবিকভাবে উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা কমে যাচ্ছে।
কিছুদিন আগেও টমেটোর বাজার ছিল ৩ হাজার টাকা থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা মণ দরে। এখন একই টমেটো ১ হাজার ৫০০-১ হাজার ৮০০ টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে কৃষকদের।
মৌসুমের শুরুতেই এমন দাম পেলে শেষদিকে নিঃস্ব হয়ে যেতে হবে কৃষকদের। টমেটোর মৌসুমের একেবারে শুরুতেই এমন বিপর্যয় দেখা দেওয়ায় কৃষকদের আশঙ্কা, সামনের দিনগুলোতে ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে।
সুধাংশু মজুমদার বলেন, সাধারণ কৃষকদের কেউ যেন মানুষই মনে করে না কৃষি অফিস। পরিচিত বা আপন লোক না হলে কৃষি অফিস কখনোই খোঁজ নেয় না। ক্ষেতে গাছ মরলেও তারা আসে না, পরামর্শ তো দূরের কথা।
বিধান মন্ডল বলেন, অজানা রোগ ছড়াচ্ছে, বাজারে কেমিক্যাল মেশানো টমেটোর বন্যা, অথচ কৃষি অফিস নীরব। কৃষি অফিসের উদাসীনতা, দুর্বল নজরদারি ও তদারকির অভাবেই পুরো মৌসুমটাই এখন হুমকির মুখে। প্রথমে যে দাম পেয়েছি, এখন তার অর্ধেক দামে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে।
টমেটো ব্যবসায়ী মো. বেল্লাল বলেন, দীর্ঘদিন ধরে কাঁচামালের ব্যবসা করছি। টমেটোর বাজার সবসময় ওঠানামা করে। বছরের শুরুতে দাম ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত উঠলেও পরে মানসম্মত পণ্যের সংকট দেখা দেয়। কিছু কৃষক দ্রুত পাকানোর জন্য ওষুধ ব্যবহার করায় বাজারে লোকসান হয়, ব্যবসায়ী ও ক্রেতা দুপক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
কৃষি অফিস তদারকি করলে এ সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে। আমরা মাইকিং করে কৃষকদের কেমিক্যাল ব্যবহার বন্ধ করতে অনুরোধ করেছি।
বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মোতাহার হোসেন বলেন, এ বছর জেলায় মোট ২ হাজার ১৬৫ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে। এর মধ্যে শুধু চিতলমারী উপজেলায় চাষ হচ্ছে ৮৬০ হেক্টর জমিতে। কৃষকদের যে অভিযোগ পাওয়া গেছে, তা গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
প্রতিবছর একই জমিতে ধারাবাহিকভাবে টমেটো চাষ করার ফলে মাটির উর্বরতার পরিবর্তন ও রোগবালাইয়ের চাপ সৃষ্টি হয়, যার কারণে গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে বা মারা যেতে পারে। এছাড়া বাজারে আগাম সরবরাহের প্রতিযোগিতায় কেউ কেউ ইথিলিন ব্যবহার করেন, যা টমেটোকে অকাল পাকতে বাধ্য করে।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন