বরগুনার বেতাগী উপজেলায় তীব্র জনবল সংকটে উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তরের সেবা কার্যক্রম কার্যত ভেঙে পড়েছে। একটি পৌরসভা ও সাতটি ইউনিয়নের হাজার হাজার খামারি এবং লক্ষাধিক গবাদিপশুর চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা এই দপ্তরে ১১টি অনুমোদিত পদের বিপরীতে কর্মরত মাত্র দুজন। এতে উপজেলার প্রাণিসম্পদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও স্থানীয় অর্থনীতি বড় ধরনের হুমকির মুখে পড়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা, চারটি উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (সম্প্রসারণ), ভেটেরিনারি কম্পাউন্ডার, ড্রেসার ও অফিস সহায়কসহ মোট ৯টি গুরুত্বপূর্ণ পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। বর্তমানে কেবল একজন ভেটেরিনারি সার্জন ও একজন ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (এফএ, এ/আই) দিয়ে চলছে এ দপ্তরের কার্যক্রম।
এই দুজন কর্মকর্তার পক্ষে উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার গরু, ২৬ হাজার ছাগল, ২১৫টি ভেড়া, ৭১৭টি মহিষ এবং ৯ লাখেরও বেশি হাঁস-মুরগির চিকিৎসা ও পরিচর্যা নিশ্চিত করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
ভুক্তভোগী খামারি জাহাঙ্গীর আলম আক্ষেপ করে বলেন, আমাদের গরু-ছাগলের অসুখ হলে সময়মতো ডাক্তার পাওয়া যায় না। মাত্র দুজন মানুষ কতদিকে দৌড়াবেন? চিকিৎসা না পেয়ে প্রায়ই বড় ক্ষতির শিকার হতে হয়।
বিবিচিনি ইউনিয়নের খামারি মাহিনুর জানান, গত মাসে সময়মতো সরকারি ডাক্তার না পাওয়ায় তার একটি অসুস্থ বাছুর মারা যায়।
জনবল সংকটের পাশাপাশি রয়েছে ওষুধ সংকটও। দপ্তরের নথি অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের বরাদ্দকৃত জরুরি ওষুধের একটি বড় অংশ প্রায় শেষ, যা খামারিদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়েছে।
দপ্তরের দায়িত্বে থাকা ভেটেরিনারি সার্জন ডা. মো. ইকবাল হোসেন তার অসহায়ত্ব প্রকাশ করে বলেন, জনবল সংকটই আমাদের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এই বিশাল এলাকার লাখ লাখ গবাদিপশুর সেবা দেওয়া আমাদের দুজনের পক্ষে প্রায় অসম্ভব। আমরা নিয়মিত বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করছি।
এ বিষয়ে বেতাগী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, প্রাণিসম্পদ দপ্তরের জনবল সংকটের বিষয়টি আমার নজরে এসেছে। খামারিদের দুর্ভোগ লাঘব করা আমাদের অগ্রাধিকার। আমি বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং শূন্য পদে দ্রুত জনবল নিয়োগের জন্য জোরালোভাবে সুপারিশ করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসন খামারিদের পাশে আছে।
এই পরিস্থিতিতে উপজেলার হাজার হাজার খামারি তাদের প্রাণিসম্পদের ভবিষ্যৎ নিয়ে চরম উদ্বেগে দিন কাটাচ্ছেন। দ্রুত জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সহায়তা না দিলে এই অঞ্চলের গ্রামীণ অর্থনীতিতে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট সকলে।
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন