ঢাকা মঙ্গলবার, ০২ ডিসেম্বর, ২০২৫

বদলির আদেশ হাতে নিয়েও মানবতার সেবায় ইউএনও

বেতাগী (বরগুনা) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ২, ২০২৫, ০৭:২৪ পিএম
বেতাগীতে শয্যাশায়ী বিএনপিকর্মী আজাহার হাওলাদারকে সহায়তা দিচ্ছেন বিদায়ী ইউএনও হরেকৃষ্ণ অধিকারী। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

সরকারি চাকরিতে বদলি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। সাধারণত বদলির আদেশ এলে কর্মকর্তারা দাপ্তরিক বিদায় ও নতুন কর্মস্থলে যোগদান নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। কিন্তু সেই চিরাচরিত নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটালেন বরগুনার বেতাগী উপজেলার বিদায়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জনাব হরেকৃষ্ণ অধিকারী।

রাজবাড়ী জেলা পরিষদে বদলির আদেশ হাতে নিয়েও তিনি ভুলে যাননি মানবিকতার দায়বদ্ধতা। রাজনৈতিক পরিচয় বা ব্যস্ততা—কোনোকিছুই তাকে আটকাতে পারেনি। মঙ্গলবার (২ ডিসেম্বর ২০২৫) দুপুর ১২টায় বিদায়লগ্নের ঠিক আগমুহূর্তে তিনি ছুটে যান উপজেলার সদর ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের শয্যাশায়ী দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী আজাহার হাওলাদারের জরাজীর্ণ বাড়িতে।

দলের কেউ খবর না নিলেও, প্রশাসনের সর্বোচ্চ কর্মকর্তা হিসেবে তিনি দলমতের ঊর্ধ্বে উঠে আজাহারের পাশে দাঁড়ান। নিজ হাতে তুলে দেন খাদ্যসামগ্রী, শীতবস্ত্র এবং মেয়ের বিয়ের খরচের জন্য নগদ অর্থ সহায়তা।

সরেজমিনে জানা যায়, আজাহার হাওলাদার জন্মগত দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী এবং স্থানীয় বিএনপির একজন সক্রিয়কর্মী। ভিক্ষাবৃত্তি করে সংসার চালালেও গত জুলাই মাসে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়ে তিনি এখন পক্ষাঘাতগ্রস্ত। ঘরে খাবার নেই, বন্ধ চিকিৎসা। এর ওপর সেজো মেয়ের বিয়ের খরচ নিয়ে চরম বিপাকে ছিল পরিবারটি। 

আজাহারের আক্ষেপ ছিল, ‘জীবনভর দল করেও আজ চিকিৎসার অভাবে কাতরাচ্ছি, কেউ খোঁজ নেয়নি।’

এমন পরিস্থিতিতে রাজনীতির বেড়াজাল ভেঙে মানবিকতার হাত বাড়িয়ে দেন বিদায়ী ইউএনও হরেকৃষ্ণ অধিকারী। তিনি ব্যক্তিগত উদ্যোগে আজাহারের চিকিৎসার খোঁজখবর নেন এবং তাৎক্ষণিক সহায়তা প্রদান করেন। শুধু আজাহার নয়, যাওয়ার আগে তিনি গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন অসহায় দুস্থের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ করেন।

বিদায়ী ইউএনও হরেকৃষ্ণ অধিকারী বলেন, ‘আজই নতুন কর্মস্থলে যোগ দিচ্ছি। কিন্তু যাওয়ার আগে যখন শুনলাম একজন দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী মানুষ বিনা-চিকিৎসায় ও মেয়ের বিয়ে নিয়ে কষ্টে আছেন, তখন স্থির থাকতে পারিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমি তার রাজনৈতিক পরিচয় দেখিনি, দেখেছি তার অসহায়ত্ব। একজন মানুষ হিসেবে আরেকজন মানুষের পাশে দাঁড়ানোই আমার কাছে বড় ধর্ম। বেতাগীর মানুষ ও এখানকার স্মৃতি আমার হৃদয়ে থাকবে।’

সাধারণত বিদায়বেলায় কর্মকর্তাদের এমন জনসম্পৃক্ততা খুব কমই দেখা যায়। স্থানীয়রা বলছেন, হরেকৃষ্ণ অধিকারী খুব অল্প সময় বেতাগীতে ছিলেন, কিন্তু তার এই শেষ কাজটি তাকে বেতাগীবাসীর মনে স্মরণীয় করে রাখবে। তিনি প্রমাণ করলেন, প্রশাসনের চেয়ারের চেয়ে মানবিকতার আসন অনেক উঁচুতে।

উল্লেখ্য, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আদেশে জনাব হরেকৃষ্ণ অধিকারী রাজবাড়ী জেলা পরিষদে বদলি হয়েছেন। তার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি ও কর্মপরিকল্পনা আগামীর প্রশাসনের জন্য অনুকরণীয় হয়ে থাকবে বলে মনে করে স্থানীয় সুশীল সমাজ।