সরকারি ব্রজমোহন (বিএম) কলেজ শিক্ষার্থীর কাছ থেকে হাফভাড়া না নেওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশাল নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে এক ভীতিকর পরিবেশ তৈরি হয়। শনিবার সন্ধ্যায় বসচার ঘটনাকে ঘিরে বাস টার্মিনালে শিক্ষার্থী ও শ্রমিক পাল্টাপাল্টি হামলা এবং শতাধিক পরিবহন ভাঙচুরে গোটা নগরীতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
দুই ঘণ্টাব্যাপী চলমান সংঘাত নিয়ন্ত্রণে নিতে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ হিমশিম খেলে সেনাবাহিনী রাত ৯টার দিকে পরিবেশ শান্ত করতে সমর্থ হয়। মেট্রোপলিটন বিমানবন্দর থানাধীন এলাকায় শনিবার রাতের এই সংঘর্ষের ঘটনায় রোববার বরিশাল থেকে বাস চলাচল সম্পূর্ণরূপে বন্ধ রাখা হয়, এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
পুলিশ ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, বিএম কলেজের এক শিক্ষার্থী হাফভাড়া দিতে চাওয়ায় তার সাথে বাসের স্টাফদের কথাকাটাকাটি হয়। এ খবর পেয়ে ২৫/৩০ জন শিক্ষার্থী শনিবার সন্ধ্যার কিছুটা পরে নথুল্লাবাদে প্রবেশ করেন এবং এ নিয়ে শ্রমিকদের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। এক পর্যায়ে তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা থেকে বিষয়টি সংঘাতে রূপ নেয়।
বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা টার্মিনালের বাইরে এবং ভেতরে পার্কিং করে রাখা অন্তত শতাধিক বাস ভাঙচুর করাসহ অগ্নিসংযোগ করেন। বরিশাল শহরের প্রবেশদ্বার নথুল্লাবাদে সন্ধ্যা রাতে এই রক্তক্ষয়ী সংঘাতে উভয় গ্রুপের অন্তত ৫০ জনের বেশি লোক আহত হন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, সংঘর্ষের খবর পেয়ে প্রথমে পুলিশ গিয়ে উভয় গ্রুপকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। পুলিশের নির্লিপ্ততায় এক পর্যায়ে সংঘাত আরও জোরালো রূপ ধারণ করে এবং বাস ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ অব্যাহত থাকায় ঘটনাস্থলে সেনাবাহিনী ছুটে যায়। এরপরে পরিবেশ কিছুটা শান্ত হতে থাকে।
তবে বাস ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনায় শিক্ষার্থীরা মালিক-শ্রমিকদের দিকেই আঙুল তুলেছেন। তাদের দাবি, হাফভাড়া না নেওয়াকে কেন্দ্র এক শিক্ষার্থীকে বাস শ্রমিকেরা বেইজ্জতি করেন। বিষয়টি জানতে গেলে তাদের ওপর শ্রমিক নেতা শাহাদাত হোসেন লিটনের নেতৃত্বে হামলা করা হয়, এতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে পাল্টা পদক্ষেপ নেন। তখন বাস শ্রমিকেরা পরিবহন ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ করে তার দায় শিক্ষার্থীদের মাথায় চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করে। শ্রমিকদের এই হামলায় তাদের অন্তত ৮ সহপাঠী শেবাচিমে চিকিৎসাধীন আছেন।
অবশ্য শিক্ষার্থীদের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে বাস মালিক সমিতি এবং শ্রমিক ইউনিয়নের নেতারা। বরিশাল জেলা বাস মালিক গ্রুপের সভাপতি মোশাররফ হোসেন রূপালী বাংলাদেশকে বলেন, তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে বিএম কলেজের ৩০/৪০ শিক্ষার্থী একযোগে টার্মিনালে প্রবেশ করে ত্রাস চালিয়েছেন। শতাধিক বাস ভাঙচুর করাসহ বিভিন্ন কাউন্টারে তারা লুটপাট চালিয়েছে। এ সময় তাদের বাধা দিতে গিয়ে হামলায় ৩০ জনের বেশি শ্রমিক আহত হয়েছেন, তাদের মধ্যে কজনকে উদ্ধার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এই হামলা এবং ভাঙচুরে বাস মালিকদের ২/৩ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে দাবি করে মোশাররফ হোসেন বলেন, সবগুলো পরিবহন ভাঙচুর করায় রোববার থেকে যাত্রীসেবা বন্ধ হয়ে গেছে। বাসগুলো মেরামত করার আগে আর যাত্রী পরিবহন করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি এবং স্থানীয় প্রশাসনের সাথে বৈঠক হয়েছে, সেখানে তাদের কাছে শনিবার রাতের সেই ভয়ানক পরিস্থিতি বর্ণনা করা হয় এবং এই ঘটনায় তিন কোটি টাকা ক্ষতিপূরণও দাবি করা হয়েছে।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বরিশাল থেকে বাস চলাচল বা যাত্রী পরিবহন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। বিশেষ করে দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষজন বেশিমাত্রায় দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। যাত্রীসাধারণের এই ভোগান্তি লাঘবের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. শফিকুল ইসলাম। এই পুলিশ কর্মকর্তা রূপালী বাংলাদেশকে জানান, বিষয়টি মীমাংসা করতে বাস মালিক ও শ্রমিক নেতা এবং শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। আশা করা যায়, সোমবারের মধ্যে পরিবেশ-পরিস্থিতি শান্ত হবে, এবং যানবাহন চলাচলও স্বাভাবিক হবে, মন্তব্য করেন পুলিশ কমিশনার।

সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন