বগুড়ার ধুনট উপজেলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে আবারও ভুল চিকিৎসার অভিযোগ উঠেছে। এবার ‘আদর্শ ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড হাসপাতালে’ সিজারিয়ান অপারেশনের পর আকলিমা খাতুন (২০) নামের এক প্রসূতির মৃত্যু হয়েছে।
অভিযোগ রয়েছে, ঘটনাটি ‘ধামাচাপা’ দিতে পরিবারকে আড়াই লাখ টাকা দিয়ে ‘মীমাংসা’ করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
মৃত আকলিমা খাতুন উপজেলার গোসাইবাড়ি গ্রামের মাস্টারপাড়া এলাকার আলম হোসেনের মেয়ে এবং একই গ্রামের শামীম হোসেনের স্ত্রী।
এর আগেও ওই হাসপাতাল ভুল চিকিৎসার জন্য আলোচনায় আসে। ২০২৪ সালের ১৯ জুলাই মহনা খাতুন নামে এক নারীর পেটের ভেতর সার্জিক্যাল গজ রেখে সেলাই করার অভিযোগ ওঠে। অভিযোগ উঠেছিল, সেই ঘটনাও টাকার বিনিময়ে ‘মীমাংসা’ করা হয়েছিল।
এ ছাড়া চলতি বছরের ৬ এপ্রিল এক রোগী দম্পতির সঙ্গে হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিনের দুর্ব্যবহার এবং শিশুসন্তানসহ মারধরের অভিযোগও উঠেছিল। লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পরও প্রতিকার মেলেনি।
জানা গেছে, ঢাকায় চাকরিরত আকলিমা সন্তান প্রসবের জন্য বাবার বাড়ি গোসাইবাড়িতে আসেন। গত মঙ্গলবার সকালে প্রসব ব্যথা ওঠায় দুপুরে তাকে ধুনট আদর্শ ডায়াগনস্টিকে ভর্তি করা হয়। গভীর রাতে অ্যানেসথেসিয়া দেন ডা. মেহেরুল মিশু। এরপর শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে একটি কন্যাশিশুর জন্ম হয়।
সিজারের পর অবস্থার আরও অবনতি হলে তাকে পরদিন বগুড়া টিএমএস হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানেই দুপুর সাড়ে ১২টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
আকলিমার স্বজনরা জানান, হাসপাতালে ভর্তির সময় আকলিমা সুস্থ ছিলেন। কিন্তু সিজার চলাকালীন ও পরে তার অবস্থার অবনতি হয়। ডাক্তার-নার্সদের বারবার জানানোর পরও তারা গুরুত্ব দেননি। পরে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই তাকে বগুড়ায় পাঠায়।
তারা আরও জানান, বিষয়টি ‘আপসের মাধ্যমে’ নিষ্পত্তি করা হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আড়াই লাখ টাকা দিয়েছে, তারা আর অভিযোগ করবেন না।
স্থানীয় ইউপি সদস্য তইবর রহমান মন্ডল বলেন, ‘ঘটনাটি সত্য এবং বিষয়টি মীমাংসা হয়ে গেছে।’
অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া চিকিৎসক ডা. মেহেরুল মিশু বলেন, ‘পোস্ট অপারেটিভ ম্যানেজমেন্টে সমস্যা হয়েছে, তাই মৃত্যু হয়েছে।’
হাসপাতালের পরিচালক আব্দুল মোমিন বলেন, ‘সিজারের পর স্ট্রোক করে মৃত্যু হয়েছে। দরিদ্র পরিবার হওয়ায় মানবিক দিক বিবেচনায় সহায়তা দিয়েছি।’
ধুনট উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাজ্জাদ কাদির বলেন, ‘ভুল চিকিৎসার অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’