ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে আমন ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক পাকা ধান কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে কাটছেন। যেখানে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে প্রতি বিঘা ২৫০-২৭০ টাকা খরচ হতো, সেখানে মেশিন ব্যবহার করলে খরচ পড়ছে মাত্র ২ হাজার টাকা।
ফলে প্রতি বিঘায় কৃষকের প্রায় ৭’শ টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। এছাড়া এবার জমিতে আমনের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে দেখা দিয়েছে আনন্দের ঝিলিক।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে আখাউড়ায় আমন ধান আবাদ হয়েছে প্রায় ৪ হাজার ৪১২ হেক্টর জমিতে। ধান রোপণের জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস থেকে ৯০০ জন কৃষককে ৫ কেজি বীজ ধান, ১০ কেজি এমওপি এবং ১০ কেজি ডিওপি সার প্রণোদনা হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জমিতে ধানের ফলন বৃদ্ধির জন্য সার্বিক সহায়তা প্রদান করা হয়েছে।
কৃষি অফিস জানায়, চারপাশে আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। অধিকাংশ কৃষক মেশিনে ধান কেটে মাড়াই করছেন। উপজেলার মালিকানায় প্রায় ২০০টির বেশি মাড়াই কল, ১টি রিপার এবং ২৭টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন রয়েছে। অনেকে পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে মেশিন ভাড়ায় এনে ধান কাটছেন।
সরেজমিনে পৌর শহরের তারাগন, দেবগ্রাম ও উপজেলার মোগড়া, মনিয়ন্দ, ধরখার এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাঠে মাঠে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে সোনালী ধানের সমারোহ। কাঁচা-পাকা ধানের দোলন মানুষের চোখে মনোরম দৃশ্য তৈরি করছে। ধান কাটার কাজ শুরু হওয়ায় কৃষকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
কৃষক মো. জালাল মিয়া বলেন, ‘বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্যে ৫ বিঘা জমিতে উচ্চফলনশীল আমন ধান চাষ করি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বীজ ও সার পাই। তিন বিঘা জমির ধান পেকে যাওয়ায় মেশিনের মাধ্যমে সহজে ধান কাটা ও মাড়াই করেছি। শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে প্রতি বিঘায় ২৫০-২৭০ টাকা খরচ হতো কিন্তু মেশিনে মাত্র ২ হাজার টাকায় হচ্ছে।
আগে মৌসুমী ধান কাটাতে বিভিন্ন এলাকা থেকে দলবেঁধে শ্রমিক আসত জানিয়ে তিনি বলেন, একসঙ্গে ধান কাটার কারণে শ্রমিক সংকট হতো। এখন মেশিনের মাধ্যমে অতি সহজে ধান কাটছি এবং মাড়াই ঝাড়াইসহ বস্তায় তুলে বাড়িতে নিয়ে আসছি।’
আরেক কৃষক সাচ্চু মিয়া বলেন, ‘৬ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান আবাদ করেছি। এর মধ্যে ৪ বিঘার ধান পেকে যাওয়ায় কম্বাইন হারভেস্টার মেশিনে কাটা হয়েছে। মেশিন ব্যবহার করলে ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়া ও বস্তায় ভরার সব কাজ একসঙ্গে হয়। শ্রমিক দিয়ে এক বিঘা ধান কাটতে দুদিন লাগে। আর এতে খরচও বেড়ে যায়। মেশিনে প্রতিটি বিঘা কাটা মাত্র ২৫-৩০ মিনিটে হয়ে যাচ্ছে। ফলে অনেক টাকা বাঁচছে।’
হারভেস্টার মেশিন মালিক তামজিদ খান জানান, ‘এলাকায় আমন ধান কাটা শুরু হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটছে। সরকারি প্রণোদনায় প্রদত্ত কম্বাইন হারভেস্টার ব্যবহার করছি। এই মেশিনে ২০-২৫ মিনিটে এক বিঘা জমির ধান কাটা, মাড়াই, ঝাড়াই এবং বস্তায় ভরা যায়। এ মৌসুমে কৃষকদের মধ্যে মেশিনের চাহিদা খুব ভালো।’
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘আমন ধান কাটার কাজ শুরু হয়েছে এবং ধানের ফলন ভালো হয়েছে। কৃষকদের সুবিধার্থে ৫০ শতাংশ সরকারি প্রণোদনায় কম্বাইন হারভেস্টার দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ কৃষক মেশিনের মাধ্যমে ধান কাটছেন এবং এতে সময় ও খরচ দুটোই সাশ্রয় হচ্ছে। কৃষিতে আধুনিক যন্ত্রের ব্যবহার দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।’


