এক সময় বছরে মাত্র এক ফসল ধান হতো জকিগঞ্জের জমিতে। এখন সেই জমিতেই ঝুলছে সবুজ মাল্টা। উপজেলার অনাবাদি ৫০৮ হেক্টর জমির মধ্যে ২৬৫ বিঘা জমি এখন সবুজ মাল্টার বাগানে রূপ নিয়েছে। অনাবাদি জমি আর ধানের জায়গা দখল করছে মাল্টা আর কৃষকের মুখে ফুটছে হাসি।
উপজেলার প্রায় শতাধিক কৃষক এখন মাল্টা চাষে যুক্ত হয়েছেন। বছরে উৎপাদিত হচ্ছে ৫৪০ মেট্রিক টনেরও বেশি মাল্টা। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে জকিগঞ্জের মাল্টা পৌঁছে যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
মজলী গ্রামের কৃষক মইন উদ্দিনের বাগান এখন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তাদের কাছে এক অনুপ্রেরণার নাম। চাকরি ছেড়ে তিনি পা বাড়ান কৃষিক্ষেত্রে। শুরু করেন সাড়ে সাত বিঘা জমিতে মাল্টা চাষ। বর্তমানে বছরে আয় করছেন ১০ থেকে ১২ লাখ টাকা।
তিনি ‘রূপালী বাংলাদেশ’কে জানান, ‘আমার এই বাগানে সাড়ে সাত বিঘা জমি আছে। তিন বছর ধরে বিক্রি করছি। আমার দাদা মরহুম শুয়াইব আলী পোস্ট মাস্টার আমাকে নতুন কিছু করতে উৎসাহ দিতেন। মাল্টার সম্ভাবনা দেখে ২০১৯ সালে শুরু করি। এবার ১০-১২ লাখ টাকা লাভের সম্ভাবনা দেখছি।’
মইন উদ্দিনের বাগানে এখন কয়েকজন শ্রমিকেরও স্থায়ী কর্মসংস্থান হয়েছে।
জকিগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘বর্তমানে উপজেলায় ৩৫ হেক্টর জমিতে মাল্টা চাষ হচ্ছে। এখানকার কৃষকরা ভালো দাম পাচ্ছেন। এবার ৫৪০ মেট্রিক টন সম্ভাব্য উৎপাদনের বাজারমূল্য প্রায় সাড়ে ৫ কোটি টাকা। নতুন কৃষকেরা মাল্টা চাষে উৎসাহিত হচ্ছেন। জেলা ও উপজেলা পর্যায় থেকে আমরা নিয়মিত পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে রেখেছি।’
স্থানীয়দের মতে, মাল্টা চাষ জকিগঞ্জের কৃষিতে নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে। তবে শুধু উৎপাদন নয়, সঠিক বিপণন ব্যবস্থা ও সরকারি সহায়তা নিশ্চিত করতে পারলে এই সাফল্য আরও বহুগুণে বাড়বে।
এক সময় সুপারি উৎপাদনের জন্য পরিচিত জকিগঞ্জ এখন কৃষি পরিবর্তনের নতুন গল্প লিখছে। অনাবাদি জমিতে গড়ে ওঠা সবুজ মাল্টার বাগান হয়ে উঠেছে গ্রামীণ উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা সফলতার প্রতীক।


