ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া উপজেলায় চলতি মৌসুমে রোপা আমন ধান কাটা প্রায় শেষ পর্যায়ে এসেছে। বেশিরভাগ কৃষক ধান রোদে শুকানোর পাশাপাশি খড় শুকিয়ে গাদা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। স্থানীয় কৃষকরা এ মৌসুমে ঝড়-বৃষ্টি ও নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে আমন ধান আবাদ করেও শেষ পর্যন্ত জমিতে বাম্পার ফলন পেয়েছেন। তবে এ বছর খড়ের কদর বেশ বেড়েছে। কাঁচা অবস্থায় খড় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ধান ও খড় বিক্রিতে ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, কয়েক বছর আগেও খড়ের তেমন কদর ছিল না। সময়ের পরিবর্তনে এখন এসব খড় মূল্যবান হয়ে উঠেছে। আগে যেখানে এক বিঘা জমির শুকনো খড় দেড় হাজার থেকে ২ হাজার টাকায় বিক্রি হতো এখন তা ৫ থেকে ৬ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
গো-খাদ্যের বাড়তি দামের কারণে খামারিরা খড়ের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়েছেন। তাই কৃষকেরা জমি কাটার পরপরই খড় বিক্রি করতে পারছেন। এতে বাড়তি আয়ও হচ্ছে তাদের।
সরেজমিনে পৌর শহরসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ধান কাটা প্রায় শেষ। কৃষকেরা ধান কাটা, মাড়াই ও খড় শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গৃহস্থদের পাশাপাশি এ উপজেলার অনেক মানুষ বাণিজ্যিকভাবে খামার করে গরু লালন-পালন করছেন। গো-খাদ্যের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় খামারের চাহিদা মেটাতে খড়ই এখন প্রধান ভরসা। তা ছাড়া শুষ্ক মৌসুমে মাঠে ঘাস কম থাকায় খামারিরা খাদ্যের সংকটে পড়েন। তাই ঘাসের বিকল্প হিসেবে তারা খড় কিনে মজুত রাখছেন। ফলে ধান কাটা শেষ না হতেই খড় বিক্রির ধুম পড়েছে।
কৃষক মো. আলী মিয়া বলেন, ‘এই মৌসুমে ৫ বিঘা জমিতে উচ্চ ফলনশীল ধান আবাদ করেছি। ধান কাটা শেষ হয়েছে, বেশিরভাগ ধান শুকানো। প্রতি বিঘায় ২০ মনের বেশি ধান পেয়েছি। ধানের বাজারদর এখন ভালো। খড়ের কদরও এবার বেশি। ধান কাটার আগেই প্রতি বিঘা জমির খড় ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করছি। শুকিয়ে বিক্রি করলে ৬ হাজার টাকার বেশি পাওয়া যেত।’
কৃষক মো. ফরিদ মিয়া বলেন, ‘৬ বিঘার মধ্যে ৩ বিঘা জমির খড় কাঁচা অবস্থায় ৭ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি। বাকি খড় শুকিয়ে ঘরে তোলা হয়েছে, পরে বিক্রি করব। আগে খড়ের এত দাম ছিল না। এখন চাহিদা বেড়েছে।’
কৃষক মুর্শেদ মিয়া বলেন, ‘প্রতি বছর ধান চাষ করি। কিন্তু শ্রমিক সংকট থাকায় খড় শুকিয়ে নিতে পারি না। এখন ধান ও খড় দুটোরই দাম ভালো। আগে খড়ের দাম তেমন ছিল না। প্রতি বিঘায় ১২ থেকে ১৪ মণ শুকনো খড় পাওয়া যায়। চাহিদা থাকায় ধান কাটার আগেই খড় কিনতে অনেকেই আগ্রহ দেখাচ্ছেন। কাঁচা অবস্থায় বিঘায় ২ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি করেছি।’
খামারি মো. আবুল হোসেন বলেন, ‘আমার খামারে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৫টি গরু আছে। আগে প্রাকৃতিক খাবারের পাশাপাশি বাজারের খাদ্য দিতাম। এখন গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় খড়ের ওপর নির্ভর করছি। তাই ধান কাটার সময় ৭ বিঘা জমির খড় কাঁচা অবস্থায় কিনেছি। সেগুলো শুকিয়ে ঘরে এনেছি। এখন খাদ্য নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই। আগে ১ বিঘা জমির খড় কাঁচা অবস্থায় ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় পাওয়া যেত। এখন লাগে ২ হাজার ৫০০ টাকা।’
খামারি সোহাগ মিয়া বলেন, ‘আগে আশপাশে অনেক খোলা জায়গায় ঘাস পাওয়া যেত। এখন জমি আবাদ বাড়ায় খোলা জায়গা কমে গেছে। প্রাকৃতিক ঘাসও মিলছে না। তা ছাড়া গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খড়েই এখন ভরসা।’
আখাউড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মাসুদ রানা বলেন, ‘এ উপজেলায় আমন ধান কাটার কাজ প্রায় শেষ। এবার বাম্পার ফলন হয়েছে। গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় কৃষকেরা খড়ের প্রতি আগের চেয়ে যত্নশীল। অনেকে খড় বিক্রি করে ধান চাষের খরচ তুলতে পারছেন। ফলে তারা ধান চাষে আরও আগ্রহী হয়ে উঠছেন।’



সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন