ঢাকা বুধবার, ১৬ জুলাই, ২০২৫

কনে না দেখানোয় ঘটককে হত্যা করলেন হবু বর

মতলব (চাঁদপুর) প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০২৫, ১২:১৪ পিএম
ছবি- সংগৃহীত

কনেকে না দেখানোয় চাঁদপুরের মতলব উত্তরে আলোচিত হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় জড়িত মূল অভিযুক্ত মো. কামাল মীরাকে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

রোববার (১৩ জুলাই) দুপুরে চাঁদপুর জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান চাঁদপুরের পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ আব্দুর রকিব।

পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত ১১ জুলাই চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার সাদুল্লাহপুর ইউনিয়নের গোপালকান্দি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি পুকুরে ভাসমান অবস্থায় হাবিব উল্লাহ নামে এক ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহতের শরীরে বিশেষ করে মুখমণ্ডল, চোখের নিচে ও গলায় আঘাতের চিহ্ন ছিল। লাশটি প্রথমে পরিচয়হীন মনে হলেও পরে স্থানীয়দের মাধ্যমে পরিচয় নিশ্চিত হয়।

নিহত হাবিব উল্লাহ (৫৫) নারায়ণগঞ্জ জেলার রূপগঞ্জ থানার গন্ধব্যপুর গ্রামের বাসিন্দা এবং মতলব উত্তর উপজেলার পুটিয়ারপাড় গ্রামের বাসিন্দা মনোয়ারা বেগমের স্বামী। তিনি পেশায় একজন রিকশাচালক ছিলেন।

ঘটনার পর নিহতের স্ত্রী থানায় অজ্ঞাতনামা আসামির বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এরপর পুলিশ তথ্যপ্রযুক্তি এবং গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে নিশ্চিত হয়, এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত রয়েছেন মো. কামাল মীরা (৫৫), যিনি বরিশালের চরমোনাই এলাকার বাসিন্দা এবং নারায়ণগঞ্জের ডেমরার কোনাপাড়া এলাকায় একটি প্রেসে নৈশপ্রহরীর কাজ করতেন।

পুলিশ অভিযান চালিয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ এলাকা থেকে কামাল মীরাকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে কামাল মীরা জানান, কয়েক মাস আগে নারায়ণগঞ্জের মুরাদপুর এলাকায় একটি চায়ের দোকানে হাবিব উল্লাহর সঙ্গে তার পরিচয় হয়। কামালের প্রথম স্ত্রী তাকে ছেড়ে চলে যাওয়ায় তিনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে আগ্রহী ছিলেন। এই সুযোগে হাবিব তাকে মেয়ে বিয়ে করিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দেখায় এবং দুই দফায় ১০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়।

গত ১০ জুলাই হাবিব কামালকে মেয়ে দেখানোর কথা বলে চাঁদপুরের মতলব উত্তর এলাকায় ডেকে আনেন। বিকেলের দিকে তারা শাহ্ সোলেমান লেংটার মাজারে ঘোরাফেরা করেন এবং পরে রাত ১১টার দিকে গোপালকান্দি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশে একটি নির্জন পুকুরপাড়ে যান। সেখানে দুজনের মধ্যে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতি হয়। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে হাবিব উল্লাহ কামালের গলায় গামছা পেঁচিয়ে শ্বাসরোধের চেষ্টা করেন। আত্মরক্ষায় কামাল হাবিবকে তলপেটে ও অণ্ডকোষে আঘাত করে। এতে হাবিব দুর্বল হয়ে পড়লে কামাল তাকে পুকুরে চুবিয়ে ধরেন এবং নিশ্চিত মৃত্যুর পর পালিয়ে যান। পরে তিনি নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জ থানাধীন কদমতলী এলাকায় গিয়ে আত্মগোপনে থাকেন।

এ ঘটনায় পুলিশ সুপার মুহাম্মাদ আব্দুর রকিব বলেন, ‘এটি ছিল সম্পূর্ণ ক্লু-লেস একটি হত্যা মামলা। দ্রুত সময়ের মধ্যে প্রযুক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য ব্যবহার করে আমরা হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছি এবং মূল আসামিকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। এ ধরনের অপরাধ দমনেই চাঁদপুর জেলা পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট।’