ঢাকা শনিবার, ০৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৫

চাঁদপুরে নিখোঁজ শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার, চাচি গ্রেপ্তার

চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
অভিযুক্ত সাথী আক্তার। ছবি- রূপালী বাংলাদেশ

চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে নিখোঁজের ৩৬ ঘণ্টা পর তিন বছরের শিশুর বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ। শিশুটির হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত চাচি সাথী আক্তারকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৪ সেপ্টেম্বর) রাত ১২টার দিকে বাড়ির পাশের পুকুর থেকে শিশুটির বস্তাবন্দি মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

শিশুর বাবা রুবেল পাটওয়ারী সাথী আক্তারকে (২০) আসামি করে শুক্রবার (৫ সেপ্টেম্বর) শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

ঘটনার বিবরণে জানা যায়, উপজেলার চিতোষী পূর্ব ইউনিয়নের পানচাইল গ্রামের পাটওয়ারী বাড়ির ট্রাকচালক রুবেল পাটওয়ারীর শিশু কন্যা তাসনুহা তাবাসসুম ৩ সেপ্টেম্বর বুধবার দুপুরে নিখোঁজ হয়।

পরিবারের সদস্যরা তাকে না পেয়ে খোঁজাখুঁজি শুরু করেন। বাড়ির কোথাও না পেয়ে একপর্যায়ে পুকুরে ডুবুরি দল নামানো হয়। তাতেও না পেয়ে পরবর্তীতে পুকুরে জাল ফেলা হয়, কিন্তু শিশুটিকে পাওয়া যায়নি।

বৃহস্পতিবার রাত ১২টার দিকে বাড়ির লোকজন পুকুরে বস্তাবন্দি কিছু ভাসতে দেখে সেটি ওপরে তুলে আনেন। বস্তা খুলতেই শিশুর মরদেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেন।

খবর পেয়ে শাহরাস্তি থানা পুলিশ শিশুর মরদেহ উদ্ধার করে। পরে পুলিশ ও এলাকাবাসী তল্লাশি চালিয়ে শিশুটির চাচার ঘরের বিভিন্ন স্থানে রক্তের দাগ দেখতে পান।

এ সময় পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদের জন্য চাচা রিপন পাটওয়ারী ও চাচি সাথী আক্তারকে আটক করে।

মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, শিশু তাসনুহা বুধবার সকাল ১০টার দিকে পাশের চাচা রিপনের ঘরে চাচাতো ভাইদের সঙ্গে খেলতে যায়। একপর্যায়ে চাচি সাথী ভাতের মাড় গালতে গিয়ে গরম মাড় শিশুটির শরীরে পড়ে যায়। এতে শরীর ঝলসে গেলে তাসনুহা চিৎকার শুরু করে। তখন চাচি সাথী আক্তার চিৎকার যাতে বাইরে শোনা না যায়, সে জন্য তার মুখ ও গলা চেপে ধরে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। এরপর মরদেহ কম্বলে প্যাঁচিয়ে ঘরের আলমারিতে রাখে।

পরদিন বিকেলে আলমারি থেকে মরদেহ বের করে ঘরের সিলিংয়ের উপরে বস্তায় ভরে একটি বড় পাতিলে রাখে। দুর্গন্ধ ছড়াতে শুরু করলে সাথীর স্বামী রিপন সিলিংয়ে ওঠে মরদেহ দেখতে পান। তিনি এ বিষয়ে তার বড় ভাবি রোজিকে জানালে তিনি অজ্ঞান হয়ে পড়েন। এরপর সাথী আক্তার মরদেহটি সুকৌশলে সিলিং থেকে নামিয়ে ঘরের পেছনের পুকুরে বস্তাবন্দি অবস্থায় ফেলে দেন। পরে সেখান থেকেই শিশুটির মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

স্থানীয় ইউপি সদস্য মাওলানা আমিনুল হক জানান, ‘আমার আগেই সন্দেহ হয়েছিল। পুলিশ ঘটনাস্থলে যাওয়ার পর আমি ঘর তল্লাশি করতে বলি। তখন পুলিশ শিশুটির চাচার ঘর থেকে আলামত উদ্ধার করে। পরে সাথী আক্তার ও তার স্বামী রিপনকে আটক করলে সাথী পুলিশের কাছে স্বীকারোক্তি দেয় যে, সে তাসনুহাকে হত্যা করেছে।’

শিশুর বাবা রুবেল পাটওয়ারী জানান, ‘আমাদের একমাত্র আদরের মেয়ে তাসনুহা তাবাসসুমকে হারিয়ে আমরা দিশেহারা। আমি এই হত্যাকাণ্ডের বিচার চাই।’

শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল বাসার বলেন, ‘শিশুটি বুধবার থেকে নিখোঁজ ছিল। পরিবারের সদস্যরা ডুবুরি দিয়ে পুকুরে খোঁজ করেও তাকে পাননি।’

ওসি আরও জানান, ‘তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। আসামি সাথী আক্তারকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।’