চট্টগ্রামের পটিয়ায় বেসরকারি নিউরন হাসপাতালে জন্ম নেওয়া পুত্রসন্তান পাল্টে কন্যাসন্তান দেওয়ার অভিযোগে পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা হয়েছে।
চন্দনাইশ উপজেলার দক্ষিণ কাঞ্চননগর ডা. চিত্তরঞ্জন শীলের বাড়ির বাসিন্দা দিলীপ শীলের পুত্র সুমন শীল এ মামলা দায়ের করেন। মামলায় হাসপাতালের মাসি কাকলি (৪০), নার্স থিম চাকমা (২৫), ডা. নওসীন ও ওয়ার্ড বয় চন্দনকে (২৫) আসামি করা হয়েছে।
বাদীপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শাহীনা আক্তার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক তাররাহুম আহমেদ মামলা কেন নেওয়া হয়নি, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে জানাতে ওসিকে জবাব দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বাদীর অভিযোগ, পটিয়া উপজেলা পরিষদ সম্মুখস্থ নিউরন হসপিটালে গত ৩ সেপ্টেম্বর রাত ১১টায় তার সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে ভর্তি করা হয় এবং ৪ সেপ্টেম্বর ভোররাত ৬টায় তার একটি পুত্রসন্তান জন্ম হয়। এর আগে, ভোররাত সাড়ে ৫টার দিকে বাদীর স্ত্রীকে কেবিন থেকে ডেলিভারির জন্য লেবার রুমে নেওয়ার সময় বাদী ও তার স্ত্রী তাদের পক্ষ থেকে দাদি বা যেকোনো একজন্যকে নারী অভিভাবক হিসেবে সাথে নেওয়ার অনুরোধ করেন। কিন্তু আসামিরা তাতে কর্ণপাত করেননি এবং সেবিকা থিম চাকমা তাদের সাথে রুঢ় আচরণ করেন। কিন্তু লেবার রুমে মুখে মাস্ক পরা অবস্থায় অজ্ঞাতনামা এক পুরুষ আগে থেকে অবস্থান নিতে দেখেন। ভোর ৬টার দিকে নরমাল ডেলিভারিতে একটি ছেলে সন্তান জন্ম হয়। সে সময় বাদীর স্ত্রী সজাগ ছিলেন এবং বেশ স্বাস্থ্যবান ও ফর্সা ছেলে সন্তান জন্ম নেওয়ার বিষয়টি দেখতে পান। বাদীর স্ত্রীর সন্তানের জন্মের পর নবজাতককে তার বুকে দেওয়ার জন্য উল্লেখিত আসামিদের অনুরোধ করলেও আসামিরা তাকে চুপ থাকতে বলেন। মাকে নবজাতকের মুখ না দেখিয়ে মাক্স পরা অজ্ঞাতনামা পুরুষের হাতে নবজাতককে তুলে দেন।
শিশুর জন্মের এক ঘণ্টা পর সকাল ৭টার পর বাদীকে ওয়েটিং রুম থেকে বাদীকে ডেকে একটি কন্যাসন্তান জন্ম নেওয়ার কথা জানান। এ সময় বাদী ওই সন্তানের মুখ দেখার পর তার স্ত্রীর সাথে দেখা করলে স্ত্রী পুত্রসন্তান জন্ম নেওয়ার কথা জানিয়ে বাদীকে জানান, ওই সন্তান ফর্সা ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিল। বিষয়টি জানার পর বাদী হাসপাতালে ওই সময় কর্মরতদের চ্যালেঞ্জ করেন এবং তাদের হাতে দেওয়া কন্যাশিশুর ওজন পরিমাপ করে দেখেন ওজন ২ কেজি পাঁচশ গ্রাম। কিন্তু বাদীর স্ত্রীর মাতৃত্বকালীন সময়ে সর্বশেষ সন্তান জন্মদানের ১৬ ঘণ্টা আগে করানো আল্ট্রাসনোপ্রাফির প্রতিবেদনে জানানো হয় ওই শিশুর ওজন ৩ কেজি একশ গ্রাম।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা না পেয়ে বাদী পটিয়া থানায় গেলে কর্তব্যরত ডিউটি অফিসার তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। পরে রোববার পটিয়া জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় তিনি আবেদন করেন, তার স্ত্রীর সন্তান প্রসবকালের আগে ও পরে হাসপাতালের সিসিটিভির রেকর্ড, ঘটনার কয়েকদিন আগ থেকে জন্ম নেওয়া সব নবজাতকের নথি জব্দ এবং বাদীর হাতে দেওয়া কন্যাসন্তানের ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশ প্রার্থনা করেন।
এ বিষয়ে পটিয়াস্থ নিউরন হসপিটালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শাহাদাৎ জানান, ওই শিশুর বাবা যে আশঙ্কা করছেন, সে ধরনের কিছুই ঘটেনি। সেটা তাকে অনেক বোঝানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তিনি কিছুই বুঝতে চাচ্ছেন না। তিনি শিশু পাল্টে দেওয়ার যে অভিযোগ করছেন সেটা সম্পূর্ণ মিথ্যা।
পটিয়া থানার ওসির বক্তব্য জানতে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ফোন না ধরায় তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।