বর্তমান সমাজে অনেকেই প্রতিবন্ধকতাকে জীবনের বোঝা মনে করে ভিক্ষাবৃত্তি বা নির্ভরশীলতার পথ বেছে নেন। কিন্তু চুয়াডাঙ্গার মঙ্গল মিয়া সেসব মানুষের জন্য অনন্য উদাহরণ। দুই চোখ অন্ধ হওয়া সত্ত্বেও তিনি নিজ পরিশ্রমে জীবিকা নির্বাহ করছেন এবং প্রতিটি মুহূর্তে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন স্বাবলম্বী হয়ে।
চুয়াডাঙ্গা জেলার আলমডাঙ্গা উপজেলার আইলহাঁস ইউনিয়নের পুড়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা মঙ্গল মিয়া প্রায় ৩৫ বছর ধরে দৃষ্টিহীন। তবু তার কথা বলা, চলাফেরা ও কাজের ধরন দেখে বোঝার উপায় নেই যে, তিনি চোখে দেখতে পান না।
প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে মঙ্গল মিয়া হাতে একটি লাঠি নিয়ে বের হন। কোনো সহযোগিতা ছাড়াই তিনি খুলেন নিজের ছোট্ট দোকান। সেখানে তিনি বাইসাইকেল, পানির পাম্প, স্যালো মেশিন এমনকি পাওয়ার টিলার পর্যন্ত মেরামতের কাজ করেন।
অন্ধত্ব সত্ত্বেও তার দক্ষতা ও আত্মবিশ্বাস দেখে এলাকাবাসী বিস্মিত হন। আশপাশের কয়েকটি গ্রামের মানুষ তাদের স্যালো মেশিন, টিউবওয়েল বা পাওয়ার টিলার মেরামতের জন্য একমাত্র মঙ্গল মিয়ার ওপর নির্ভর করেন। শুধু তাই নয়, তিনি হাতের স্পর্শেই টাকার পরিমাণ বুঝতে পারেন এবং একবার শোনা ফোন নম্বর মুখস্থ রাখতে পারেন নিখুঁতভাবে।
স্থানীয়রা জানান, মঙ্গল মিয়া একজন পরিশ্রমী ও দক্ষ মেকানিক। অন্ধত্ব কখনোই তাকে থামাতে পারেনি। বহু দূর থেকেও মানুষ তার কাছে মেশিন মেরামত করাতে আসেন।
নিজের জীবনের গল্প বলতে গিয়ে মঙ্গল মিয়া বলেন, ‘প্রায় ৩৫ বছর হলো আমি চোখে দেখি না। ছোটবেলায় সাইকেল সারানোর কাজ শিখেছিলাম। পরে স্যালো মেশিন ও পাওয়ার টিলার মেরামত শিখি। এমনকি একসময় বিদ্যুতের কাজও করেছি। একা একাই সব করি। এখন পর্যন্ত আনুমানিক এক লাখেরও বেশি টিউবওয়েল স্থাপন করেছি।’
চোখে না দেখেও জীবন ও পরিশ্রমের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন মঙ্গল মিয়া। তার অদম্য সাহস ও পরিশ্রম প্রমাণ করে- ইচ্ছা থাকলে অন্ধত্বও কোনো বাধা নয়, বরং প্রেরণার উৎস হতে পারে।


সর্বশেষ খবর পেতে রুপালী বাংলাদেশের গুগল নিউজ চ্যানেল ফলো করুন
আপনার ফেসবুক প্রোফাইল থেকে মতামত লিখুন