কক্সবাজারের চকরিয়ার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কে সরকারের ১৫৪ কোটি টাকার অবকাঠামোগত উন্নয়ন কাজে ভয়াবহ টেন্ডার জালিয়াতির অভিযোগ উঠেছে।
এর আগে ২০১৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই উন্নয়ন প্রকল্পে একের পর এক বরাদ্দ ও সময় বাড়িয়ে দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের একচেটিয়া লুটপাটের চিত্র উঠে এসেছে।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৫ মে চট্টগ্রাম বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) আবু নাছের মোহাম্মদ ইয়াছিন নেওয়াজের অধীনে ছয়টি উন্নয়ন কাজের টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
টেন্ডার আহ্বানকারী কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্বে থাকা এই কর্মকর্তা সরকারি গোপন মূল্যের তথ্য কিছু পছন্দের ঠিকাদারদের হাতে আগেভাগেই পৌঁছে দেন। ফলে টেন্ডারে অংশ নেওয়া অন্য ঠিকাদারদের তুলনায় নির্দিষ্ট কিছু প্রতিষ্ঠান ‘ঠিক মিলে যাওয়া দরপত্র’ দিয়ে কাজ ভাগিয়ে নেয়।
সরকারি গোপন মূল্য ৩৯ লাখ ৬৪ হাজার ২০০ টাকা হলেও মেসার্স মাছুম বিল্ডার্স প্রতিষ্ঠানটি দরপত্র দিয়েছে ঠিক ৩৫ লাখ ৬৭ হাজার ৭৮০ টাকার। যা সরকারি মূল্য থেকে কাটছাঁট করে নির্ধারিত কাজের প্রকৃত মূল্যর সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে।
আশ্চর্যজনকভাবে, বাকি ৯টি প্রতিষ্ঠান এই পরিমাণের এক/দুই পয়সা কিংবা টাকা বেশি-বেশি দরপত্র দিয়েছে, যা এই দুর্নীতির সুপরিকল্পিততা প্রকাশ করে।
এভাবে ৬টি প্রতিষ্ঠান, যথা- মেসার্স মাছুম বিল্ডার্স, মেসার্স করিম এন্ড ব্রাদার্স, মেসার্স এডি কনস্ট্রাকশন, মেসার্স রহিমা এন্টারপ্রাইজ, ফ্রেন্ডস ইঞ্জিনিয়ারিং, মুজাহিদ ফাউন্ডেশন সরকারি গোপন মূল্যের সঙ্গে মিলে যাওয়া দরপত্র দিয়ে বিশাল অঙ্কের উন্নয়ন কাজ পেয়ে যায়।
সূত্র থেকে জানা গেছে, প্রতিমাসে পশুপাখির খাবারের জন্য বরাদ্দ থাকে ৩৫ লাখ টাকা। কিন্তু অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, এই খাবার বাস্তবে প্রাণীরা পাচ্ছে না। খাবার সংক্রান্ত ব্যয়পত্রে যে টাকার উল্লেখ রয়েছে, বাস্তবে তার অনেকটাই যাচ্ছে মানব পকেটে। পার্কের অভ্যন্তরে পশুপাখিদের শারীরিক অবস্থাও এসব অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য দেয়।
২০১৯ সালে প্রথম বরাদ্দ ছিল ১২৬ কোটি টাকা। এরপর ১ম বর্ধিত বরাদ্দ ১৪৪ কোটি , ২য় বর্ধিত বরাদ্দ ১৫৪ কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত কাগজে কলমে ব্যয় ১০৮ কোটি টাকা।
এই টাকার অনেকটাই উন্নয়নের নামে ভুয়া বিল-ভাউচারে ব্যয় দেখিয়ে আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। কাজের আইটেম অপরিবর্তিত রেখে শুধুমাত্র কাগজে ব্যয়ের অঙ্ক বাড়ানো হয়েছে।
প্রতারিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানগুলো বলছে, এই দুর্নীতি তদন্ত না হলে সরকারি প্রকল্পে ভবিষ্যতেও এ ধরনের পুকুর চুরি অব্যাহত থাকবে।
এ সময় তারা অবিলম্বে টেন্ডার বাতিল করে স্বচ্ছ তদন্তের মাধ্যমে দায়ীদের শাস্তি ও পুনরায় দরপত্র আহ্বানের দাবি জানিয়েছে।
বিষয়টি জানতে চেয়ে যোগাযোগ করা হলে, ডিএফও ইয়াছিন নেওয়াজ একাধিকবার ফোন কল রিসিভ করেননি। পরে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালে সংক্ষিপ্ত উত্তর দেন- ‘টেন্ডার জালিয়াতির কোনো ঘটনা এখানে ঘটেনি। আমি বাঁশখালী বনাঞ্চলে আছি, নেটওয়ার্ক সমস্যা রয়েছে। ধন্যবাদ।’
এ বিষয়ে ডুলাহাজারা সাফারি পার্কের পূর্ববর্তী ডিএফও রফিকুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘একজন প্রধান বন সংরক্ষক, সাবেক বনমন্ত্রী ও তার পুত্র এবং একাধিক ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিলে পার্কের উন্নয়ন কাজে কাগজে কলমে উন্নয়ন দেখিয়ে বাস্তবে রাজস্ব লুটপাট করেছেন।’
গত বছরের ৫ আগস্ট পার্কে হামলার ঘটনায় ১.৫ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতির প্রতিবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়।
স্থানীয় একটি সূত্র জানায়, থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করা হয়েছে। যদিও এটি দুর্নীতির পর্দা ঢাকার চেষ্টা হতে পারে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আপনার মতামত লিখুন :