ঢাকা শুক্রবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৫

ছুটির দিনে জমজমাট কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত

শাহজাহান চৌধুরী শাহীন, কক্সবাজার
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৫, ২০২৫, ০৭:৫৮ পিএম
কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে ভ্রমণ পিপাসুদের ভিড়। ছবি-রূপালী বাংলাদেশ

দূরে আকাশ যেন নুয়ে এসে মিলেছে সমুদ্রের বুকে। বিকেলের ক্লান্ত সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে, তবু লাবণী পয়েন্টে ঢেউয়ের শব্দে যেন প্রাণ ফিরে পেয়েছে ছুটির দিন। সাগরের নীল জলে দোল খাচ্ছে মানুষের আনন্দ, প্রিয়জনের হাত ধরে প্রিয় মুহূর্তগুলোকে ধরে রাখতে ব্যস্ত পর্যটকরা।

ডিসেম্বরের প্রথম শুক্রবার, সাপ্তাহিক ছুটির ছোঁয়া আর শীতের স্বস্তিময় আবহাওয়া মিলিয়ে কক্সবাজার যেন পরিণত হয়েছে ভ্রমণপ্রেমীদের মিলনমেলায়। লাবণী, সুগন্ধা ও কলাতলী পয়েন্টে চোখে পড়েছে ঘন ভিড়। কোথাও ঢেউয়ের ধারে ছবি তুলছে তরুণরা, কোথাও পরিবারের সঙ্গে বালুচরে বসে সমুদ্র দেখছেন বয়োজ্যেষ্ঠেরা।

ঢাকার কেরানীগঞ্জ থেকে আসা ব্যবসায়ী রবিউল হাসান পরিবারসহ এসেছেন বছরের ক্লান্তি ভুলতে। তিনি বললেন, ‘বাচ্চারা সাগর দেখতে চায়। আমরাও চাই পরিবার নিয়ে নির্ভার সময়ে থাকি। তাই বছরের এই সময়টাকে আমরা কক্সবাজারের জন্যই রাখি।’

বরিশালের হোসনে আরা সমুদ্র দেখেই আবেগে ভেসে বললেন, ‘সাগর কার না টানে? আমাদের আবারও নিয়ে এসেছে এই নীল জলরাশি।’

তবে ঢাকার ধানমন্ডির পর্যটক সৌরভ আহমেদ অভিজ্ঞতা শেয়ার করলেন একটু বাস্তবতা মিশিয়েই—‘উৎপাত আগের মতো নেই, এটা ভালো। কিন্তু হোটেল-রেস্তোরাঁয় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হওয়া জরুরি। পর্যটকদের যেন হয়রানির মুখে না পড়তে হয়, এটা নিশ্চিত করা দরকার।’

সৈকতের বিভিন্ন অংশে ঘুরে দেখা যায়, আগের তুলনায় হকার ও ফটোগ্রাফারদের চাপ কমেছে। তবে ভিড় বেশি হলে তারা আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। পর্যটকরা বলছেন, অনেকে নির্দিষ্ট দাম না বলে ছবি তুলে অতিরিক্ত দাবি করেন। এ অভিযোগ এখনো পুরোপুরি দূর হয়নি।

সৈকতের নিরাপত্ত-সংক্রান্ত কিছু জায়গায় শৌচাগার সংকট, বালুচরে আবর্জনা ফেলে যাওয়া এবং অনিয়ন্ত্রিত সেলফি-ভিড়ের কারণে ছোটখাটো দুর্ঘটনার আশঙ্কাও থাকে, যা চোখে পড়ে অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণে।

ট্যুরিস্ট পুলিশের অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ বলেন, ‘পর্যটকদের নিরাপত্তাই আমাদের প্রধান দায়িত্ব। দিন-রাত টহল বাড়ানো হয়েছে। কোথাও অনিয়ম বা হয়রানির খবর পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো পর্যটকের যেন খারাপ অভিজ্ঞতা নিয়ে ফিরতে না হয় এটা নিশ্চিত করতেই কাজ করছি।’

সাগরপাড়ের পয়েন্টগুলোতে বাড়তি টহল, উদ্ধার সরঞ্জাম প্রস্তুত রাখা এবং জরুরি সময়ে দ্রুত সাড়া প্রদানের জন্য অপারেশনাল টিম প্রস্তুত আছে বলেও জানান তিনি।

পর্যটকের ঢল নামায় হোটেল-মোটেল জোনেও ব্যস্ততা দেখা গেছে। সাগরতীরবর্তী একটি হোটেলের ম্যানেজার মাইনুল ইসলাম জানান, রুম বুকিং এখন প্রায় ৪০ শতাংশ। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি থেকে বুকিং আরও বাড়বে। বেশিরভাগ রুম অনলাইনে বুক হয়, তাই অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার সুযোগ নেই।

তবে সরেজমিনে দেখা যায়, কিছু রেস্তোরাঁ ও ছোট হোটেলে মৌসুম দেখে দাম বাড়ানোর প্রবণতা এখনো আছে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কেন্দ্রীয় মনিটরিং জোরদার না হলে ‘মৌসুমি দামে অযৌক্তিক বৃদ্ধি’ ঠেকানো কঠিন।

পর্যটন-বিভাগ ও স্থানীয় বিভিন্ন সূত্র বলছে, শুক্রবার একদিনেই কক্সবাজারে আসছেন আনুমানিক ৪০ হাজার পর্যটক। এর মধ্যেই সৈকতজুড়ে ছিল উৎসবের মতো পরিবেশ—সন্ধ্যা নামতেই বালুচর আলোকসজ্জায় ঝলমল করে ওঠে।

মেঘ-সূর্য-সাগরের রঙে রঙিন কক্সবাজার আজও ভ্রমণপিপাসুদের টেনে রাখছে তার চিরচেনা মায়ায়—তবে এই আনন্দকে নিরাপদ ও নির্ভার রাখতে প্রয়োজন আরও পরিকল্পনা, কঠোর নজরদারি এবং সুশৃঙ্খল পর্যটন ব্যবস্থাপনা।