ঢাকা বুধবার, ১৮ জুন, ২০২৫

চাঁদাবাজি করতে গিয়ে জনতার হাতে আটক কথিত যুবদল নেতা

রূপালী ডেস্ক
প্রকাশিত: জুন ১৮, ২০২৫, ১২:৫৯ পিএম
ওয়ার্ড যুবদলের কথিত সভাপতি শাহেদ। ছবি- সংগৃহীত

ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলায় আবারও আলোচনায় কথিত যুবদল নেতা শাহেদ। পারিবারিক বিরোধ মীমাংসার নামে স্থানীয় গোপালপুর বাজারের এক ব্যবসায়ী পরিবারের কাছে চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

বাজারজুড়ে আতঙ্কের নাম হয়ে উঠেছেন জুয়েল মোল্লার ছেলে শাহেদ। যিনি নিজেকে গোপালপুর ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সভাপতি বলে পরিচয় দেন। তবে উপজেলা যুবদল সভাপতি জানিয়েছেন, ইউনিয়ন পর্যায়ে কোনো কমিটি নেই।

ঘটনার সূত্রপাত রোববার (১৫ জুন) রাত ১০টার দিকে। ফয়সাল নামে এক মুরগি ব্যবসায়ীর পারিবারিক বিরোধকে কেন্দ্র করে শাহেদ ও তার প্রায় ১০ জন সহযোগী ফয়সালের দোকানে গিয়ে তাকে বাইরে আসতে বলেন। ফয়সাল দোকানেই অবস্থান করলে হুমকি দিয়ে বলেন, ‘মীমাংসা না করলে খবর আছে।’ পরদিন সোমবার (১৬ জুন) সকালে ফের দোকানে গিয়ে ফয়সালকে না পেয়ে তার বাবা মুল্লুক চান ওরফে মুন্নুর কাছে শাহেদ বলেন, ‘চাচা, কিছু টাকা দেন, সব ঠিক হয়ে যাবে, না হলে ঝামেলা হবে।’

বিকেলে আবার গিয়ে টাকা না পেয়ে মুল্লুক চানকে ধাক্কা মেরে ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা নিয়ে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। চিৎকার শুনে বাজারের লোকজন ছুটে এসে শাহেদকে আটক করে। তবে তার সহযোগীরা পালিয়ে যায়।

পরে ফয়সাল ৯৯৯-এ ফোন দিলে পুলিশ আসার আগেই ঘটনাস্থলে পৌঁছান আলফাডাঙ্গা পৌর যুবদল সভাপতি মিজান ও তার লোকজন। পরে পুলিশের উপস্থিতিতে মিজানের ‘ম্যানেজিং’-এর মাধ্যমে শাহেদকে ছাড়িয়ে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ প্রত্যক্ষদর্শীদের।

এ বিষয়ে ফয়সাল বলেন, ‘আমার পারিবারিক সমস্যাকে ঘিরে জোর করে টাকা দাবি করেছে। দোকানে না থাকায় বাবাকে হুমকি দিয়ে, ধাক্কা মেরে ক্যাশ বাক্স থেকে টাকা নিয়েছে। থানায় জানিয়েছি, কিন্তু প্রতিকার পাচ্ছি না।’

এর আগে গত ৯ জুন কামারগ্রামের মুদি ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলামের দোকানে গিয়ে সিগারেট না থাকায় পিস্তল ঠেকিয়ে ২০ হাজার টাকা দাবি করে শাহেদ। পরে ড্রয়ার ভেঙে টাকা নিয়ে যায়। রফিকুলও থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

ঈদের সময় বাড়ি বেড়াতে আসা এক গার্মেন্টস কর্মী কাওসার খানকেও রাস্তা আটকে মারধরের অভিযোগ রয়েছে শাহেদের বিরুদ্ধে।

বাজারের ব্যবসায়ীরা জানান, কাপড় ব্যবসায়ী জয়, কাঁচামালের ব্যবসায়ী জাহাঙ্গীর খান এবং টিটিসি মোড়ের কাবুলের দোকানেও একই ধরনের হুমকি ও চাঁদাবাজি চালিয়েছে শাহেদ।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, থানায় অভিযোগ করেও কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেয়নি পুলিশ।

অভিযুক্ত শাহেদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমির ভাইয়ের আত্মীয়র পারিবারিক বিরোধে মীমাংসার প্রস্তাবে দোকানে গিয়ে দাঁড়ালে তারা (ফয়সাল) উত্তেজিত হয়ে আমাকে মারধর করে দোকানের ভেতর নিয়ে চাঁদাবাজির মিথ্যা অভিযোগ দেয়।’

এ বিষয়ে পৌর যুবদল সভাপতি মিজান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘শাহেদ আমার লোক। ওর মা নেই। এ কারণে আমি ওকে দেখেশুনে রাখি। ১০০-২০০ টাকা দিলে চলে। কামারগ্রাম আমার পৌরসভার বাইরে।’ তবে পুলিশি উপস্থিতিতে নিজ হাতে শাহেদকে ছাড়িয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি কোনো স্পষ্ট উত্তর দেননি। শুধু বলেন, ‘এগুলো নিয়ে গেম চলছে।’

আলফাডাঙ্গা থানার ওসি শাহজালাল আলম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আমি ৯৯৯ থেকে ফোন পেয়ে ফোর্স পাঠাই, তারা গেলে স্থানীয়রা মীমাংসা করে দিবে বিধায় থানা পুলিশ চলে আসে। তবে আমি জানতাম না যে এই সেই শাহেদ। আমার অফিসার এসেও বলে নাই ঐ সেই সাহেদ। এখন জানলাম খোঁজ খবর নিয়ে দেখছি।’