মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে গুরুতর দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী রাইসা মনির (৯) জানাজা ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা গ্রামের বাড়িতে সম্পন্ন হয়েছে।
শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকাল সোয়া ৯টায় উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া দক্ষিণপাড়া ঈদগাহ ময়দানে সম্পন্ন হয়েছে। পরে বাজড়া শামসুল উলুম মাদরাসা ও এতিমখানা গোরস্থানে তাকে দাফন করা হয়।
জানাজায় উপস্থিত ছিলেন আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল, সেনাবাহিনীর সদস্য এবং স্থানীয় শত শত মানুষ।
জানা যায়, দুর্ঘটনার দিন থেকেই নিখোঁজ ছিল রাইসা। অনেক খোঁজাখুজির পরও তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। তাকে খুঁজতে (সিএমএইচ) দগ্ধ একটি শিশুর মরদেহ শনাক্ত করা হয়। পরে মুখমণ্ডলের অংশবিশেষ দেখে শিশুটিকে রাইসা বলে দাবি করেন তার বাবা শাহাবুল শেখ (৪৪)।
এরপর মঙ্গলবার বিকেলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। রিপোর্টে রাইসার পরিচয় নিশ্চিত হলে গতকাল বৃহস্পতিবার (২৫ জুলাই) রাত ১১টার দিকে পরিবারের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
আজ শুক্রবার (২৬ জুলাই) সকালে গ্রামে পৌঁছালে চারপাশের বাতাস ভারী হয়ে ওঠে শোক আর কান্নায়। সকাল থেকেই বাড়িতে ভিড় করেন আত্মীয়-স্বজন ও গ্রামবাসী। সবাই কেঁদেছেন ছোট্ট রাইসার অকাল মৃত্যুতে।
পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, রাইসা মনি ফরিদপুরের আলফাডাঙ্গা উপজেলার গোপালপুর ইউনিয়নের বাজড়া গ্রামের বাসিন্দা শাহাবুল শেখ ও মীম আক্তারের মেয়ে। বাবা ঢাকার উত্তরা নয়ানগরে গার্মেন্টস অ্যাকসেসরিজের ব্যবসা করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে রাইসা ছিল মেজো। বড় বোন সিনথিয়া (১৪) একই স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, ছোট ভাই রাফসান (৪) এখনো অনেক ছোট।
শিক্ষিত ও ভালো মানুষ হিসেবে সন্তানদের গড়ে তুলতেই মাইলস্টোন স্কুলে রাইসাকে ভর্তি করেছিলেন তার বাবা-মা। স্বপ্ন ছিল মেয়ে একদিন বড় কিছু হবে। কিন্তু নির্মম এক দুর্ঘটনা কেড়ে নিল সেই স্বপ্ন আর সম্ভাবনাময় এক শিশুকাল।
রাইসার চাচা ইমদাদুল শেখ বলেন, ‘বিমান দুর্ঘটনার পর রাইসাকে আর খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। অবশেষে সিএমএইচে দগ্ধ মরদেহ দেখে তার বাবা শনাক্ত করেন। গতরাতে মরদেহ বাড়িতে এনে আজ সকালে জানাজা ও দাফন সম্পন্ন করা হয়েছে।’
স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য ওবায়দুর রহমান বলেন, ‘রাইসার মৃত্যুতে গোটা গ্রাম শোকে পাথর হয়ে গেছে। এমন কোনো মানুষ নেই যে মেয়েটির জন্য কাঁদেনি।’
আলফাডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল ইকবাল বলেন, ‘এই শোক সহ্য করার মতো না। আল্লাহ পাক যেন তার বাবা-মাকে এই কষ্ট সহ্য করার শক্তি দেন। উপজেলা প্রশাসন সবসময় এই পরিবারের পাশে থাকবে।’
আপনার মতামত লিখুন :